- বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ রাষ্ট্রপতির
- পা ছুঁয়ে সালাম করা কি জায়েজ?
- তোর মতো খাঁটি প্রেমিক আমি জীবনেও দেখিনি: ওমর সানীকে মিশা সওদাগর
- উপজেলা নির্বাচন: ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
- বিশ্বকাপে কোহলিদের নিরাপত্তা নিয়ে যা জানাল ভারত
- লঘুচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা, ফের হানা দেবে কালবৈশাখী
- বাঙ্গির যত উপকারিতা
- জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মিশনে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
- পুলিৎজার পেল ৩ গণমাধ্যম
- সারারাত এসি চালিয়ে ঘুমালে শরীরে কী ঘটে জানেন?
রাজস্ব ঘাটতিতে বাড়ছে ঋণ নির্ভরতা
করোনায় কাঙ্ক্ষিত হারে রাজস্ব আদায় হয়নি। ফলে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে সরকার। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের ব্যয় মেটাতে ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও ট্রেজারি বিল থেকে বেশি মাত্রায় ধারদেনা করতে হচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে জুলাই-ডিসেম্বর-এই ছয় মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছে।
একই সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকেও প্রায় ৬১ শতাংশ বেশি ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লিখিত উৎসের ঋণের বিপরীতে ভবিষ্যতে উচ্চমাত্রায় সুদ পরিশোধ করতে হবে। এতে অর্থনীতি চাপে পড়বে। সরকারের নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি) বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে এ পরিস্থিতি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সূত্র আরও জানায়, সিডিএমসির বৈঠকে চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ে জোরালো পদক্ষেপ নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থ সচিব (সিনিয়র) আবদুর রউফ তালুকদার। পাশাপাশি রাজস্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) চালুর সর্বশেষ অবস্থাও জানতে চেয়েছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।
জানতে চাইলে বিআইডিএস-এর সাবেক ডিজি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরি যুগান্তরকে জানান, ধারণা ছিল নতুন বছরে মহামারি কেটে যাবে। অর্থনীতির গতি আসবে। এর সঙ্গে রাজস্ব বাড়বে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি, নতুন করে আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।
এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে যাবে। এতে ব্যয়নির্বাহ করতে গিয়ে ঋণের ওপর আরও নির্ভরশীলতা বাড়বে। এছাড়া বিদেশি ঋণ গ্রহণ কঠিন বিধায় অভ্যন্তরীণ ঋণের দিকে যাচ্ছে সরকার। চাইলে এখন সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না।
আর অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যাংক থেকে বেশি নিলে বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণে বেশি সুদ দিতে হবে। তবে ঋণ গ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই। এজন্য এখন থেকে এ পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, বিশেষ করে কম ব্যয়ের পরিকল্পনা করা দরকার।
এনবিআর হিসাবে চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে আদায়ের পরিমাণ কম ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ।
বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতি হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে অর্থবছরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কাটছাঁট করে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
রাজস্ব আদায় কম প্রসঙ্গে সরকারের ‘নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির (সিডিএমসি)’ বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, করোনার প্রাদুর্ভাবে স্বভাবতই গত বছরের শেষ ৬ মাসে রাজস্ব কাঙ্ক্ষিত হারে আদায় হয়নি। মূলত আমদানি-রপ্তানির স্থবিরতায় কমেছে রাজস্ব আদায়। রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া ডিজিটাল না হওয়ায় অনেকেই করমুখী হচ্ছে না। সব মিলে কাঙ্ক্ষিত হারে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কমেছে রাজস্ব আদায়। তবে গত সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এদিকে রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় ব্যয় মেটাতে সরকার বেশি মাত্রায় ঋণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার জুলাই থেকে ডিসেম্বর-এই ছয় মাসে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ২৮ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি।
একইভাবে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিয়েছে ৫৪ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। কিন্তু চলতি বাজেটে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
সূত্রমতে, সরকারি ব্যয় সামাল দিতে অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে জানুয়ারি থেকে জুন-এই ছয় মাসে ট্রেজারি বন্ড ও বিল থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় সিডিএমসি’র বৈঠকে।
সেখানে দেখা গেছে, সরকারি ট্রেজারি বন্ড থেকে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ট্রেজারি বিল থেকে নেওয়া হবে ৩০ হাজার ২০ কোটি টাকা। এর আগে গত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রেজারি বন্ড থেকে ২৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের কারণে তারল্য পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক আছে। এটি না হলে ট্রেজারি বন্ড ও বিল থেকে আরও ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যেত। এই সময়ে কিছু সামাল দেওয়া গেছে উল্লিখিত দুটি কারণে। তবে নতুন করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি হবে।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: