- হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর শঙ্কা
- সামান্য অর্থ বাঁচাতে গিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে উপেক্ষা করে দেশ ধ্বংস করবেন না : প্রধানমন্ত্রী
- ১৭ দিনে প্রবাসী আয় প্রায় ১৩৬ কোটি ডলার
- সাগরে মাছ ধরা ৬৫ দিন বন্ধ
- বঙ্গবন্ধু কন্যার লড়াইয়ের গল্প বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই হোক অঙ্গীকার: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী
হাফ ভাড়ার সুরাহা হয়নি, কাল সড়ক অবরোধ
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস। সকালে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠতে না উঠতেই রাজধানী ঢাকা হঠাৎ যেন থমকে গেল। মোড়ে মোড়ে শিক্ষার্থীদের স্লোগান, গাড়ির হর্ন, গন্তব্যের পথে মানুষের ছোটাছুটি, দেখতে দেখতে যানবাহনের থেমে যাওয়া, বিরাট যানজটে ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়া সড়ক, গাড়ি ছেড়ে কারো কারো রুদ্ধশ্বাস হেঁটে চলা—এই ছিল গতকাল বৃহস্পতিবারের রাজধানীর চিত্র। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া জনভোগান্তির রেশ ছিল রাত ১০টা পর্যন্ত।
মতিঝিলের শাপলা চত্বর, গুলিস্তান এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যালয় নগর ভবনের সামনের রাস্তায় ছিল নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের অবরোধ। দেড় কিলোমিটার দূরে প্রেস ক্লাবের সামনে যুবদলের কর্মসূচি। গণপরিবহনে হাফ ভাড়ার দাবিতে যাত্রাবাড়ী, রামপুরা ব্রিজ, শন্তিনগর, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ফার্মগেট, আসাদ গেট ও উত্তরায় ছিল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অবরোধ। এর আগে সকালে মিরপুর ১০ থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত রাস্তায় ছিল বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ। শেষ বিচারে ভুগেছে পুরো শহরের মানুষ।
kalerkanthokalerkanthoসিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো গুলিস্তানে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। নটর ডেম কলেজের কয়েক শ শিক্ষার্থী সকালে মতিঝিল হয়ে গুলিস্তানে দুর্ঘটনাস্থলের কাছে অবস্থান নিলে সেখানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নগর ভবনের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এতে অচল হয়ে যায় পুরো এলাকা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, দুপুরের আগেই রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১১টি মোড় চলে যায় আন্দোলনকারীদের দখলে। যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, পুরান ঢাকা বা কেরানীগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঢুকতে বা বের হতে গিয়ে যানজটে আটকে যায় মানুষ। উত্তরায় অবরোধ থাকায় টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুর থেকে ঢুকতে বা বের হতে একই অবস্থায় পড়তে হয়।
এ ছাড়া বসিলা, মোহাম্মদপুর ও ধানমণ্ডি থেকে নিউ মার্কেট বা ফার্মগেট—কোনো গন্তব্যেই ভোগান্তি ছাড়া পৌঁছা যায়নি। রাজধানীর পূর্বাংশের গুরুত্বপূর্ণ শান্তিনগর, রামপুরা ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ থাকায় পুরো ঢাকাই অচল হয়ে যায়। তিন গুণ বেশি সময় নিয়েও গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি মানুষ।
গতকাল দুপুরে গুগলের ম্যাপে মতিঝিল ও ফার্মগেটের আশপাশের সব এলাকার রাস্তাগুলো গাঢ় লাল দেখা যায়। অর্থাৎ ওই সব এলাকায় যানজট ছিল প্রচণ্ড। ফার্মগেট ও গুলিস্তানের রাস্তা বন্ধ থাকার লাল চিহ্নও ছিল গুগল ম্যাপে। পল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মিরপুর সড়ক, বিমানবন্দর সড়কেও ছিল ব্যাপক যানজট।
রাজধানীর গুলিস্তানের যানজট গিয়ে ঠেকেছিল পোস্তগোলা পর্যন্ত। সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি দুপুর ১২টায় পোস্তগোলা থেকে গুলিস্তানের উদ্দেশে আনন্দ পরিবহনের বাসে ওঠেন। আড়াইটার দিকে তিনি গুলিস্তানে এসে নামেন। অন্য সময়ে এই পথ আসতে তাঁর সর্বোচ্চ আধাঘণ্টা সময় লাগত।
রাজধানীর উত্তরা থেকে মহাখালীতে দুই ঘণ্টায় আসেন আফসার উদ্দিন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে জানলে ঘর থেকেই বের হতাম না। দুপুর ১২টার সময় একটা কাজে আমার মহাখালী যাওয়ার কথা। পৌঁছেছি দেড়টায়। ফলে কাজটাও হলো না। যাওয়া-আসা মিলে চার ঘণ্টা বাসে বসে থাকলাম।’
এয়ারপোর্ট-গুলিস্তান পথে চলাচলকারী বাসের চালক মো. হাছান বলেন, ‘সারা দিনে যেখানে চার ট্রিপ হয়, আজ দুই ট্রিপ দিতে গিয়েই জান বেরিয়ে গেছে। সকালে প্রথম ট্রিপ নিয়ে গুলিস্তানে আসছি। এরপর আর এই এলাকা থেকে বের হতেই পারিনি। সন্ধ্যার সময় আব্দুল্লাহপুর আসলাম। অনেক দিন এমন যানজটে পড়ি নাই।’
উবার চালক সাইদুল ইসলাম গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সকালে মিরপুর থেকে একটি ট্রিপ নিয়ে গুলশানে গেছি। এরপর মতিঝিলে একটি ট্রিপ পাই। কিন্তু যে যানজটে পড়লাম, বাধ্য হয়ে যাত্রী নেমে গেলেন। আমিও গাড়ি ঘুরিয়ে অনেক কষ্টে মিরপুরে চলে এসেছি। দিনটাই মাটি হয়ে গেল।’
রাজধানীর শ্যামলী থেকে কাঁঠালবাগান পর্যন্ত যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে গৃহিণী আইরিন আক্তারের। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সকালে এক আত্মীয়কে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। দুপুর ১২টায় ফেরার সময় বিপত্তিতে পড়লাম। প্রথমে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেছিলাম। আসাদ গেটে এসে প্রায় এক ঘণ্টা আটকে ছিলাম। এরপর বাধ্য হয়ে নেমে গেলাম। হেঁটে সংসদ ভবনের কোনায় গিয়ে রিকশায় করে বাসায় পৌঁছাই।’
রাজধানীতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়ক অবরোধ শুরু করে সকাল ১১টা থেকে। ফলে যাঁরা খুব সকালে অফিসে গেছেন তাঁরা প্রতিদিনের স্বাভাবিক যানজট পেয়েছেন। কিন্তু অফিস, ব্যবসাসহ নানা কাজে যাঁরা ১১টার পর বের হয়েছেন গতকাল তাঁরাই বেশি ভুগেছেন। সকাল ১১টা থেকে প্রায় দুপুর ২টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করে রাখে। আর এর রেশ গিয়ে ঠেকেছিল রাত পর্যন্ত। বিকেলে সবাই যখন অফিস থেকে বের হয়েছেন, তখন যানজটের মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
গতকাল মোটরসাইকেলচালকদেরও বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। সাধারণত যানজট থাকলেও অল্প জায়গা দিয়েই মোটরসাইকেল চলে যায়। কিন্তু গতকাল সে অবস্থাও ছিল না। পাঠাও চালক আবদুর রহমান বলেন, ‘হাইকোর্ট থেকে বারিধারায় আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে না। কিন্তু আজ বিকেলে পৌনে দুই ঘণ্টা লেগেছে।’
গতকাল বিকেলে বেইলি রোডে দাঁড়িয়ে কথা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মো. ছানাউলের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ যে অবস্থা, মালিকের জমার টাকাই ওঠেনি। যেদিকে যাই সেদিকেই যানজট। দুপুরে তো অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে ছিলাম। যাত্রী উঠিয়ে যানজটে বসে থেকে কী লাভ? এভাবে চলতে থাকলে সিএনজি চালানোও কষ্টকর হয়ে যাবে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং দুর্ঘটনার কারণে আমাদের সাধারণ সেবা, অর্থাৎ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিঘ্নিত হচ্ছে। সংকটের কারণে আমরা রাস্তা বন্ধ করে বিকল্প রাস্তা দিয়ে নাগরিকদের নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করছি। তবে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে।’
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: