- মমতার বক্তব্যকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের হুমকি বললেন ফখরুল
- শেষ হলো ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা
- চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন শুনানি আজ
- বেনামে শেয়ার কিনে ব্যাংক দখল ঠেকানোর উদ্যোগ, নীতিমালা প্রণয়ন
- ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
- শেষ হলো ৫ দিনব্যাপী জোড় ইজতেমা
- চিন্ময়ের পক্ষে দাঁড়াননি কোনো আইনজীবী, জামিন শুনানি ২ জানুয়ারি
শঙ্কা নিয়েই শুরু অলিম্পিক
অবশেষে পর্দা উঠল করোনায় এক বছর পিছিয়ে যাওয়া টোকিও অলিম্পিকের। গতকাল টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে আতশবাজির ঝলকানি।
অ- অ অ+
বিরল এক অলিম্পিকই বটে। করোনার কারণে পিছিয়েছে এক বছর। কোনো দর্শক নেই। সরে দাঁড়িয়েছে বহু পৃষ্ঠপোষক। উদ্বোধনের এক দিন আগে বরখাস্ত অনুষ্ঠানের পরিচালক কেনতারো কোকায়াশি। অলিম্পিক আয়োজক কমিটির প্রধান সেইকো হাশিমোতোর শঙ্কা, মাঝপথে না বাতিল করতে হয় পুরো টুর্নামেন্ট! তাই বিখ্যাত সেই উক্তি ঘুরিয়ে বলতে হচ্ছে, ‘সত্যি সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই অলিম্পিক।’
এমন উদ্বেগ, শঙ্কা আর বিতর্ক নিয়েই অবশেষে গতকাল পর্দা উঠল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর। মহামারির মাঝেও ফিরে এলো বিশ্বের সেরা ক্রীড়া আসর। টোকিওর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অলিম্পিকের উদ্বোধন করলেন জাপানের সম্রাট নারুহিতো। ১৯৬৪ সালে জাপানে হওয়া অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে ছিলেন তিনি। তখন নারুহিতোর বয়স ছিল চার বছর। তবে করোনার ভয়াবহতায় এবার রাজপরিবারের সদস্যরা আসেননি স্টেডিয়ামে। আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনরা এই মহামারির মধ্যেও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। দর্শক না থাকলেও আমন্ত্রিত অতিথি, পৃষ্ঠপোষক আর আয়োজক মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক মানুষ উপভোগ করেছেন অনুষ্ঠানটা। চারবারের গ্র্যান্ড স্লামজয়ী জাপানি টেনিস তারকা নাওমি ওসাকা অলিম্পিক মশাল প্রজ্জ্বলন করার সময় করতালিতে মুখর করে রেখেছিলেন তাঁরাই।
জাপানের শিল্প-সংস্কৃতিই মূলত তুলে ধরেছেন পারফরমরারা। মিলনমেলার স্লোগান ছিল, ‘ইউনাইটেড বাই ইমোশন’। খেলাধুলার শক্তি ঐক্যবদ্ধ করতে পারে পুরো পৃথিবীকে। কঠিন এই সময়ে তাই ঐক্যের আবেগী আহবান অলিম্পিক কর্তাদের। আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ বলেছিলেন, ‘অ্যাথলেটরা কত দিন অপেক্ষা করেছেন এই মুহূর্তটার জন্য। এর আনন্দ, উত্তেজনাটাই আলাদা। এটা আশার সেই মুহুর্ত।’ কিন্তু করোনার রক্তচক্ষুতে সেই জৌলুসটা কোথায়? স্টেডিয়ামের বাইরেই গতকাল জড়ো হয়েছিল কয়েক শ প্রতিবাদকারী। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ড, ‘বন্ধ করো অলিম্পিক’।
এমনিতে অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মানে আতশবাজির রোশনাই, প্রাণের উচ্ছ্বাস আর চোখ-ধাঁধানো সব ব্যাপার। করোনার থাবায় এবার জাঁকজমক অনুষ্ঠানের উপায় ছিল না। গতকালও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন গেমসের সঙ্গে জড়িত ১৯ জন, সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ছাড়িয়ে গেছে ১০০। তাই আলোঝলমলে করতে গিয়ে সীমাটা কখনো অতিক্রম করেনি আয়োজকরা। বরং নজর কেড়েছে জাপানি নার্স ও বক্সার তাসুবাদার মঞ্চের মাঝখানে গিয়ে একাই কিছুক্ষণ দৌড়ানোটা। করোনার কারণে অ্যাথলেটদের একা অনুশীলন করাটা ফুটিয়ে তোলা হয় প্রতীকীভাবে। আনা হয় অলিম্পিক রিং, তাতে ফিরে আসে ১৯৬৪ টোকিও অলিম্পিকের স্মৃতি। অলিম্পিক রিংয়ের বৃত্তগুলো তৈরি করা হয়েছিল সেই কাঠ দিয়ে যে গাছগুলো ১৯৬৪ সালে রোপণ করেছিলেন অ্যাথলেটরা। স্টেডিয়ামের মাঝখানে ১ হাজার ৮০০ ড্রোন দিয়ে যে পৃথিবী তৈরি হয়েছিল, চোখ-ধাঁধানো ছিল সেটা।
২০৭টি দেশের ১১ হাজার ৩০০-র বেশি অ্যাথলেট ৩৩টি খেলায় এবার লড়াই করবেন ৩৩৯টি পদকের ইভেন্টে। যোগ হয়েছে পাঁচটি নতুন খেলা আর ৩৪টি নতুন ইভেন্ট।
অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া যেকোনো অ্যাথলেটের জন্য সম্মানের। করোনার কারণে এবার দলগুলো নামমাত্র অ্যাথলেটই পাঠিয়েছে টিম প্যারেডে। দলের সঙ্গে যাওয়া মাত্র ছয়জন কর্মকর্তার অনুমতি ছিল প্যারেডে অংশ নেওয়ার। সব মিলিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের ৩০ জন। অন্য অলিম্পিকে অন্তত ২০০ জন অংশ নিতেন দেশটির। ভারতের উপস্থিত ছিলেন ২৮ জন, যাঁদের ২২ জন অ্যাথলেট। সবচেয়ে বড় বহরটা ছিল জাপানের। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে খালি গায়ে প্যারেডে এসে চমকে দিয়েছিলেন টোগোর অ্যাথলেট পিটা টাওফাটোফুয়া। গতকালও মুখে মাস্ক পরে টোগোর পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে এসেছিলেন তিনি। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই কিনা ভানুয়াতুয়ার রোয়ার রিলিও রিও রি দেশের পতাকা হাতে এসেছিলেন খালি গায়ে। ইতালি ইউরো ফুটবল জিতেছে যে ডিজাইনের পোশাকে, সেই আদলে তৈরি অলিম্পিয়ানদের ট্র্যাকসুটও! তাতেও যদি সৌভাগ্য ফেরে। আর্জেন্টিনার অ্যাথলেটরা মার্চপাস্টের মাঝখানে এসে লাফঝাঁপ দিয়ে করেছেন আনন্দ উল্লাস। সবাইকে আসতে বলা হয়েছিল মাস্ক পরে। তারপরও মাস্ক ছাড়া মার্চ পাস্টে এসে বিতর্ক তৈরি করেছেন পাকিস্তান, তাজিকিস্তান আর কিরগিজস্তানের পতাকাবাহক।
বাংলাদেশের হয়ে পতাকা বহন করেছিলেন সাঁতারু আরিফুল ইসলাম। দর্শক থাকলে লাল-সবুজ পতাকাটা দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ত গ্যালারির একটা অংশ। এবার থাকল সুনসান নীরবতা। অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন ছয় বাংলাদেশি। সাঁতারে আরিফুল ইসলাম ও জুনাইয়া আহমেদ, আর্চারিতে রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী, অ্যাথলেটিকসে জহির রায়হান আর শ্যুটিংয়ে আব্দুল্লাহ হেল বাকি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের চিত্রনাট্য লিখে রাখা হয়েছিল আগেই। পরিচালক কেনতারো কোকায়াশির নেতৃত্বে প্রস্তুতিও চলছিল পুরোদমে। কিন্তু উদ্বোধনের এক দিন আগে বরখাস্ত হন পেশায় স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান কেনতারো। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে একটি কৌতুক অভিনয়ের অংশ হিসেবে হলোকাস্ট বা হিটলারের নািস বাহিনীর সেই বীভৎস গণহত্যা নিয়ে বলেছিলেন, ‘আসুন, আমরা হলোকাস্ট খেলা খেলি।’ সেই ভিডিও ফুটেজ নতুন করে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভের আগুন দাবানলের আকার নেয়। জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগাও সমালোচনা করেন কেনতারোর। এরপর বাধ্য হয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে, পার পাননি ক্ষমা চেয়েও।
নতুন পরিচালকের হাত ধরেও একেবারে বিবর্ণ হয়নি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই মহামারির মাঝে টোকিও-ই এখন আশার আলো। বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদার ক্রীড়াযজ্ঞ সফল হলে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখবে পৃথিবী।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: