- হিজবুল্লাহর রকেটের আঘাতে কাঁপল ইসরাইলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর
- সরকার মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর: ড. ইউনূস
- শীত কবে আসবে, জানালো আবহাওয়া অফিস
- পালিয়ে দিল্লি গেলেন পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মনিরুল
- আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ২৫ হাজার কোটি টাকা
- শেরপুরে বন্যায় ৮ জনের প্রাণহানি
- সাবের হোসেন চৌধুরীর ১০ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ
ভারী যান নিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ
মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার পর নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে আপাতত ভারী যানবাহন নিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পদ্মা নদীতে স্রোতের তীব্রতা না কমা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌরুটে ভারী যানবাহন (যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী) বহনকারী ফেরি চলাচল করতে পারবে না। শুধু ছোট হালকা যানবাহন (প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুল্যান্স ও মাইক্রোবাস) বহনকারী ফেরি চলাচল করবে।
বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ভারী যানবাহন (যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী) মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং চাঁদপুরের হরিণা ও শরীয়তপুরের আলুবাজার নৌ রুটে ফেরিতে চলাচল করবে। গতকাল মঙ্গলবার থেকেই এ নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী গতকাল মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিআইডাব্লিউটিসি ও বিআইডাব্লিউটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তদন্ত কমিটির সুপারিশ নিয়ে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের মর্যাদার স্থাপনা, আত্মসম্মানের অনুভূতি। এ সেতুর পিলারের সঙ্গে ফেরির সংঘর্ষের ঘটনায় আমরা বিব্রত ও দুঃখিত। এটি আমাদের জন্য উৎকণ্ঠার বিষয়। পদ্মা সেতুতে আঘাত মানে আমাদের হৃদয়ের মধ্যে আঘাত। বারবার হৃদয় ক্ষত হোক, সেটা চাই না। পদ্মা সেতু আমাদের চ্যালেঞ্জ, মানমর্যাদার স্থাপনা।’
ওই বৈঠকের আগে রবিবার রাতে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গে ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিআইডাব্লিউটিসি। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মাত্র ১৮ দিনের ব্যবধানে সেতুর পিলারে দুইবার ফেরির ধাক্কা লেগেছে। প্রথমে ১০ ও পরে ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা লাগে। এ নিয়ে তিনবার সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটল। যেখানে ফেরি চলাচলের জন্য সর্বোচ্চ ৭৬ মিটার জায়গার প্রয়োজন সেখানে পদ্মা সেতুর প্রতিটি পিলারের মধ্যে ১৫০ মিটার দূরত্ব্ব রাখা হয়েছে। যদিও এমন ধাক্কায় সেতুর বড় ধরনের ক্ষতি হওয়া প্রায় অসম্ভব। তবুও কয়েকবারের ধাক্কায় অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, এটা শুধুই দুর্ঘটনা কি না? ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কার পর করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বলছে, ফেরির মাস্টার ও সুকানির অসতর্কতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এবারের ধাক্কার পর গঠিত তদন্ত কমিটি এখনো কাজ করছে।
এত অল্প সময়ের মধ্যে দুই বার সেতুর পিলারে ধাক্কার ঘটনা কতটা স্বাভাবিক—এমন প্রশ্নের জবাবে সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ধাক্কার ঘটনাটা ইচ্ছাকৃত নাও হতে পারে। তাঁর মতে, নৌযান চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে। যেখানে দেশের অন্য সেতুগুলোতে প্রতি পিলারের দূরত্ব ১০০ মিটারের বেশি না। সেখানেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না।
ফেরিঘাটের পথ পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা বিআইডাব্লিউটিএর কাজ। তারা মতামত চাইলে আমরা কথা বলব, তার আগে না।’
এদিকে ফেরির ধাক্কায় সেতুর ১০ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় রো রো বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ফেরির মাস্টার মো. দেলোয়ারুল ইসলাম ও হুইল সুকানি মো. আবুল কালাম আজাদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিআইডাব্লিউটিসি। পিলারে আঘাতের ঘটনায় সেতু কর্তৃপক্ষ সোমবার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুর কাদের এ জিডি করেন।
জিডিতে বলা হয়, একাধিকবার বিআইডাব্লিউটিসির ফেরি সেতুর পিলারে আঘাত করেছে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার বিআইডাব্লিউটিসি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মৌখিক ও লিখিতভাবে সাবধানতার সঙ্গে ফেরি চালানোর জন্য অনুরোধও করা হয়। এ ঘটনা বারবার ঘটায় সেতুর নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তা ছাড়া ফেরিটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও অসংখ্য প্রাণঘাতীর ঘটনাও ঘটতে পারে। ফেরির ফিটনেস ছিল কি না, চালকের যথাযথ যোগ্যতা, শারীরিকভাবে অসুস্থতা, অবহেলা, অদক্ষতা ছিল কি না, তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।
এর আগে গত ২৩ জুলাই সকালে বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসার পথে রো রো ফেরি শাহজালাল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে আঘাত করে। ওই ঘটনার তিন দিন আগে রো রো ফেরি শাহ মখদুমও পদ্মা সেতুর ১৬ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয়।
সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগা নিয়ে বিআইডাব্লিউটিসির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলছেন, অসতর্কতার কারণে এগুলো ঘটছে। তা ছাড়া পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের টানে অনেক সময় ফেরি নিয়ন্ত্রণে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আবার এই পথে অনেক পুরাতন ফেরিও চলে। ফলে সেসব ফেরির যন্ত্রাংশ যেকোনো সময় বিকল হয়ে ফেরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
শিমুলিয়া ঘাটকে মাওয়া পুরাতন ফেরিঘাটে সরিয়ে নেওয়ার জন্যই বারবার সেতুর পিলারে এমন ধাক্কা দেওয়া হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। ফেরিঘাটসংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাওয়া থেকে বাংলাবাজার যেতে ফেরির জ্বালানি খরচ কম লাগবে। আবার ঘাট সরিয়ে অন্য জায়গায় করতে গেলে নতুন করে শতকোটি টাকার প্রকল্প হবে।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: