ইন্টারনেট
হোম / অর্থনীতি / বিস্তারিত
ADS

ঋণের সুদ নিচ্ছে ৩২ শতাংশ!

12 May 2022, 5:30:44

নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে যেন চলছে ‘মহাজনি ব্যবসা’। আইপিডিসি ফাইন্যান্স ‘ডানা’ নামক একটি পণ্যে ঋণের সুদ আরোপ করেছে দৈনিক ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে গ্রাহক দিনে ১ হাজার টাকা খাটালে আইপিডিসি সুদ কাটে ০.৮৯ পয়সা। যা বছর শেষে গিয়ে ঠেকে ৩২ শতাংশে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।

এখন আইপিডিসিকে অনুসরণ করে অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানও দৈনিক ভিত্তিতে সুদ আরোপ করার চেষ্টা করছে। ভুক্তভোগীদের আশঙ্কা-এটি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে ঋণগ্রহীতার ‘গলায় দড়ি প্যাঁচানোর’ নামান্তর হবে। শুধু তাই নয়, দৈনিক ভিত্তি ছাড়াও ইতোমধ্যেই আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ আরোপ করেছে।

এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে কেউ টিকে থাকতে পারবে না। এটা এক ধরনের ডাকাতি। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করা জরুরি।

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী এবং নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ৩২ শতাংশ সুদ! এটা কী করে সম্ভব? এছাড়া ১৭-১৮ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে কেউ ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও বিপদে আছি। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে যে সুদে ঋণ নিয়েছি, কাটা হয়েছে তার থেকে বেশি। ফলে নির্ধারিত সব কিস্তি দেওয়ার পরও কিস্তি শেষ হয়নি।’ তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন-প্রকৃত ব্যবসায় মুনাফা কত শতাংশ হয়? বর্তমানে কোনো ব্যবসায় ১৭-১৮ শতাংশ লাভ হয় না। তাহলে এ ধরনের উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা কী করবে।

তিনি আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে-শুধু উচ্চ সুদের কারণেই বছরের পর বছর কিস্তি পরিশোধ করেও মূল ঋণ পরিশোধ হয় না। এতে এক পর্যায়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হয়। এমনকি শেষ পর্যন্ত আর ভিটেমাটিও থাকে না। সাধারণত যারা ঠেকায় পড়ে তারা উচ্চ সুদে ঋণ নেয়। বিশেষ করে গ্রামের গরিব মানুষ। তাদের ওপর এতদিন গ্রামীণ ব্যাংক ও এনজিওগুলো শোষণ করত। এখন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সে পথে হাঁটছে। এটা দুঃখজনক। উচ্চ সুদের এই কারবার জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করার পরামর্শ দেন তিনি।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড বিভিন্ন ঋণের সর্বোচ্চ সুদ কেটেছে ১৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহনির্মাণ ঋণেও সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ সুদ কেটেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এছাড়া ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবসা-বাণিজ্য ঋণে সর্বোচ্চ সুদ কাটা হয়েছে ১৮ শতাংশ। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি শিল্প ঋণে ১৮ শতাংশ এবং গৃহনির্মাণ ঋণেও কেটেছে ১৭ শতাংশ। এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প এবং গৃহনির্মাণ ঋণে যথাক্রমে সর্বোচ্চ সুদ কাটা হয়েছে ১৮ শতাংশ। ফার্স্ট ফাইন্যান্সেরও বিভিন্ন ঋণে সর্বোচ্চ সুদ ১৮ শতাংশ।

ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ব্যবসা-বাণিজ্য ঋণের সর্বোচ্চ সুদ কেটেছে ১৮ শতাংশ। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসিএল) ব্যবসা-বাণিজ্য ঋণে ১৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ঋণেও কাটা হয়েছে ১৭ শতাংশ। পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, গৃহনির্মাণসহ বিভিন্ন ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ১৭ শতাংশ।

একইভাবে ফিনিক্স ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, গৃহনির্মাণসহ বিভিন্ন ঋণের সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ পর্যন্ত সুদ কেটেছে। মাইডাস ফাইন্যান্স ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ঋণের সর্বোচ্চ সুদ কেটেছে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ। এছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ঋণে সর্বোচ্চ সুদ কেটেছে ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে সুদহার বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১ জুলাই থেকে এসব প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। আর ঋণ দেবে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ সুদে। এই সীমা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্যই তার আগে পরিদর্শন করে দেখা হবে যে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান উল্লিখিত সীমা অতিক্রম করেছে। এরপর ব্যবস্থা।সূত্রঃ যুগান্তর

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: