- আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার
- থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আগামীকাল সকালে সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন প্রধানমন্ত্রী
- এলপিজির নতুন দাম ঘোষণা দুপুরে
- এভারকেয়ারে ভর্তি খালেদা জিয়া
- মাজার জিয়ারত শেষে ফেরার সময় পথেই প্রাণ গেল ৫ জনের
- বিলাসিতা ছেড়ে শ্রমিকদের কল্যাণে বিশেষ নজর দিতে শিল্প মালিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী
- ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার হামলা, নিহত ৫
এবারও রপ্তানির সবটুকু ইলিশ ভারতে যাচ্ছে না
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ৪ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির কথা ছিল। তবে এর এক-তৃতীয়াংশও রপ্তানি হচ্ছে না। ৪০ দিনের মধ্যে রপ্তানির কথা থাকলেও সরকারি ছুটি আর নিষেধাজ্ঞায় সব আটকে আছে। এ নিয়ে দুদেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। লোকসানের সম্মুখীনও হবেন বলে তারা বলছেন। এজন্য রপ্তানির সময় বাড়ানোর দাবি তাদের। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ভারতের ব্যবসায়ীরা চিঠিও দিয়েছেন। যদিও এখন পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। মৌসুমের শেষ আর দেশে ইলিশ সংকটের প্রতি ইঙ্গিত করে সেখানকার কর্মকর্তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
দেশের চাহিদা পূরণ ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বহু বছর ধরে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে দুর্গাপূজার সময় দুদেশের সম্প্রীতির নিদর্শন হিসাবে প্রতিবেশী দেশে কিছু ইলিশ রপ্তানি করা হয়। এবার দেশের ৭৯টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার। এ পরিমাণ ইলিশ ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে রপ্তানি করতে বলা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী ইলিশ পাঠাতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। মাত্র ৪০ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হলেও হিসাবে দুদেশের সরকারি ছুটি আনা হয়নি। এর ওপর আবার ১২ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা। প্রজনন মৌসুমের হিসাবে যা চলবে ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এসব মিলিয়ে ৪০ দিনের মধ্যে মাত্র ১২ দিন ইলিশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে লোকসানের শিকার হবেন ব্যবসায়ীরা।
রপ্তানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বরিশাল ইলিশ মোকামের ব্যবসায়ী গোপাল সাহা বলেন, ‘২০ সেপ্টেম্বর থেকে রপ্তানির অনুমতি দেয় সরকার। বেনাপোল সীমান্ত হয়ে আমরা পাঠাতে শুরু করি। সরকারি হিসাবে ৪০ দিন বলা হলেও আসলে পাঠাতে পারব মাত্র ১২ দিন। শুক্রবার আমাদের এদিকে বন্ধ থাকে রপ্তানি। একই ঘটনা ঘটে রোববার ভারতের ক্ষেত্রে। এরসঙ্গে রয়েছে দুদেশের নানা সরকারি ছুটি। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ৫ দিন বন্ধ ছিল রপ্তানি। এরমধ্যে আমাদের যেমন ছিল ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) তেমনি ভারতে ছিল লাস্ট সাটার ডে আর মহাত্মা গান্ধী দিবসের ছুটি। এছাড়া ইলিশের প্রজনন মৌসুম হিসাব করে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে বন্ধ থাকবে ইলিশ শিকার পরিবহণ ও বিক্রি। অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত পাঠানোর অনুমতি থাকলেও কার্যত তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ১১ অক্টোবর রাত ১২টা ১ মিনিটে। এসবের হিসাবে সবমিলিয়ে ১২ দিন ইলিশ যাবে ভারতে।’
বাংলাদেশ হিলশা এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নিরব হোসেন টুটুল বলেন, ‘কখনোই এমন হয়নি যে পূজার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে ভারতে ইলিশ রপ্তানি। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ইলিশ পাঠাচ্ছেন পূজার শুভেচ্ছা হিসাবে। পূজা শুরু ২১ অক্টোবর আর রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার ১০ দিন আগে ১১ অক্টোবর থেকে। ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন মিলেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৫০ টনের কিছু বেশি ইলিশ গেছে। আর ৪ দিন ইলিশ পাঠাতে পারব। এ ৪ দিনে বড় জোর ২০০ টন ইলিশ পাঠানো যাবে। অবশ্য তাও পারব কিনা সন্দেহ। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোতে এখন বিপদ সংকেত চলছে। আবহাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সাগরে যাচ্ছে না কোনো ট্রলার। এই অবস্থায় কষ্টেসৃষ্টে আরও ২শ টন পাঠালেও মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াবে ৮শ টন। অথচ সরকার অনুমতি দিয়েছিল ৩ হাজার ৯৫০ টনের। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তাতে লোকসানের মুখে পড়বে সবাই।’
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এফবিসিসিআই পরিচালক নিজাম উদ্দিন সিআইপি বলেন, ‘প্রতিবছরই পূজার আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার। বিষয়টি মাথায় রেখে আমরাও নেই প্রস্তুতি। ট্রলার মালিক ও জেলেদের দেওয়া হয় অগ্রিম টাকা। ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও হয় নানা চুক্তি। রপ্তানি প্রশ্নে ডলার সংগ্রহসহ আরও অনেক জটিলতা সামাল দিতে হয় আমাদের। এতকিছুর পর মাত্র ১২ দিন রপ্তানি করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন তো হবেই না উপরন্তু মোটা অঙ্কের লোকসান গুনতে হবে। ট্রলার মালিক আর জেলেদের দেওয়া অগ্রিম ফেরত না পাওয়াসহ রপ্তানি প্রশ্নে আরও যত বিনিয়োগ সব পানিতে যাবে। প্রজনন মৌসুমে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে আমরাও একমত। তবে যেহেতু অনুমোদনের ৫ ভাগের ১ ভাগ ইলিশও রপ্তানি হয়নি তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, এই পরিমাণ ইলিশ না যাওয়া পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হোক সময়। সেক্ষেত্রে অন্তত ব্যবসায়ীরা লোকসান এড়াতে পারবে।’
অনুমতির পুরো ইলিশ না যাওয়ায় ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের আমদানিকারকরাও। কলকাতার সংবাদকর্মী সুব্রত আচার্য্য জানান, ‘আগের বছরের পূজোতেও ঘটেছিল একই ঘটনা। সেবার ২ হাজার ৯শ টন ইলিশ পাঠানোর অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। নির্দিষ্ট সময়ে হাজার টনের কিছু বেশি পাঠাতে পেরেছিলেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। এ বছর তো আরও কম আসবে ইলিশ। অথচ বাংলাদেশের ইলিশ নিয়ে এখানে তৈরি হয়েছিল দারুণ আগ্রহ। ইলিশ এসেছে শুনলেই হাওড়া-পাতিপুকুরসহ সংশ্লিষ্ট বাজারগুলোতে ভিড় করত মানুষ। দাম চড়া হলেও ইলিশ নিয়ে আগ্রহ আর উৎসাহের কমতি ছিল না। এখন পুরো ইলিশ আসছে না জেনে হতাশ সবাই।’ পশ্চিমবঙ্গ ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যান্ড ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৈয়দ মকসুদ আনোয়ার বলেন, ৫ বছর ধরে পূজার সময় বাংলাদেশ থেকে ইলিশ ভারতে আসে। তবে পাঁচবারে পুরো ইলিশ আসেনি। এতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। পাশাপাশি আমরা লোকসানের শিকার হই। এবার রপ্তানির সময় বাড়াতে বাংলাদেশের মন্ত্রী ও এখানকার হাইকমিশনে চিঠি দিয়েছি। এখন দেখি বাংলাদেশের সরকার কি সিদ্ধান্ত দেয়।
রপ্তানির সময় বাড়ানো হবে কিনা জানতে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম থাকায় কথা বলতে পারেননি। খুদেবার্তায় তিনি তার অসুস্থতার খবর জানান। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গত বছরও একইভাবে রপ্তানির সময় বৃদ্ধির আবেদন উঠেছিল। তবে সরকার তাতে সায় দেয়নি। এবারও সময় বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। একদিকে দেশে বর্তমানে ইলিশের সংকট। তার ওপর প্রজনন মৌসুমে রপ্তানির প্রশ্নই আসে না। ২ নভেম্বর শেষ হবে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা। তখন তো ইলিশের মৌসুমও প্রায় শেষ। এই অবস্থায় রপ্তানি অব্যাহত থাকলে দেশে ইলিশের বাজারে দেখা দেবে অস্থিরতা। দামও চলে যাবে নাগালের বাইরে। সবকিছু বিবেচনায় সময় বৃদ্ধি হবে বলে মনে হয় না।’
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: