ইন্টারনেট
হোম / ধর্ম / বিস্তারিত
ADS

ঈমান এবং দ্বীন ইসলামের মূল ভিত্তি কালিমায়ে তাইয়েবা

29 October 2022, 12:11:11

মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহ তাঁর সত্তায়, গুণে, মর্যাদায়, কর্মে ও ক্ষমতায় এক ও অতুলনীয়। তিনি অনাদি, অনন্ত, চিরস্থায়ী ও চিরঞ্জীব। তিনি মহাজ্ঞানী। সব কিছু দেখেন ও শুনেন। তাঁর কাছে কোন কিছু গোপন নেই। কাউকে তিনি জন্ম দেননি, তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। তিনিই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, আইনদাতা, বিধানদাতা। তিনিই আমাদের মালিক ও প্রভু। বিশ্বজগৎ পরিচালনায় তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তাঁর কোন সমকক্ষ ও শরীক নেই। তিনি একাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি তাঁর ইচ্ছেমত কাউকে সৃষ্টি করেন আবার কাউকে মৃত্যু দেন। কাউকে ধনী বানান আবার কাউকে দরিদ্র করেন। নিখুঁতভাবে তিনি একাই বিশ্বজগৎ পরিচালনা করেন, কারো সাহায্যের প্রয়োজন বোধ করেন না। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র তাঁরই নির্দেশে নিজ নিজ কক্ষপথে পরিচালিত হচ্ছে। আল্লাহ সকল ক্ষমতার মালিক, মানুষ তাঁর দাস, প্রত্যেককে একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে জীবনের চলার পথে সঠিক পথ নির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। তাঁর প্রেরিত নবী-রাসুলদের নিকট হেদায়েতের যে বাণী পাঠিয়েছেন, তাকে বলা হয় ওহী। যুগে যুগে প্রেরীত নবী-রাসুলদের মধ্য থেকে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হলেন বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। তাঁর উপর অবতারিত কিতাব কুরআনুল কারীম গোটা মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। আর রাসুলে কারীম (সা:)-এর যবান নি:সৃত বাণীকে বলা হয় সুন্নাহ বা হাদীস। ওহী বলতে কুরআন ও সুন্নাহ দুটোকেই বুঝানো হয়ে থাকে। কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানব জাতির জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ, মুক্তি ও সফলতা। তাই কুরআন-সূন্নাহর জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজ করে দেওয়া হয়েছে। কারণ একমাত্র ওহীভিত্তিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই ইসলামী শরীয়ার হালাল-হারাম, করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় জানা সম্ভব হতে পারে। কোন পথে চললে আমাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা, আর কোন পথে রয়েছে ব্যর্থতা এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত রয়েছে শাস্তি ও লাঞ্চনা, তা সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে । অতএব দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি ও মুক্তি পেতে হলে কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণের বিকল্প কোন পথ নেই।

আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করা, আল্লাহর মনোনীত জীবন বিধানকে গ্রহণ করা, সেই অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে আল্লাহ ও রাসুলের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁদের আনুগত্য এবং তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করার নামই ইসলাম।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন (আনুগত্যের বিধান বা জীবন ব্যবস্থা)।’ (সুরা আল ইমরান ০৩: ১৯)

মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন কেমন হবে ইসলাম তার নীতিমালা বর্ণনা করেছে। দুনিয়া-আখেরাতে মানুষের সুখ, শান্তি, সফলতা আল্লাহতায়ালা দ্বীনের মধ্যে রেখেছেন। দ্বীনকে আল্লাহতায়ালা দামি করেছেন। ইসলামে আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। দ্বীন মানুষের জন্য মহান আল্লাহর মনোনীত একমাত্র জীবনবিধান।

যে ব্যক্তি আল্লাহর মনোনীত এ জীবনব্যবস্থাকে গ্রহণ করে সেই হল একজন মুসলিম। আল্লাহর মনোনীত ইসলামের এ নীতিমালা ও মূল বিষয়সমূহকে অন্তরে বিশ্বাস করে মুখে স্বীকার করা এবং সে অনুযায়ী কর্মে পরিণত করার নাম ঈমান। যার মধ্যে এ ঈমান আছে সেই হল মু’মিন।

মুমিন হওয়ার প্রথম শর্ত হলো কালিমা পাঠ করা, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’।

ঈমান আনার অনিবার্য অর্থ, বান্দা নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করবে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর পক্ষ থেকে হজরত জিবরাইল (আ.) ছদ্মবেশে এসে বিশ্ব নবী রাসুলুল্লাহ (সা.)কে জিজ্ঞেস করেন, ঈমান কাকে বলে? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ঈমানের হাকিকত বা স্বরূপ হলো, তুমি বদ্ধমূলভাবে বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানি কিতাবগুলোর প্রতি, আল্লাহর নবী-রাসুলদের প্রতি, কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং তাকদিরের প্রতি- অর্থাৎ এ কথা বিশ্বাস করা, ভালো-মন্দ সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ৫০)

ইসলাম মানুষের জন্য মহান আল্লাহর মনোনীত একমাত্র ‘‘দ্বীন” বা জীবনব্যবস্থা। তিনি সকল নবী-রাসুলকেই মানুষের হেদায়াতের জন্যে এ জীবনব্যবস্থা দিয়ে প্রেরণ করেছেন। সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (স)-কেও মানুষকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য এ মহান জীবনব্যবস্থা ‘‘ইসলাম” দিয়ে পাঠিয়েছেন। ‘‘এটি একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান” এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে ওহীর মাধ্যমে জানিয়েছেন- “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ‘দ্বীন’, তথা জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছি, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহকে সম্পূর্ণ করেছি এবং জীবনব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে তোমাদের জন্যে পছন্দ বা মনোনীত করেছি।”(সূরা মায়িদাহ : ৩)

মহান আল্লাহ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের জন্য; মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন খলিফা হিসেবে। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা আহমাদ মুজতবা (সা.)–কে দুনিয়ায় পাঠানোর উদ্দেশ্য সম্পর্কে মহাগ্রন্থ কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে: ‘তিনি মহান আল্লাহ, যিনি পাঠিয়েছেন তাঁর প্রেরিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়াত (পথনির্দেশ) ও সত্য দ্বীন (জীবনবিধান) সহকারে; যাতে প্রকাশ্য বিজয়ীরূপে স্থাপন করতে পারেন দ্বীন ইসলামকে সব দ্বীনের (বিধান ও মতবাদ) ওপর; আর সাক্ষী ও সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা-৪৮ আল ফাত্হ, আয়াত: ২৮)।

নিজে ঈমান আনা এবং শরীয়ত মতো চলা যেমন ফরজ, তেমনি যারা দ্বীন ও শরীয়ত সম্পর্কে অনবহিত, ঈমান ও তাকওয়ার আলোকিত পথের বিষয়ে যারা অনবগত, তাদেরকেও যথাসম্ভব দ্বীন সম্পর্কে অবগতি দান করা এবং সামর্থ অনুসারে দ্বীনের উপর চালানোর চেষ্টা করা সবার উপর ফরজ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনিত করেছি” (সুরা মায়েদা-৩) “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হলো ইসলাম” (সুরা আলে-ইমরান-১৯) “যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন অনুসন্ধান করে আল্লাহ তা গ্রহণ করবেন না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে।” সুরা আল ইমরান-৮৫)

পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে: ‘তারা কি আল্লাহর দ্বীনের (আনুগত্যের) পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করছে? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে সেগুলো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাঁরই আনুগত্য করে এবং তাদেরকে তারই নিকট প্রত্যাবর্তন করানো হবে।’ (আল ইমরান ০৩: ৮৩)

“অতএব আল্লাহর ইবাদাত কর তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।” (আয যুমার ৩৯: ০২) ‘নিশ্চই আল্লাহর নিকট ইসলামই হচ্ছে একমাত্র মনোনীত দ্বীন (আনুগত্যের বিধান বা জীবন ব্যবস্থা)।’ (সুরা আল ইমরান ০৩: ১৯)

আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন গ্রহণযোগ্য নয়। আর তা হলো তাওহীদ ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক আনীত জীবন বিধানকে লৌহ বর্ম পরিধান করার ন্যায় গ্রহণ করা।

‘যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা) চায়, তার কাছ থেকে তা কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আলে ইমরান ০৩: ৮৫)

ইসলামে প্রবেশের একমাত্র দরজা হলো কালিমায়ে তাইয়েবা (মহা পবিত্র বাক্য)। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কেউ নেই, মুহাম্মদ সা. তাঁর রাসুল)।

কালিমায়ে তাইয়েবার উপর স্থাপিত দ্বীন ও ঈমানের আকাশ-ছোঁয়া মিনার। আজন্ম কাফের-মুশরিকও যদি এ কালিমা গ্রহণ করে এবং বিশ্বাসের সঙ্গে পাঠ করে তাহলে মুহূর্তের মধ্যে সে মুমিন ও মুসলমানরূপে আত্মপ্রকাশ করে। দুনিয়া ও আখেরাতের চির মুক্তি ও নাজাতের অধিকারী হতে পারে। তবে শর্ত হলো এ কালিমার মাধ্যমে মহান আল্লাহর তাওহীদ এবং প্রিয় নবীর রেসালাতের যে স্বীকৃতি সে দান করলো তাকে তা বুঝতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে এবং মনে প্রাণে মেনে নিতে হবে। কিন্তু সে যদি তাওহীদ ও রেসালাতের মর্ম মোটেই বুঝতে না পারে, শুধু মুখে উচ্চারণ করে, তাহলে আল্লাহ তাআলার নিকট সে মুসলমানরূপে গণ্য হতে পারবে না। এ-জন্য কালিমায়ে তাইয়েবার অর্থ ও মর্ম শিখে নেওয়া জরুরি।

কালিমার প্রথম অংশ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

কালিমার প্রথম অংশের মাঝে আল্লাহ তাআলার তাওহীদের স্বীকারোক্তি নিহিত। এই স্বীকারোক্তির মর্ম ও মতলব হলো, মহান আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতীত এমন কিছু নেই, যা ইবাদত ও উপাসনার উপযুক্ত হতে পারে। বরং ইবাদত-বন্দেগী শুধু আল্লাহ তাআলার প্রাপ্য। তিনিই স্র্রষ্টা, তিনিই কর্তা, রিযিকদাতা, পালনকর্তা। শুধু তিনিই জীবনদাতা, কেবল তিনিই মৃত্যুদাতা, রোগদাতা-আরোগ্যদাতা। উপকার-অপকার, স্বচ্ছলতা-দরিদ্রতা মোটকথা, জগতের সকল ভাঙ্গাগড়ার একমাত্র মালিক তিনি। আসমান জমিনের সবকিছু মানুষ হোক, ফেরেশতা হোক অন্য আর যাইহোক সবই তাঁর সৃষ্টি, তাঁর হুকুমের গোলাম। কোনো সমকক্ষ নেই তাঁর।

ঈমানী প্রাসাদের প্রথম ইট হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এটাই ছিলো উম্মতের প্রতি সকল নবী-রাসুলের প্রথম সবক। দ্বীনের সকল বিষয়ের মাঝে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর মর্যাদা সর্বাধিক। নবীজী ইরশাদ করেন, ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে। তার মাঝে সর্বোত্তম শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর প্রবক্তা হওয়া। সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৭৬

এ জন্য সমস্ত যিকিরের মাঝে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। এক হাদীসে এসেছে,

যিকির সমূহের মাঝে শ্রেষ্ঠ যিকির হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৮০০
অপর একটি হাদীসে এসেছে, আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে বলেন, হে মুসা! সাত তবক আসমান-জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে, সবি যদি এক পাল্লায় রাখা হয়, আর অন্য পাল্লায় শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ রাখা হয়, তবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর পাল্লাই ভারী হয়ে যাবে। সুনানে কুবরা নাসাঈ, হাদীস নং ১০৬০২

কালিমায়ে তাইয়েবার এই অংশটুকুর এত ওজন ও ফজিলত এজন্য যে, এর ভেতর আল্লাহ তাআলার তাওহীদ ও একত্ববাদের স্বীকৃতি রয়েছে। তাঁর ইবাদত করা এবং তাঁর হুকুম মতো চলার অঙ্গীকার নিহিত আছে। এটাই ঈমানের রূহ এবং প্রাণস্পন্দন। নবীজী উম্মতকে বারবার এই কালিমা পাঠ করে ঈমান তাজা করার জন্য নসীহত করেছেন- হে লোকসকল! তোমরা সব সময় তোমাদের ঈমানকে তরতাজা রাখার চেষ্টা করো। কতক সাহাবী আরজ করলেন, ঈমান তাজা রাখার উপায় কী? নবীজী ইরশাদ করলেন, বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর যিকির করো। মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ৮৭১০

এই কালিমার যিকির দ্বারা ঈমান তাজা হওয়ার কারণ হলো এতে আল্লাহ তাআলার বন্দেগীর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হয়। সর্বাবস্থায় তাঁর প্রতি নিবিষ্ট এবং তাঁর মুহাব্বত ও ভালোবাসায় নিমগ্ন থাকার প্রেরণা সৃষ্টি হয়। সুতরাং যত গভীর ধ্যান ও পরম উপলব্ধির সঙ্গে আমরা বেশী বেশী এই কালিমার যিকির করবো, নিশ্চিতভাবে আমাদের ঈমান সে পরিমাণ তাজা হতে থাকবে, ঈমানের মজবুতি ততই বাড়তে থাকবে ইনশাআল্লাহ। এভাবে এক সময় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’এর যিকিরই আমাদের সর্বক্ষণের আমল হয়ে যাবে এবং এর দাবী অনুযায়ী জীবন যাপন আমাদের বৈশিষ্ট্যে পরিণত হবে।

খাঁটি দিলে ধ্যানের সঙ্গে বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ যিকির করি, যাতে আমরা ঈমান তাজা রাখতে পারি। আমাদের জীবনকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর ছাঁচে ঢেলে সাজাতে পারি।

কালিমার দ্বিতীয় অংশ: মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ

কালিমার দ্বিতীয় অংশে মুহাম্মদ সাল্লালল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার নবী হওয়ার ঘোষণা রয়েছে। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে নবীজীকে পৃথিবীবাসীর হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করা এবং কোরআন আল্লাহ তাআলার বাণী হওয়া, ফেরেশতার বিদ্যমানতা, কেয়ামত সংঘটিত হওয়া, মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হওয়া, নেককারের জন্য জান্নাত এবং বদকারের জন্য জাহান্নামের ফয়সালা হওয়া ইত্যাদি যত সংবাদ নবীজী দান করেছেন, সবই ধ্রুব সত্য বলে বিশ্বাস করা। নবীজী আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে অকাট্য ও নিশ্চিত জ্ঞান লাভের পর উম্মতকে তা জানিয়েছেন। এর মাঝে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। এমনিভাবে নবীজী অন্যান্য যে সকল হেদায়েত দান করেছেন, যে সমস্ত হুকুম-আহকাম ও বিধানাবলী বর্ণনা করেছেন, সেগুলো মূলত আল্লাহরই আহকাম ও হেদায়েত। আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে নবীজীর অন্তরে সেগুলো ঢেলে দিয়েছেন।

আল্লাহর নবী ও রাসুল হিসেবে মেনে নেওয়ার অর্থ তাঁর প্রতিটি আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। কারণ আল্লাহ তাআলা যে বিধানাবলীর উপর মানব ম-লীকে চালাতে চান, সে বিধানগুলিই নবীর মাধ্যমে বান্দাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছেন। কোরআন শরীফে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, আমি কেবল এজন্য নবী প্রেরণ করেছি যে, আমার হুকুমে নবীর আনুগত্য করা হবে, তার আদেশ-নিষেধগুলো মান্য করা হবে। সূরা ৪, আয়াত ৬৪ আমরা যখন কালিমা পড়ে নবীজী সাল্রাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার সত্য নবী বলে স্বীকার করলাম, তখন তাঁর হুকুম মতো চলা, তাঁর দেয়া শরীয়ত অনুযায়ী আমল করা এবং তাঁর সকল কথা মান্য করা আমাদের উপর অপরিহার্য।

এভাবে শপথ নেওয়াকেই বলে ঈমান আনা, তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দেওয়া। সুতরাং এই একরারনামা স্মরণ রাখা এবং এর দাবী অনুসারে জীবন গড়া প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। তাহলে সে জান্নাতের হকদার হতে পারবে, আল্লাহ তাআলার নিকট সাচ্চা মুমিনের মর্যাদা লাভ করবে।

যে ব্যক্তি খাঁটি দিলে কালিমার দুই অংশ তথা তাওহীদ ও রেসালাত স্বীকার করবে এবং কাজেকর্মে এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে, এমন খোশনসীব বান্দার জন্য বড় সুসংবাদ! নবীজী ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি খাঁটি মনে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’-এর স্বাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ পাক তার উপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭

হজরত ইতবান বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, কেয়ামতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, বুখারি, মুসলিম, বায়হাকি ও দূররে মানসুর)

এ কারণেই সর্বোত্তম জিকির হলো- `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যে জিকিরের বিনিময় শুধুই জান্নাত। এ তাওহিদের কালেমাই ঈমানের সর্বোচ্চ চূড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালেমা এ জিকিরের বিনিময় ঘোষণা করেছেন জান্নাত। ‘যে ব্যক্তি ইখলাসের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (ইবনে হিব্বান)

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: