পথে পথে ভোগান্তি, তবুও বাড়ি ফিরতে মরিয়া মানুষ
মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে চলমান লকডাউন তথা বিধিনিষেধ শিথিলের পর বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। পথে নানা ভোগান্তি আর ঝক্কি-ঝামেলা থাকলেও যেন বাড়ি ফেরার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে মানুষের মধ্যে। নানা ভোগান্তি মাথায় রেখেই স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ। ঘরে ফেরা এসব মানুষের কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন আবার কেউ মানছেন না।
করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এর ফলে মহাসড়কও আগের ব্যস্ত চেহারায় ফিরে গেছে।
গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানতে অর্ধেক সিট খালি রাখতে দেখা গেছে। ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেশি থাকায় এবং যানজটের কারণে মহাসড়কে গাড়ি আটকা পড়ায় যাত্রীদের বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে টার্মিনালে বা রাস্তায়৷ কমলাপুর রেল স্টেশনের ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। কমলাপুরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেলেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই বাস কাউন্টারগুলোতে। যে যেভাবে পারছেন বাড়ি ফিরছেন।
গাবতলী থেকে যারা বাড়ি যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যায়নি। যাত্রীদের ভিড়ের কারণে সেখানে নেই শারীরিক দূরত্ব। দূরপাল্লার বাসে দুই সিটে একজন করে নেয়া হলেও ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসে মানা হচ্ছে না এই দূরত্ব। এসব যানে গাদাগাদি করে রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও নানা ভোগান্তির কথা জেনেও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়ায় ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। ফলে সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা হচ্ছে না কোথাও। একই চিত্র লঞ্চ ও ফেরিতে। তবে ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা গেছে।
শনিবার সকালে গাবতলী বাস কাউন্টারে গিয়ে মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সকাল সাড়ে আটটার মধ্যেই বাস টার্মিনালটিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে। সেখানে দেখা যায় কেউ ব্যাগ হাতে ছুটছেন বাসের টিকিট কাটতে আবার কারও মাথায় কিংবা পিঠে ব্যাগ ঝুলছে। কেউ কেউ শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে ভিড় করছেন সেখানে। বাস কাউন্টারগুলোর সামনে অন্যান্য সময় পরিবহন শ্রমিকরা ডাকাডাকি করলেও ঈদের সময় তেমনটি হচ্ছে না। যাত্রীরা ব্যাগ নিয়ে টিকিটের আশায় এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছেন। কিন্তু পাচ্ছেন না কাঙিক্ষত টিকিট। আবার যারা টিকিট কেটেছেন তাদের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। মহাসড়কে যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও ভোগান্তি মাথায় নিয়েই ঢাকা ছাড়ছেন মানুষ।
রংপুরে যাওয়ার জন্য কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন রফিকুল। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন হলো বাড়ি যাওয়া হয় না। এবার করোনার ঝুঁকি থাকলেও বাড়ি যাচ্ছি। অনেক কষ্ট করে টিকিট পেয়েছি। কিন্তু কাউন্টারে এসে দেখি বাস নেই। যানজটে নাকি আটকা পড়েছে। বাস পেতে নাকি আরও ঘণ্টাপাঁচেক সময় লাগবে। পথে যে যানজটের কথা শুনছি বাড়ি যে কখন পৌঁছবো কে জানে।’
শুধু রফিকুলই নন, প্রতিটি বাস কাউন্টারে বাসের জন্য হাজারো মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
গাবতলী ছাড়াও মহাখালী, সায়েদাবাদসহ বেশিরভাগ টার্মিনালে দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে মিলছে না টিকিট। ফলে টিকিট ছাড়াই কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিয়ে যাত্রী পরিববহন করছে বিভিন্ন পরিবহন। অনেকে বাস না পেয়ে ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার ও ব্যক্তিগত গাড়িতে ঠাসাঠাসি করে যাতায়াত করেছে।
সড়কের পাশাপাশি নৌ-পথে রয়েছে ঘরমুখো মানুষের ঢল। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই বাড়ি ফিরছেন তারা। সদরঘাট থেকে লঞ্চে, শিমুলিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে করে যে যেভাবে পারছেন ঢাকা ছাড়ছেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরমুখো মানুষের চাপে রাজধানী গাবতলী, সাভার, এয়ারপোর্ট, কাকলী, বনানী, বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, সাইনবোর্ড, মাওয়া সড়ক, আব্দুল্লাহপুর এর আশপাশের সড়কসহ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো যাত্রী।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: