ইন্টারনেট
হোম / খেলাধুলা / বিস্তারিত
ADS

এশিয়া কাপ যেন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ!

4 September 2022, 11:20:20

৬৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কাকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কা। মেন্ডিস ৩৬ ও নিশাঙ্কা ফেরেন ৩৫ রানে। শ্রীলঙ্কা জেতে ৪ উইকেটে। ছবি : এএফপি

‘বিরাট ভাই সেরা খেলোয়াড়। ’

নাহ, বিরাট কোহলিকে তাঁর নিজ দলের কারো দেওয়া স্বীকৃতি এটি নয়। ভারত-পাকিস্তানের আরেকটি আগুনে লড়াইয়ের গনগনে আবহে দুই দলের চির বৈরিতায় শীতল পরশ বুলিয়ে দেওয়া কথাটি শোনা গেল হারিস রউফের মুখেই। পাকিস্তানি পেসার এই ঘোষণাই যেন দিয়ে রাখতে চাইলেন যে দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ক যতই উত্তপ্ত হোক না কেন, ক্রিকেটারদের সেটি তেমন ছুঁয়ে যায় না।

বরং মাঠের লড়াই শেষে ভৌগোলিক সীমানার দেয়ালটাও তুলে ফেলেন ক্রিকেটাররা। তাঁরা একে অন্যের দিকে বাড়িয়ে দেন বন্ধুত্বের হাত। এমনই যে সেই কবে চেয়ে রাখা কোহলির সই করা জার্সিটা রউফের হাতে এসেছে কিনা গত ২৮ আগস্ট রাতে। সেদিনই তো হার্দিক পাণ্ডের ব্যাটে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়ে এবারের এশিয়া কাপ শুরু করে রোহিত শর্মার ভারত।

বাবর আজমের পাকিস্তানের জন্য আজকের সুপার ফোরের ম্যাচটি তাই এক অর্থে হয়ে উঠেছে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সমতা ফেরানোর লড়াইও। বহুজাতিক আসরে ‘সিরিজ’ শব্দটি এসে গেল কেন? না এসেই বা উপায় কী! দুই দেশের রাজনৈতিক বিরোধের কারণে দ্বিপক্ষীয় লড়াইয়ে তারা মুখোমুখি হয় না বহু বছর ধরেই। দেখা যা হওয়ার, তা হয় শুধু আইসিসি আর এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) টুর্নামেন্টেই।

দর্শকদের জন্য পরম আরাধ্য এই ম্যাচটিকেই আবার ক্রিকেট বাণিজ্যের শেষ কথা বলেও ধরা হয়। স্রেফ এই একটি ম্যাচ থেকেই যে এসিসির মতো সংস্থার সারা বছরের আয়ের সিংহভাগ এসে যায়। তাই এশিয়া কাপ মানেই যত বেশিবার সম্ভব ভারত-পাকিস্তানকে মুখোমুখি করানোর ছক। এবার যেমন ছক সাজানোই হয়েছে এভাবে যেন আসরে এই দল দুটো একে অন্যের বিপক্ষে খেলতে পারে তিন-তিনবার। গ্রুপ পর্বে একবার দেখা হয়ে গেছে। আজ লড়াই সুপার ফোরের। কল্পনায় আরেকটি ভারত-পাকিস্তান লড়াই এঁকে রাখা হয়েছে ১১ সেপ্টেম্বরের ফাইনালেও। যদিও এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপে ১৪ বারের চেষ্টায় ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হয়নি একবারও। অথচ এই দুই দলের কোনো না কোনো একটি প্রতিবারই ফাইনাল খেলেছে। সর্বোচ্চ সাতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ফাইনাল খেলেছে ১০ বার। সর্বোচ্চ ১১ বার ফাইনালে গিয়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। দুইবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া পাকিস্তান খেলেছে চারটি ফাইনালে। ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতেই হওয়া ওয়ানডে সংস্করণেও ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের স্বপ্ন ভেস্তে দিয়েছিল বাংলাদেশ। শিরোপার খুব কাছে গিয়েও হারা বাংলাদেশ অবশ্য এবার প্রথমবারের মতো হওয়া টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্বেই। সেটিই হওয়ার কথা। কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে যে তাদের অবস্থা বড্ড নাজুক!

তবে এই সংস্করণের দুই পরাশক্তি নিজেদের দৌড়টা একেবারে শেষ পর্যন্তই দেখছে। পাকিস্তানের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান তো আরেক ধাপ এগিয়ে ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের আগাম ছবিই দেখে ফেলেছেন। না হলে সুপার ফোরের লড়াই সামনে রেখে কেন তাঁর মুখে শোনা যাবে যে, ‘বেস্ট অব থ্রি ফাইনাল’। অবচেতনে রাহুল দ্রাবিড়ও কি ফাইনালে নিজেদের দেখে ফেলছেন না? ভারতীয় দলের হেড কোচ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, ‘এই এশিয়া কাপে আমাদের আরো চারটি ম্যাচ বাকি, যা বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতেও ভীষণ সহায়ক হবে। ’ সুপার ফোরের তিনটি ম্যাচের সঙ্গে ফাইনাল ধরলে চারটি ম্যাচই তো হয়। চতুর্থ ম্যাচে পাকিস্তানকে পেলে এশিয়া কাপটি হয়ে উঠবে তিন ম্যাচের দ্বিপক্ষীয় সিরিজও।

সেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগে চোটজর্জর দুই দলই। দিক কয়েক আগেই অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা ছিটকে পড়েছেন এশিয়া কাপ থেকে। জসপ্রিত বুমরাহ চোটে এখানে আসতেই পারেননি। যেমন গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ব্যাটিং মেরম্নদণ্ড ভেঙে দেওয়া পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদিকে এই এশিয়া কাপে পায়নি পাকিস্তানও। ভারতের বিপক্ষে সুপার ফোরের লড়াইয়ের আগে চোটে পড়েছেন আরেক পেসার শাহনেওয়াজ দাহানিও। তবে ২৮ আগস্টের ভারত ম্যাচে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষিক্ত নাসিম শাহ গতির ঝড় তুলেছেন। আজ তাঁদের সঙ্গে হারিস রউফ আর হাসান আলীরা তো থাকছেনই।

প্রশ্ন উঠল যে এই পাকিস্তান দলের পেস আক্রমণ ভারতের চেয়ে এগিয়ে কি না? রাহুল দ্রাবিড় অবশ্য জবাবটি দিলেন হেসেই, ‘বোলিংয়ে গতি ১৪৫ হোক আর ১২৫, দিনের শেষে বোলারের বোলিং বিশ্লেষণই আসল। বোলার আপনাকে কী ফল দিল, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, পাকিস্তানের পেস আক্রমণ অবশ্যই ভালো। ভালো আমাদেরটাও। ’ আগের দুই ম্যাচে যে চেহারায় দেখা দিয়েছেন, তাতে পাকিস্তানের পেসারদের রণপরিকল্পনা এখন সাজছে সূর্যকুমার যাদব ও হার্দিক পাণ্ডেকে ঘিরেও। উইকেট তুলে নেওয়ার চেষ্টার চেয়ে যাঁদের বিপক্ষে ডট বল করে যাওয়াকেই সাফল্যের শর্ত ধরছেন রউফ, ‘আমি উইকেট নেওয়ার কথা ভাবছি না একদমই। আমি বরং ভাবছি যথাসম্ভব ডট বল করে যাওয়ার কথা। কারণ এই সংস্করণে ব্যাটারকে যত বেশি ডিফেন্ড করাতে পারবেন, উইকেট তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে ততই। ’

সমতা ফেরানোর ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় ‘বিরাট ভাইকে’ও নিশ্চয়ই ডট বল খেলিয়ে ফাঁদে ফেলতে চাইবেন রউফ!

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: