
সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাষ্ট্রপতি পাবে বাংলাদেশ

অপেক্ষা সোমবার সকালের। শপথ গ্রহণ শেষে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বভার নেবেন মো. সাহাবুদ্দিন। আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন রাষ্ট্রপতি পাবে বাংলাদেশ। বঙ্গভবন পাবে তার নতুন বাসিন্দা।
বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বেলা ১১টায় নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে তাঁর কার্যালয়ের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পর বঙ্গভবন ছাড়ছেন আবদুল হামিদ।
নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বঙ্গভবনের ঐতিহাসিক দরবার হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। এরপর নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নথিতে স্বাক্ষর করবেন।
শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত থাকবেন। নতুন রাষ্ট্রপতির স্ত্রী ড. রেবেকা সুলতানা ও ছেলে আরশাদ আদনান রনিসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সংসদ সদস্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতারা, তিন বাহিনীর প্রধান, কূটনীতিক, সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানটি প্রত্যক্ষ করবেন।
নিয়ম অনুযায়ী শপথ অনুষ্ঠানের পর নতুন রাষ্ট্রপতিকে চেয়ারে বসিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি। এসময় তিনি রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রপতিকে পরিচয় করিয়ে দেবেন।
এরপর ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে স্যালুট গার্ড দেবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট। বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে বহন করবে সাজানো একটি গাড়ি।
বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তারা দুই দলে ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে দড়ি ধরে দাঁড়াবেন। তারপর গাড়ি সামনে অগ্রসর হবে। এসময় বঙ্গভবনের ভেতরে সব কর্মকর্তা, কর্মচারী ও পিজিআর সদস্যরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেবেন। বঙ্গভবনকে বিদায় জানিয়ে একটি খোলা জিপে করে সেখান থেকে বের হবেন আবদুল হামিদ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২১ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৭ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসেবে এই পদে আবদুল হামিদ ছিলেন সপ্তদশ ব্যক্তি। আর মো. সাহাবুদ্দিন এই পদে অষ্টাদশ ব্যক্তি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার ও সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ৭৩ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদে পরোক্ষ ভোটে। সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন। তবে মো. সাহাবুদ্দিন একমাত্র প্রার্থী হওয়ায় আর ভোটাভুটির প্রয়োজন পড়েনি।
প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ না থাকায় ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেদিনই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
এক নজরে মো. সাহাবুদ্দিন
মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংক পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম চুপ্পু। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা।
সাহাবুদ্দিন ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরে এলএলবি ও বিসিএস (বিচার) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। জেলা বাকশালের যুগ্ম-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
সাহাবুদ্দিন ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম হত্যার পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন সাহাবুদ্দিন। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে তিন বছর জেল খাটেন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।
মো. সাহাবুদ্দিন দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতাও করেছেন। তাঁর অনেক কলাম বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে ঢাকা টাইমসেও নিয়মিত কলাম লিখেছেন তিনি।
কর্মজীবনে তিনি জেলা ও দায়রা জজ এবং দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
সাহাবুদ্দিন পরপর দুবার বিসিএস (বিচার) এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। চাকরি থেকে অবসরের পর হাইকোর্টে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দুদক কমিশনার হিসেবে সাহাবুদ্দিন পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে উঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন। পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণেও সমর্থ হন তিনি।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।


প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: