ইন্টারনেট
হোম / সারা বাংলা / বিস্তারিত
ADS

সিন্ডিকেটের কবজায় রাজশাহীর পাটের বাজার, হতাশ কৃষক

2 September 2023, 11:07:49

এবার পাট নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা। বর্তমানে পাটের বাজার সিন্ডিকেটের দখলে বলে অভিযোগ কৃষকদের। আলাপে পাটচাষিরা জানান, বাজারে পাট বিক্রি করে খরচ উঠছে না। তাই অনেক কৃষক জমি থেকে পাট কাটছেন না। যারা পাট কেটে জাগ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারাও এখন আর পাট বিক্রি করছেন না।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে পাট কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৪৪২ হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি মণ পাটের দাম ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কম। যে সব দেশ বাংলাদেশের কাঁচা পাট কেনে, তারা বিশ্বমন্দার কারণে পাট কিনছে না। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেশীয় পাটকলের জন্য যাচাই-বাচাই করে পাট কিনছেন। এবার পাটের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা হতাশার কথা বলছেন। আমরাও তাদের বিষয়গুলো বোঝানোর চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, কৃষকরা বেশ কিছু কারণে পাট চাষ করেন। এর মধ্যে একটি নগদ টাকা। তার পর পাটকাঠি বা খড়ি। পাটখড়ি জ্বালানির কাজে লাগে। ইদানিং পাটখড়ি দিয়ে সবজির মাচা তৈরি হচ্ছে। সেই দিক থেকে পাটখড়ির দাম রয়েছে। এছাড়া জমিতে পাট থাকলে জৈব সার লাগে না। কৃষকদের হতাশার কথা শুনে এখন জমিতে খাদ্যদ্রব্য জাতীয় ফসল ফলাতে বলা হচ্ছে। এ ধরনের ফসলের দাম বেশি থাকে।

দুর্গাপুর উপজেলার সাহিবাড়ী গ্রামের কৃষক আলম হোসেন বলেন, এখন পাট বেচতে হবে তাই বিক্রি করছি। পাট খাওয়ার জিনিস নয়। যে মানুষ ঘরে রেখে দেবেন। পাট চাষ করেছি, এখন পাট কাটতে হবে। জমি থেকে সরাতে হবে। আঁশ ছাড়িয়ে বেচতে হবে। বিক্রি না করলে জমিতে আরেকটা আবাদের টাকা কোথায় পাবে কৃষক। তিনি দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। এর মধ্যে ১ বিঘা জমির পাট বিক্রি করেছেন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে। তার দাবি, ‘আমি কাঙ্ক্ষিত দাম পাইনি।’

দুর্গাপুর উপজেলার বহু জমিতে এখনো পাট রয়েছে। অনেকেই পাট কেটে জাগ দিয়েছেন। কেউ আবার বিক্রিও করছেন হাটেবাজারে। রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোয় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। কৃষক আলম হোসেন জানান, এখন পাটি বিক্রি করে কৃষকের লাভ হচ্ছে না। বিভিন্ন হাটবাজারে পাট বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা দামে। একই মানের পাট গত বছর বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দামে। সেই হিসেবে পাটচাষিরা প্রতি মণে ১ হাজার টাকা কম পাচ্ছেন।

পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, পাট চাষে যে পরিশ্রম হয়, সেই হিসবে দাম পাই না। বৃষ্টি না হলে বীজ বপনের সময় সেচ দিতে হয়। এখন বৃষ্টি না হওয়ায় পাট জাগ দেওয়ায় কৃষকের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। এলাকা ভেদে এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে কৃষকের গড় খরচ ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা। এছাড়া পাট শুকানো, বাট বাঁধাই ও গাড়িতে করে হাটে নিয়ে যাওয়ার খরচ তো আছেই।

তিনি বলেন, এবার পাট বিক্রি করে কৃষকের প্রতি মণে ১ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। কারণ লাভের টাকা পাট জাগ দেওয়ায় শেষ হচ্ছে। এবার পানির অভাবে কোনো কৃষক সহজে পাট জাগ দিতে পারেননি। অনেকে পাট জাগ দিতে পুকুর ভাড়া নিয়েছেন, অনেকে সেচ দিয়েছেন। এরপর গাড়ি ভাড়া করে জমি থেকে পাট ভাড়া জায়গায় জাগ দিয়েছেন। এক মণ পাটে এবার প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। কিন্তু হাটে সেই পাট বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ২ হাজার টাকার কম দামে।

পাটকল মালিকদের কাছে পাট বিক্রি করেন ব্যবসায়ী মেহের আলী। তিনি জানান, গত বারের চেয়ে এবার প্রতিমণ পাটের দাম ১ হাজার টাকা কম। স্থানীয় পাটকল মালিকরা এবার ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা মণ দামে পাট কিনছেন। বেশি দাম চাইলে তারা পাট ভর্তি গাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছেন। ৫০ কেজির এক বোঝা পাট বাঁধা, যানবাহনে পাট কল পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্যবসায়ীর খরচ হয় ১২০ টাকা।

তিনি জানান, এবার পাটের দাম কম হওয়ায় মালিকরা ভালো মানের পাট অল্প দামে পাচ্ছেন। কয়েক দিন পর পাটকল মালিকরা নিম্নমানের পাট কিনবেন না। কারণ এবার বিদেশে পাট বিক্রি করতে পারবেন না। পাট রপ্তানি হলে কৃষকরা গত বছরের মতো পাটের ভালো দাম পেতেন।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: