ইন্টারনেট
হোম / ধর্ম / বিস্তারিত
ADS

ইসলামি দৃষ্টিকোণে ধূমপান

1 September 2023, 6:08:02

ধূমপান মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ উক্তির সঙ্গে সবাই পরিচিত হলেও এর প্রতি অনেকের আসক্তির যেন কমতি নেই। ইসলামি শরিয়াহ বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপান থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক।

ধূমপায়ীরা ব্যক্তিজীবনে সুস্বাস্থের অধিকারী হতে পারেন না। বিশ্বে যত লোকের মৃত্যু ঘটে, তন্মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। বিড়িসিগারেটের মধ্যে থাকা তামাক ও নিকোটিন প্রভৃতি ক্ষতিকর। এগুলো মানুষকে নেশাগ্রস্ত করে। অথচ ইসলামে নেশা জাতীয় যে কোনো দ্রব্য গ্রহণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আর যা নেশা উদ্রেক করে তাই নিষিদ্ধ।’ (সহিহ মুসলিম :৫১১৪)

ধূমপানের কারণে সৃষ্ট সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগ হলো ক্যানসার। ধূমপানের কারণে ফুসফুসে, জিহ্বায়, কিডনি ও মুখের ক্যানসারসহ সব রকমের ক্যানসার রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে, ধূমপানের মাধ্যমে মানুষ তিলে তিলে নিজের জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ এই ব্যাপারে সতর্ক করে আল্লাহ্ বলেন, ‘তোমরা নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের দিকে প্রসারিত করো না।’ (সুরা বাকারা :১৯৬)

ধূমপানের কারণে হাঁপানি, মাথাব্যথা, লিভার সিরোসিস, ব্রেনস্ট্রোক, নাকের অনুভূতি শক্তির দুর্বলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসসহ আরো নানা প্রকার অসুখবিসুখ হয়। এর মাধ্যমে ঘটে অর্থের অপচয়। আর ইসলাম অপচয় ও অপব্যয়কে সমর্থন করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ :৩১)

ইসলাম ধূমপান পরিত্যাগে উত্সাহ দিয়েছে। প্রথম যুগের আলেমগণ ধূমপানকে মাকরুহ হিসেবে চিহ্নিত করলেও সমসাময়িক যুগের অধিকাংশ আলেমের মতে, ‘ধূমপান করা নাজায়েজ। অনুরূপ ধূমপানের ব্যবসাও মাদকদ্রব্যের ন্যায় নাজায়েজ।’ যদিও কোরান-হাদিসে এই ব্যাপারে সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ইসলামি শরিয়ার অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে, ‘রসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে বিদ্যমান না থাকার কারণে যেসব বিষয়ে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় না, সে বিষয়ে তার অন্যান্য নির্দেশনার আলোকে ইজতিহাদ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ এজন্য শায়েখ বিন বায (রহ.)সহ অনেকেই ইজতিহাদ করে ধূমপান হারাম হওয়ার মত পোষণ করেছেন। কেননা, এর মধ্যে ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে। আর ইসলাম সব ক্ষতিকর ও অপবিত্র বস্তু হারাম ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করেন, আর অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ :১৫৭)

ধূমপানের মাধ্যমে আশপাশে থাকা অন্য মুসলিম ভাই কষ্ট পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ধূমপায়ী ব্যক্তির মুখের দুর্গন্ধে মানুষ সহসাই বিরক্ত বোধ করে ও অন্যের শরীরে ধোঁয়া প্রবেশের মাধ্যমে ক্ষতি হয়ে থাকে। অথচ রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিজের স্বার্থে অন্যের ক্ষতি করবে না, তদ্রুপ পরস্পর কারো ক্ষতি করবে না।‘ (ইবনে মাজাহ :২৩৪০)

ধূমপান থেকে বিরত থাকা প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির জন্য অত্যাবশ্যক। ধূমপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি এর থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু পন্থা অনুসরণ করতে পারে। যেমন—

(১) ধূমপান পরিত্যাগে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং এহেন কর্ম থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।‘ (সুরা আন-নূর :৩১) (২) বেশি বেশি নামাজ, রোজা ও কোরান তেলাওয়াত করা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই এই কোরান সর্বশ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শন করে।’ (সুরা বনি ইসরাইল :৯) (৩) অসত্ বন্ধু পরিহার ও সত্ব্যক্তিকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা। এই ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ্ বলেন, ‘তুমি সর্বদা নিজেকে ওদের সংস্রবেই রাখবে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় নিজ প্রভুকে ডাকে একমাত্র তারই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।’ (সুরা কাহাফ :২৮) (৪) ধূমপানের কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ‘শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে তুমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। তিনিই তো সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (সূরা আরাফ: ২০০)

লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: