ইন্টারনেট
হোম / রাজনীতি / বিস্তারিত
ADS

আজ মধ্যরাতে প্রচারণা শেষ, ভোট নিয়ে চলছে সমীকরণ

14 January 2022, 10:33:38

আজ শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সকল প্রকার প্রচার-প্রচারণা শেষ হচ্ছে। নির্বাচনের আর মাত্র এক দিন বাকি। ভোট নিয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের নানা সমীকরণ।

জয়ের জন্য প্রতিনিয়ত নিজেদের মতো করে কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে নিয়ামক বা ফ্যাক্টর কারা হবেন, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতা নাকি দলীয় প্রতীক, নারী নাকি নতুন ভোটার—কারা নির্ধারণ করবেন নগরপিতা-নগর জুড়ে এমনই আলোচনাই সবার মধ্যে।বিগত দুটি সিটি নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে এত উত্সাহ- উদ্দীপনা দেখা যায়নি। উত্সবের নগরীতে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ।

নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের প্রচার-প্রচারণা। মেয়র পদে সাত জন প্রার্থী থাকলেও সকলের দৃষ্টি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের দিকে। দুজনেরই কর্মী-সমর্থকদের প্রচার প্রচারণা চলছে সমানতালে।আইভী ও তৈমূরের মধ্যে ভোটযুদ্ধ হলেও এবারও ঘুরে ফিরে বারবার আসছে শামীম ওসমানের নাম। গত ১০ জানুয়ারি শামীম ওসমান দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন। তারপরও তাকে নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যে চলছে আলোচনা। শামীম ওসমান বার বার বলছেন, নৌকার বিরুদ্ধে যাওয়ার উপায় নেই। নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা তথা নৌকার ঘাঁটি। এখানে নৌকা অবশ্যই জয়লাভ করবে। গত বুধবার মধ্যরাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই শামীম ওসমানের মাঠে নামা নিয়ে মন্তব্য করার পর মাঠ পর্যায়ের শামীম ওসমানের অনুসারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে নির্বাচনি প্রচারণাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনেচলাসহ সরকার বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দফা নির্দেশনামা জারি করলেও এসব নির্দেশনা প্রচার-প্রচারণায় কোনো প্রার্থীই মানছে না। এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ বলেন, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে নারায়ণগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর হবে। গত কয়েক দিনে নাসিকের ২৭টি ওয়ার্ড ঘুরে ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে জয়-পরাজয়ে আরো কিছু ফ্যাক্টর কাজ করবে। দলীয় প্রতীক বা নিজস্ব ভোটারদের সঙ্গে ব্যক্তি ইমেজ তো থাকবেই। প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর যিনি এসব ভোট নিজের বাক্সে নিতে পারবেন, তিনিই হাসবেন বিজয়ের হাসি। আর ভোটারদের প্রত্যাশা-ভয়হীন পরিবেশে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিতে চান তারা। যেখানে ঘটবে তাদের মতের প্রতিফলন। সুখে-দুঃখে পাশে পাবেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের।

সেলিনা হায়াৎ আইভী গতকাল দিনভর ১৬, ১৭ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার-প্রচারণা চালান। স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার ১১ ও ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচার-প্রচারণা চালান। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডটি সেলিনা হায়াত্ আইভীর নিজের এলাকা। তৈমূর আলম খন্দকার প্রচারণাকালে গতকাল নেতাকমী‌র্দের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বার বার অনুরোধ জানান। দুই প্রার্থীই নৌকা ও হাতি মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান।

গণসংযোগকালে শামীম ওসমান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত হন আইভী। তিনি বলেন, এই কথা শুনতে শুনতে আমি হয়রান হয়ে গেছি। আপনারা আমাকে মাঠে কাজ করতে দিচ্ছেন না। একজনকে কেন বারবার টেনে নিয়ে আসেন আপনারা? উনি তো নৌকার লোক, নৌকার বাইরে কোথায় যাবেন? আইভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি অবনতির দিকে যায় তাহলে প্রশাসন তো আছেই। নির্বাচনের আগে সমস্যা হতেই পারে। আমি মনে করি, প্রশাসন অত্যন্ত সচেতন। তারা এগুলো দেখভাল করবে। তৈমূর আলম খন্দকারের নেতাকর্মী ও নির্বাচনি এজেন্টের গ্রেফতার প্রসঙ্গে আইভী বলেন, আমি জানি না কাকে কোথায় ধরা হচ্ছে। আমি শুধু শুনেছি বিএনপির এক নেতাকে ধরা হয়েছে তার নামে হেফাজতের মামলা ছিল। আর কাকে ধরা হয়েছে এটা আমি জানি না, আমার জানার বিষয়ও না। এটা প্রশাসন দেখবে। আমি সারা দিন ব্যস্ত, আমি কোনো সহিংসতার সঙ্গে জড়িত না। কাউকে কখনো বলিনি কাউকে গ্রেফতার করেন। আমি শুধু চাই ভোটকেন্দ্র যেন পরিষ্কার থাকে। কোনো সন্ত্রাসী যেন ভোটকেন্দ্রে ঝামেলা করতে না পারে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার নির্বাচনি প্রচারণাকালে বলেন, পুলিশের কার্যক্রমের কারণে একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তবে জনগণ ভীত না। আমার নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আন্তর্জাতিক দূতাবাসের যারা আছেন, পাশাপাশি মানবাধিকারকর্মী যারা আছেন সবাইকে বলব, আপনারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করুন। কেন আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে। শুধু তাই নয় বিএনপি করে না অথচ যারা আমাকে সমর্থন দিয়েছে তাদেরকেও হয়রানি করা হচ্ছে।

তৈমূর আলম বলেন, আমার দলের নেতাকর্মীরা তো নৌকায় ভোট দেবে না। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের কমিটি ভেঙে দিচ্ছে। কারণ তারা নৌকার পক্ষে কাজ করছে না। তিনি আরো বলেন, কাউকে ধমক ও গালি দিয়ে তো কাজ করানো যায় না। নারায়ণগঞ্জের জনগণের কাছে মেসেজটা ক্লিয়ার যে, তাদের মধ্যে বিরাট ফাটল। ঢাকা থেকে মেহমানরা এসেও এই ফাটল মেটাতে পারেনি। হাতি এখন জনগণের মার্কা। হাতির মাধ্যমেই পরিবর্তন আসবে। এদিকে নানা নাটকীয়তার পর শামীম ওসমান নৌকার পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিলেও তাকে নিয়ে সন্দেহ দূর হচ্ছে না। আইভী নিজেও এখনো তার প্রতিশ্রুতিকে আস্থায় নিতে পারছেন না। ওসমান পরিবার সক্রিয়ভাবে আইভীর জন্য মাঠে থাকলে নৌকার বিজয় অনেকটা সহজ হবে। কিন্তু কোনো কারণে ওসমান পরিবার তৈমূরের দিকে ঝুঁকে পড়লে আইভীকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। তাই শামীম ওসমানের ভূমিকা কী হবে, তা দেখার জন্য ভোটের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: