ইন্টারনেট
ADS

এ মাসেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আশা প্রধানমন্ত্রীর

13 February 2022, 5:47:31

এ মাসের শেষের দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

রোববার সকালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দেশের সব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানদের হাত থেকে ফলাফল গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা তৈরি করেছে। তার সঙ্গে নতুন এল ওমিক্রন। করোনাভাইরাসের এই সময়েও সীমিত আকারে আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে সক্ষম হই। কারণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি বলেই অনলাইন, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শিক্ষাটা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি।’

‘তারপরও আমি বলব করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের শিক্ষার্থীরা। কারণ একটি শিক্ষার্থী, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। তাদের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ থাকবে। তারা লেখাপড়া শিখবে। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিশবে।’ বলেন শেখ হাসিনা।

সরকার প্রধান বলেন, ‘বর্তমান যুগে পরিবারগুলো ছোট। যার কারণে একাকিত্বে ভুগতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীকে। সঠিকভাবে সুযোগও পায়নি। অনলাইনে বা টেলিভিশনে শিক্ষা ব্যবস্থা রেখেছি এটা ঠিক। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সুন্দর পরিবেশ বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে চলা, সেই আনন্দটা থেকে তারা বঞ্চিত ছিল।

‘যখনই করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিলাম, তখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো আবার নতুন করে যে সংক্রমণটা দেখা দিলো…’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসে ওমিক্রন নামে নতুন এক সংক্রমণ এল, যাতে মানুষের মৃত্যু বাড়ছে। মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। এটার জন্য আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আবারও বন্ধ করে দিতে হল। আশা করি আমরা খুব দ্রুত সমাধান করতে পারবো।’

সরকার ১২ বছর বয়সীদের টিকা দেওয়া শুরু করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টিকা নেওয়ার ব্যাপারে অনেকেরই অনীহা থাকে। কেউ নিতে চায়না। এখন আমরা সর্বস্তরের মানুষ যাতে টিকা পায়, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাতে খুলতে পারি, তার জন্য টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’

টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা টিকাটা নিয়ে নেবেন। টিকা নিলে করোনা হলেও সেটা খারাপ পর্যায়ে যাবে না। এখন যেহেতু খারাপ সময় যাচ্ছে, তাই আমরা আশা করছি এই মাসের শেষের দিকে হয়তো অবস্থার পরিবর্তন হবে। সেই সময় আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে পারবো।’

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান সরকার প্রধান। বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকারে আসার পরে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমরা শিক্ষাকে আরও বহুমুখী করে দিচ্ছি। প্রতিটি জেলায় যেমন বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। সেই সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল একটি, সেখানে আরও অনেকগুলো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। আমরা এখন প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিয়েছি।’

২০২২ সালে প্রায় চার কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৫৬ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যবই বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বোঝাটা অভিভাবকদের ওপর না, আমরা সরকারই এই দায়িত্বটা নিয়েছি। কারণ আমাদের প্রতিটি ছেলেমেয়ে লেখাপড়া শিখুক, সেটাই আমরা চাই।’

এসময় শিক্ষাবৃত্তি ও উপবৃত্তির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের দোরগোড়ায়। আমাদের ছেলেমেয়রা মেধাবী। তাদের যদি আমরা উপযুক্ত শিক্ষাটা দিতে পারি, তাহলে এই শিল্পবিপ্লবের কারণে যে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বিশ্বব্যাপী, সেটার সুযোগ তারা নিতে পারবে। তাদের সেই ধরনের প্রশিক্ষণই দিতে হবে। গতানুগতিক শুধু ডিগ্রি নিলেই হবে না, বরং কর্মসংস্থানের উপযুক্ত শিক্ষাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। সেটাই আমাদের দিতে হবে।’

বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় সরকার বৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘শুধু গতানুগতিক শিক্ষা নিলেই হবে না, সময়োপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।’

গবেষণার সরকার সবসময় গুরুত্ব দিয়ে আসছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘গবেষণা করছে বলেই বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আগে তরকারি, সবজি শীতকালেই পাওয়া যেতো, গবেষণার কারণে এখন ১২ মাসই পাওয়া যায়। সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। গবেষণার কারণে শুধু খাদ্য চাহিদা নয়, পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতেও সক্ষম হয়েছি। তাই শুধু শিক্ষা নয়, গবেষণার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।’

কৃষি গবেষণায় সাফল্য অর্জন হয়েছে বলে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘বিজ্ঞান ও মেডিকেল গবেষণায় আরও জোর দিতে হবে। কারণ মেডিকেল গবেষণাটা খুব বেশি প্রয়োজন। ঘনবসতিপূর্ণ দেশ আমাদের। সেখানে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, শিক্ষার ব্যবস্থার জন্য এটার খুব দরকার।’

প্রযুক্তি শিক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের সব কাজের একটা লক্ষ্য হলো, কিভাবে কর্মসংস্থানটা বাড়ানো যায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট যারা ক্ষমতায় এসেছিলো তারা দেশের ইতিহাস বিকৃত করেছিল। আমাদের বিজয়ের ইতিহাসটা অনেকেই জানতো না। কয়েকটি প্রজন্মতো কিছুই জানতে পারেনি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের মাধ্যমের বীরত্বগাথা জানতে পারি। সেই বিষয়টা আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে যুক্ত হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা শিক্ষার্থী, তারাইতো এই দেশের কর্ণধার হবে। মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বক্ষেত্রে জ্ঞানী ও বিজ্ঞানী হবে। সেইভাবে তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেটাই আমরা আশা করি। তাই শিক্ষার্থীরা দেশগড়ার জন্য, মানুষের কল্যাণে, দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে অবদান রাখবে- সেই চিন্তাচেতনা থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কৃতকার্য হতে পারেনি, কারণ, একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে পরীক্ষা হয়েছে। তাই এখানে শিক্ষার্থীদের কোনো দোষ নাই। আমি অভিভাবকদের বলবো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার আরও সুযোগ করে দেবেন এবং তাদের আদর ও ভালোবাসা দিয়ে…। অকৃতকার্য হওয়া কোনো অপরাধ নয়। এটা বিশ্বব্যাপী সমস্যা হচ্ছে। করোনার কারণে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আগামীতে আরও ভালোভাবে পড়াশোনা করে কৃতকার্য হবে সেই আশা পোষণ করি।’ করোনাকালীন সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে চলার অনুরোধও করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘এই অবস্থার অবশ্যই উত্তোরণ ঘটবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: