ইন্টারনেট
হোম / তথ্য-প্রযুক্তি / বিস্তারিত
ADS

সাইবার বুলিং থেকে সুরক্ষিত থাকবেন যেভাবে

9 March 2022, 12:24:49

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ইন্টারনেট এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন কমবেশি সবার বিচরণ, শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল, সবখানেই এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের জয়জয়কার। আর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে সাইবার ক্রাইমের মাত্রা এবং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সাইবার বুলিং। এক বেদনাদায়ক আতঙ্ক ও অস্থিরতার নাম হচ্ছে এখন সাইবার বুলিং।

অনেকের কাছেই সাইবার বুলিং একটি নতুন শব্দ। অনলাইনে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন ব্যক্তিকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য ঘটানো বিভিন্ন ধরনের কার্যকলাপের মাধ্যমে সাবইবার বুলিং সংঘটিত হয়ে থাকে। দেশে সাইবার বুলিংয়ের ঝুঁকি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে এবং নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীরা সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছেন সাইবার বুলিংয়ের।

সম্প্রতি ভয়ংকর যেসব অপরাধ ঘটেছে তারমধ্যে সাইবার বুলিং অন্যতম। যেমন বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় বাজেভাবে মেসেজ পাঠানো। আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও পাঠানো। ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করা হলে পরে সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ারের মাধ্যমে অশ্লীল ছবিতে রূপান্তর করে হয়রানির শিকার করা হয়।

পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নিয়মিত সাইবার বুলিং, আপত্তিকর মন্তব্য কিংবা হয়রানির শিকার হয়। অনলাইনে হয়রানি বা সাইবার বুলিংয়ের কারণে অনেকেই হতাশায় ভোগেন। তাদের একটি অংশ হতাশা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

ভার্চুয়াল এই দুনিয়ায় কমেন্ট করার ফলে নারীদের যৌন হয়রানি ও উসকানিসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি থেকেই বাড়ছে এসব অপরাধ। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, টুইটারসহ অন্য কোনো মাধ্যমে মানহানিকর বা অপমানজনক কোনো মন্তব্য করা অপরাধ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ (১) (ক) ধারায় এ ধরনের কাজ অপরাধ। এসব অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমবার অভিযুক্তকে তিন বছর জেল ও ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। সাইবার বুলিং থেকে যেভাবে সুরক্ষিত থাকবেন –

সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা

সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি তে বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা বলতে অপরিচিত কোন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে যুক্ত না করাই ভালো। ফেক প্রোফাইল হতে পারে আপনার জন্য ক্ষতির কারণ। ফলে এ সম্পর্কে আমাদের যেমন জানতে হবে তেমনই নিরাপদও থাকতে হবে।

কিন্তু ফেক প্রোফাইল চিনবেন কীভাবে? এক্ষেত্রে প্রথমেই প্রোফাইলের ছবি চেক করুন। ছবিটি সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন অন্য কোথাও পাওয়া যায় কি না। তাছাড়া চেক করে দেখতে হবে- ইউজার নেম ও আইডি নেম একই কি না। এমন প্রোফাইলের ফ্রেন্ডলিস্টেও অন্য সন্দেহজনক আইডি যুক্ত আছে কি না। অ্যাবাউট সেকশন থেকে বেসিক ইনফো চেক করে নিন।

সেলিব্রেটি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আসল আইডি চেনার সহজ উপায় ভেরিফাইড মার্ক চেক করা। ফেক আইডি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেলে তাকে আনফলো বা আনফ্রেন্ড করে দিতে পারেন। ফেক আইডিটি বন্ধ করার জন্য সেই প্রোফাইলে গিয়ে রিপোর্টও করতে পারেন। আর যদি এসব আইডি থেকে কোনো রকম হয়রানির শিকার হন তবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগও জানাতে পারেন।

গুজব এড়িয়ে চলুন

অনালাইনে আপনার ছোট্ট একটি শেয়ার হতে পারে অনেক বড় ক্ষতির কারণ। ইন্টারনেট ব্যবহারে একটু দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমেই গুজব প্রতিরোধ করা সম্ভব। কিন্তু প্রতিদিন এতসব ইনফরমেশনের ভিড়ে কোনটি সঠিক কোনটি ভুল বুঝবেন কীভাবে? এজন্য প্রথমেই তথ্যটির সোর্স খেয়াল করতে হবে। যে সোর্স থেকে তথ্যটি এসেছে তা বিশ্বাসযোগ্য কি না যাচাই করে দেখুন। এছাড়াও খেয়াল করে দেখতে হবে- সংবাদটি অন্য কোনো নির্ভরযোগ্য সাইটে প্রকাশিত হয়েছে কি না। ওয়েব অ্যাড্রেসটি অদ্ভুত লাগছে কি না। যে প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা খবরটি দিয়েছেন তার নাম কোথাও শুনেছেন কি না।

এই বিষয়গুলো যাচাই করার পর যদি মনে হয় ইনফরমেশনটি ভুল তবে অবশ্যই শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি কোনো পেজ থেকে তথ্যটি আপনার সামনে আসে তবে রিপোর্ট করে দিতে পারেন আর ই-মেইলের ক্ষেত্রে রিপোর্ট করুন স্প্যাম মেইল হিসেবে।

ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা

রিয়েল লাইফে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য কি সবার সাথে শেয়ার করেন? তাহলে অনলাইনে কেনো? ইন্টারনেটের দুনিয়ায় শেয়ার করা আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন অনেক ক্ষেত্রে আপনার জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

অনলাইনে নিজের পুরো নাম, ফোন নম্বর, ই-মেইল আইডি কিংবা পাসওয়ার্ড শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া নিরাপদ থাকতে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। লোকেশন সেটিং বন্ধ রাখার মাধ্যমে নিজের অবস্থান না জানানোই ভালো।

আপনার পোস্ট কারা দেখতে পারবে সেটি ঠিক করে দিতে পারেন। টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু রাখতে হবে। ই-মেইল আইডি বা ফোন নম্বর দিয়ে কেউ খোঁজার চেষ্টা করলে পাবে কি না সেটি ঠিক করে দিতে হবে।

অনলাইনে হয়রানি প্রতিরোধ

অনলাইনে অন্যের ব্যবহার করা ছোট্ট একটি শব্দ কিংবা ইমোজির এক্সপ্রেশন হয়ে উঠতে পারে অস্বস্তির কারণ। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারে একটু সচেতন হলেই এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সম্ভব। আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে নিশ্চয়ই এমন কেউ আছেন যাকে আপনি চেনেন না। এমন সব অচেনা মানুষ কখনও আপনার ক্ষতির কারণ হতেই পারে। তাই অপরিচিত কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধু তাই নয় বরং- সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত ইনফো পাবলিক করে রাখবেন না। সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অপরিচিত মেইল বা মেসেজ এড়িয়ে চলতে হবে। অন্য কারো পোস্টে আপনাকে ট্যাগ করার অপশন বন্ধ করে রাখতে পারেন।

প্রাইভেসি বজায় রাখা

সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টগুলোর প্রাইভেসি বজায় রাখা। আমরা আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া গানগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ছোট এবং পোস্ট দিয়ে থাকি। এসকল কিছু আপলোড করার সময় কারা এ ধরনের পোস্টগুলো দেখতে পারবে তা আপনি আগে থেকেই নির্ধারণ করে দিতে পারেন। এছাড়াও আপনার আপলোড করা ছবিগুলো কেউ ডাউনলোড যাতে করতে না পারে সেজন্য গার্ড ব্যবহার করতে পারেন।

কোথায় কি ঘটছে তার রেকর্ড রাখুন। সম্ভব হলে ক্ষতিকর পোস্ট বা কমেন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে রাখুন। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে সকল প্রমাণগুলো জোগাড় করে রাখুন।

অনলাইনে সহিংসতা ও সাইবার হয়রানির শিকার হলে আইনি সহায়তা নেয়ার জন্য নিকটস্থ থানা কিংবা জরুরী পুলিশ সেবার জন্য ৯৯৯ পুলিশ হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন।

এছাড়া কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সাইবার পুলিশ সেন্টার, হ্যালো সিটিঅ্যাপ, রিপোর্ট টু র‌্যাব অ্যাপ এবং প্রতিটি ফেসবুক পেজেও অভিযোগ করতে পারেন।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: