ইন্টারনেট
হোম / আইন-আদালত / বিস্তারিত
ADS

মুনিয়া হত্যা মামলা আবারও মিথ্যা প্রমাণিত হলো

19 October 2022, 11:38:02

রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় তার বোন নুসরাতের করা দ্বিতীয় মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ সাতজন।

পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়।

গত মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তে হত্যা বা ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা খুঁজে না পাওয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিসহ সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, মুনিয়ার বোন নুসরাতের করা ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’র প্রথম মামলাতেও পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন এবং আদালত থেকে খালাস পান বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার বলছেন, এই মামলায় যে কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছিল, সবাইকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, এখানে দুটি অভিযোগ আছে। একটি হচ্ছে ধর্ষণ, আরেকটি হত্যা।

মোহাম্মদ সরোয়ার বলেন, ‘এখানে ধর্ষণের ঘটনায় আমরা প্রমাণ পাইনি, কারণ হচ্ছে দুজন অ্যাডাল্ট ছেলেমেয়ে, তাদের দুজনের সম্মতিতেই এক জায়গায় ছিল, এক জায়গায় অবস্থান করেছে, এই মর্মে আমরা তথ্যপ্রমাণ পেয়েছি। আর হত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। কারণ এখানে সুইসাইডের ঘটনা ঘটেছে। এখানে কোনো প্ররোচনার ইস্যুটাও আসেনি।’

পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, বুধবার মুনিয়া হত্যা মামলার সব আসামির খালাস চেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে পিবিআই।

গত বছরের ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতেই তার বোন নুসরাত জাহান গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে করা এ মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে ওই বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। পরে গত বছরের ১৭ আগস্ট গুলশান থানার ওসি আবুল হোসেনের দাখিল প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত বছরের ১৮ আগস্ট ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী সায়েম সোবহান আনভীরকে মামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো যৌক্তিক কারণ না থাকায় তাকে মুক্তি দেন। সেই সঙ্গে বাদী নুসরাতের করা পুলিশি প্রতিবেদন যৌক্তিক না হওয়ায় আপিল খারিজ করে দেন আদালত।

আত্মহত্যায় প্ররোচনার প্রথম মামলাটি খারিজ হলে নুসরাত বাদী হয়ে মুনিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে আরেকটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করেন। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ আটজনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়। এরপর আদালত গুলশান থানায় মামলাটি জবানবন্দি রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় পিবিআইকে।

মামলায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার স্ত্রী আফরোজা সোবহান ও সায়েমের স্ত্রী সাবরিনাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- সাইফা রহমান, ফারিয়া মাহবুব, শারমিন ও ইব্রাহিম আহমেদ। পরে এ মামলায় সাইফা ও ফারিয়াকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। অবশেষে প্রায় এক বছর দীর্ঘ তদন্ত শেষে আসামিদের মুক্তির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। এছাড়াও মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই জানায়, মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তুহিন হাওলাদার বলেন, সায়েম সোবহান আনভীর একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এবং দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। দেশে-বিদেশে তার রয়েছে ব্যাপক খ্যাতি ও সুনাম। তার সুনাম ক্ষুণ্ন করার এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবসার ক্ষতি করার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে একটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত প্রথম একটি মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

তিন মাসের দীর্ঘ তদন্তে পুলিশ অভিযুক্ত সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সমর্থনে কোনো প্রমাণ পায়নি। পুলিশ রিপোর্ট পেয়ে আদালতের নির্দেশে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার পর ষড়যন্ত্রকারীরা দ্বিতীয় মামলায় সাজান। সেটাও মিথ্যা প্রমাণিত হলো।

তিনি বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রে বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার সঙ্গে সরকার ও সরকারবিরোধী শক্তিশালী দেশি-বিদেশি মহল যোগ দিয়েছে। যারা দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়ন চায় না, তারা এসব ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপবাদ ও ভুল তথ্য ছড়ায়। বাদী নুসরাতও সরাসরি এসব টকশো ও অনলাইন মিটিংয়ে অংশ নেন এবং বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়ান। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন, আদালতের খালাসের আদেশ ও পিবিআইয়ের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে এসব ষড়যন্ত্র মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

প্রথম মামলায় আদালতের রায়ের পর উপস্থিত আইনজীবীরা বলেন, এই আদেশের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য যার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তিনি আসলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এখানে আত্মহত্যার প্ররোচনার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন নিজেই মামলাটি তদন্ত করেছেন। দীর্ঘ তিন মাস তদন্তের পরও পুলিশ বাদীর অভিযোগের সমর্থনে কোনো প্রমাণ পায়নি। সেইসঙ্গে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে বলা হয়, অভিযুক্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার জন্য দায়ী করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আদালতে পুলিশের করা প্রথম মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্তকালে সংগৃহীত আলামত, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন। ঘটনাস্থলে ফ্ল্যাট মালিকসহ অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে। এমনকি তদন্ত কর্মকর্তা মুনিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ডে গিয়েও তদন্ত করেছেন। এসব তদন্তের সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা ভিকটিমদের অতীত জীবনের তথ্যও সংগ্রহ করেন। সার্বিক তদন্তকালে, বাদী কর্তৃক ভিকটিমকে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো প্রমাণ পাননি। এমনকি বাদী নিজেও তদন্ত কর্মকর্তার সামনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। পুরো তদন্ত প্রক্রিয়া তদারকি করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ প্রতিবেদন পাওয়ার পর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতও তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করতে সময় নেন। এরপর তিনি আসামিদের খালাসের আদেশ দেন।

এদিকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের পর তার বড় বোন নুসরাত জাহান একটি বিলাসবহুল পাজেরো জিপে করে কয়েকজন আইনজীবীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ গুলশান থানায় হাজির হন। তারা পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং প্রাথমিক তদন্ত না করেই তাড়াহুড়ো করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা করেন। প্রাথমিক তদন্ত ছাড়াই বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির বিরুদ্ধে মামলা নেয় পুলিশ। মামলার পরপরই বাদী ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন টেলিভিশন টকশো ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে সম্পৃক্ত করে ষড়যন্ত্রমূলক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিতে থাকে।

কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই অভিযুক্ত সায়েম সোবহান মিডিয়া ট্রায়ালের মুখোমুখি হন। মুনিয়ার চ্যাটের কয়েকটি স্ক্রিনশট সামজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। মুনিয়ার এসব স্ক্রিনশটের মধ্যে বিভিন্নজনকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা দাবি করার কিছু স্ক্রিনশটও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া মামলার বাদী নুসরাত ও তার বোন মুনিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যক্তির চ্যাট ও ফোন কল রেকর্ড পাওয়া যায় যা বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের মূল প্রমাণ।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: