ইন্টারনেট
ADS

চেনা আঙ্গিকে পহেলা বৈশাখ, স্বাগত ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

14 April 2022, 10:59:22

গত দুই বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি বাঙালি তার প্রাণের পহেলা বৈশাখ চিরায়ত রূপে উদযাপন করতে পারেনি। এবার আর করোনা বিধিনিষেধ নেই। অদৃশ্য প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে দেশে। নতুন স্বাভাবিক এই সময়ে এবার পহেলা বৈশাখ তার চেনা রূপ ও আঙ্গিগে হাজির বাঙালির সামনে। বাঙালির প্রাণের পহেলা বৈশাখের এবার বন্ধনমুক্তি ঘটল।

বৃহস্পতিবার ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু নতুন বাংলা সন ১৪২৯। নতুন বছরের শুরুতে বাঙালি মেতে উঠবে উৎসবে। ভোরে রাঙা সূর্যকে বরণ করে নেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে উৎসব। জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করবে বাঙালি জাতি।

দুই বছর পর আজ আবার দেখা মিলবে নববর্ষের প্রাণের মেলার। রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন সংগঠনের নানা আয়োজন থাকবে নানা বর্ণে, নানা সজ্জায়।

দিনের প্রথম প্রভাতে রমনার বটমূলে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘ছায়ানট’ ভোরের সূর্যের আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে শুরু করবে বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান। তারপর সমবেত কণ্ঠে আবাহন জানাবে নতুন বছরকে।

বাঙালির প্রাণের এই উৎসবে আবার রাজপথে নামবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা। দুই বছর পর আবার স্বকীয় রূপ ফিরে পাচ্ছে এই বিপুল বর্ণাঢ্য আয়োজন। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার থিম- ‘নির্মল কর, মঙ্গল করে মলিন মর্ম মুছায়ে’।

বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। এতে তিনি দেশবাসীসহ বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উপলক্ষে এক বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথম দিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।

পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।

দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

রমনা বটমূলে ছায়ানট

এবার ছায়ানটের শিল্পীদের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পীরাও আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন। প্রতি বছর ১২৫ জন শিল্পী আয়োজনে অংশগ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে এবার ১০০ জন শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন। এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে। শেষ হবে ৮টা ৩০ মিনিটে। অনুষ্ঠানস্থলে যাতায়াতে এবার গেটের সংখ্যা আটটি। তার মধ্যে প্রবেশপথ তিনটি হলো অরুণোদয়, রমনা রেস্তোরাঁ, অস্তাচল। বের হওয়ার পথ দুটি- বৈশাখী ও উত্তরায়ণ। একই সঙ্গে প্রবেশ এবং বের হওয়ার পথ তিনটি- শ্যামলিমা, স্টার গেট এবং নতুন গেট।

আগত দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে জরুরি চিকিৎসা সেবা, নারী/ সিনিয়র সিটিজেন/ শিশুদের জন্য বিশ্রামাগার। রয়েছে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেবা। তবে রমজান মাস হওয়ায় এবার থাকছে না কোনো খাবারের দোকান।

বর্ষবরণ উৎসব ঘিরে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য রমনাসহ পুরো এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নিয়োজিত নিরাপত্তা কর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আশপাশ এলাকায় ডিএমপির ডগ স্কোয়াড ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট সক্রিয় রয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় দেখা গেছে, এবারের শোভাযাত্রার জন্য টেপা পুতুল, পাখাওয়ালা মাছ, ঘোড়া ও পাখির প্রতিকৃতি প্রাধান্য পেয়েছে। এর বাইরেও শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষের হাতে থাকবে বিভিন্ন রকমের পুতুল, মুখোশ, সরাচিত্র ইত্যাদি।

মঙ্গল শোভাযাত্রা উপলক্ষে চারুকলার জয়নুল আর্টস গ্যালারিতে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হয়েছে। গ্যালারির বাইরে বারান্দায় শিল্পীরা বিভিন্ন ছবি-সরা-মুখোশ আঁকছে। সেসব বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করছে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন কারু শিল্পের জিনিসও বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করছেন শিল্পীরা।

চারুকলার বাইরের পুরো প্রাচীরে বাঙালির লোকজ সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ভেতরে বাচ্চাদের স্কুলটির বাইরের দেয়াল জুড়ে নকশিকাঁথার লোকজ সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে বিষয়ে জানতে চাইলে কারুশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মুমিন মিল্টন বলেন, গত দুই বছর অত্যন্ত সীমিত আকারে হলেও এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা আগের মতই হবে। যদিও আকার ও জায়গা একটু কম। মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে এবারের শোভাযাত্রা টিএসসি থেকে ঘুরে স্মৃতি চিরন্তন হয়ে আবার টিএসসি এসে শেষ হবে।

নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে।

বাংলা নববষের দিন সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে।

বর্ষবরণের দিনে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা থাকবে কঠোর। রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা থাকবে জোরালো। বেলা দুইটার মধ্যে বর্ষবরণের সমস্ত আয়োজন শেষ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও সন্নিহিত এলাকার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বিভিন্ন পয়েন্টে কড়া নিরাপত্তা থাকবে।

পুলিশের পোশাকে এবং সাদা পোশাকে নিরাপত্তকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ডগস্কয়াড এবং বোমা ডিসপোজাল টিম থাকবে। পুরো ভেন্যু সিসিটিভি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: