ইন্টারনেট
হোম / খেলাধুলা / বিস্তারিত
ADS

আজ বাংলাদেশের সামনে ইংল্যান্ড

27 October 2021, 10:31:59

মুশফিকুর রহিমের সুবাদে তুমুল আলোচিত ‘আয়না’ শব্দটি সুপার টুয়েলভ পর্বে আরেকটি ম্যাচ খেলতে নামার আগেও এসে যাচ্ছে। অপ্রাসঙ্গিকভাবে নয় অবশ্য। প্রতিপক্ষ যখন ইংল্যান্ড, তখন চাইলে একই সঙ্গে দুই আয়নায়ই চোখ রাখা যায়।

একটি মনের আয়না, আরেকটি চোখের। প্রথমটিতে দেখা যায় পেছনের ছবি। আর পরেরটিতে বর্তমানের। বাংলাদেশের জন্য এই দুই আয়নার ছবিতে যেন দুই মেরুর দূরত্ব। মনের আয়নায় সোনালি অতীত দেখা গেলে, চোখের আয়নায় ফুটে উঠছে বিপর্যস্ত বর্তমানই।

পেছনে আছে ২০১১ ও ২০১৫-এর ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারের হতাশায় বিলীন করার ছবি। আর এখন দেখা যাচ্ছে যে ইংল্যান্ডকে, সেটি বাংলাদেশের ফাস্ট বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের চোখে ‘অদম্য’ এক দলের প্রতিচ্ছবিই। এমন দল যখন সামনে, তখন ক্যাচ ফেলে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের বেদনায় মুষড়ে পড়া দলকে বাইরের সমালোচনার উত্তাপ এড়ানোর চেষ্টাও করতে হচ্ছে।

বাইরের সমালোচনা তাঁদের ছুঁতে পারছে না বলে যতই দাবি করা হোক না কেন, ভেতরের খবর সে রকম নয়। বাইরের পৃথিবীরও তা অজানা নয়। নয় বলেই জস বাটলারের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এক ইংলিশ সাংবাদিক নানা কারণেই চাপে থাকা বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুললেন। জানতে চাইলেন আগের তুলনায় মাহমুদ উল্লাহরা এবার সহজ প্রতিপক্ষ কি না?

ইংল্যান্ডের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জবাবে যা বললেন, সেটিও বাংলাদেশ শিবিরে চনমনে হাওয়া বইয়ে দিতে সক্ষম, ‘না, না, একদমই তা নয়। আমরা বরং বাংলাদেশকে তাদের সেরা চেহারায় দেখারই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’ আজ আবুধাবির শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা) শুরু হতে যাওয়া ম্যাচ সামনে রেখে সেখানকার উইকেটও বাংলাদেশের সম্ভাবনায় আগাম সতর্ক রাখছে ইংলিশ শিবিরকে।

সদ্যঃসমাপ্ত আইপিএলেরও বেশ কিছু ম্যাচ হয়েছে সেখানে। তবে খুব বেশি রানের দেখা পাওয়া যায়নি। বরং ধীরগতির উইকেটে ব্যাটসম্যানদের সংগ্রামই দেখা গেছে বেশি। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যও এ রকম উইকেটেই, যেখানে স্পিনাররা ব্যাটসম্যানদের টুঁটি চেপে ধরতে পারেন। বাংলাদেশেরও তাই প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা মাথায় রাখছে ইংলিশরা। বাটলারের কথা তো বোঝাচ্ছে সে রকমই, ‘সম্প্রতি দেশের মাটিতে ওদের রেকর্ড বেশ ভালো। এখানেও (আবুধাবিতে) ওরা প্রায় একই রকম কন্ডিশন পাচ্ছে। তাই আমরাও ওদের কাছ থেকে দারুণ পারফরম্যান্সই আশা করছি। আশা করছি বেশ কঠিন লড়াই-ই হবে।’

এই লড়াইয়ে নামার আগে বাংলাদেশের স্পিনারদের নিয়েও আলাদা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। বাটলার যেমন নেটে বাঁহাতি স্পিনারদের বিপক্ষে অনেক সময় ব্যাটিংয়ে পার করেছেন। কারণ স্পিনবান্ধব উইকেট পেলেই বাঁহাতি স্পিনারের হাতে নতুন বল তুলে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। যদিও স্পিনসজ্জায় কম সজ্জিত নয় এউইন মরগ্যানের ইংল্যান্ডও। বাংলাদেশের তুলনায় বরং স্পিনবৈচিত্র্যে তাঁরা একটু এগিয়েই। লেগস্পিনার আদিল রশিদের সঙ্গে অফস্পিনার মঈন আলীর কম্বিনেশন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এই আসরেই ডুবিয়েছে ৫৫ রানে অল আউট হওয়ার লজ্জায়।

সেদিন দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২.২ ওভার বোলিং করেই ক্যারিবীয়দের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন রশিদ। ৪ উইকেট নেন মাত্র ২ রান খরচে। ১৭ রানে ২ শিকার ধরা মঈনও অবদান রাখেন দলের প্রভাববিস্তারী জয়ে। আবুধাবির উইকেট স্পিন উপযোগী হলে স্পিনারদের লড়াইও সমানে সমান হওয়ার সম্ভাবনাও। তবে ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের ক্রিকেট সাফল্যে তাদের ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসী ব্যাটিংও বারবারই প্রতিপক্ষের বিপদের কারণ হয়ে আসছে। বিশেষ করে শুরু থেকে ঝোড়ো ব্যাটিং প্রতিপক্ষের বোলিংকে এলোমেলো করে দেয় খুব সহজেই।

তাই কোচদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বোলারদের আতঙ্কিত না হওয়ার বার্তাই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফাস্ট বোলিং কোচ ওটিস গিবসন, ‘সাদা বলের ক্রিকেটটা ইংল্যান্ড এখন যেভাবে খেলছে, তাতে মরগ্যানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ওরা ইতিবাচক বিকল্পই বেছে নেয়। আমি তাই বোলার ও ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে কথা বলেছি। ইংল্যান্ডের বোলাররা সব সময়ই উইকেট নিতে চায়। ব্যাটসম্যানরাও চায় রানের চাকা সব সময়ই সচল রাখতে। বোলারদের তারা চাপে রাখতে চায়। আমাদের বোলারদেরও বলা হয়েছে ওরা যেন আতঙ্কিত না হয়। ভালো বলেও ওরা মার খেতে পারে। ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের ধরনটাই এ রকম। একই সঙ্গে আবার ওরা আপনাকে উইকেট তুলে নেওয়ার সুযোগও দেবে। তাই আতঙ্কিত না হয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী নিজের দক্ষতা মেলে ধরায় মনোযোগী থাকতে হবে।’

দুবাইয়ের আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠে গতকাল দুপুরের অনুশীলনেও প্রাধান্য পেল নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতার জায়গা, যেগুলো ইংলিশদের বিপক্ষে কাজে লাগতে পারে বলে মনে হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের। সেখানেই নেটে ব্যাটিংয়ের সময় তলপেটে বল লেগে কিছুক্ষণ কাতরালেও আজ উইকেটরক্ষক নুরুল হাসানের খেলা নিয়ে সংশয়ের কথা শোনা যায়নি। বরং যা শোনা যাচ্ছে, সেটি বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়াতে চাওয়ার আকুতিই। ওটিস গিবসন যেমন বলছিলেন, ‘একটু টেনশনের হলেও বাছাই পর্ব পেরিয়ে আমরা এখন বড় মঞ্চে। তবে এই পর্বে আমরা শুধু খেলার জন্যই খেলতে আসিনি। আমরা এখানে এই বিশ্বাস নিয়েই এসেছি যে নিজেদের দিনে আমরা হারাতে পারি যে কাউকেই।’

পারলে চোখের আয়নায়ও দৃশ্যমান হবে মনের আয়নায় থাকা পেছনের ছবি।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: