
ভোটে বাড়ছে দলের সংখ্যা, কী সিদ্ধান্ত নেবে বুঝে উঠতে পারছে না বিএনপি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ভোটমুখী হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটের অনেকেই এখন নির্বাচনমুখী। সবশেষ নির্বাচনমুখী হয়েছে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টি। পাইপলাইনে আরও আছে।
এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নির্বাচন নিয়ে উভয় সংকটে মাঠের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। একদিকে দল অন্যদিকে জোট সামলাতে হচ্ছে। নির্বাচন প্রশ্নে দলকে ঐক্যমতে নিয়ে আসতে পারেনি দলটি। নিতে পারছে না সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের নেতারা ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হলেও শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে নির্দেশনা না আসায়, তারা ঘোষণা দিতে পারছেন না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী পাঁচ বছরের ভাগ্য নির্ধারণে যদি বিএনপি সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তবে তার কর্মী সমর্থকদের কী জবাব দেবে? গেলো পাঁচ বছরে আন্দোলনের প্রাপ্তি নিয়ে এরই মধ্যে হিসাব-নিকেশ শুরু করে দিয়েছেন দলটির তৃণমূলের কর্মীরা।
নির্বাচনের আর মাত্র দেড় মাস বাকি। আওয়ামী লীগ পুরোদমে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে। দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ভোটমুখী হওয়ায় আন্দোলনের এক দফা দাবি আদায় না হলেও, বিভিন্ন মহলের চাপে বিএনপিও নির্বাচনে আসতে চাচ্ছে।
এজন্য নানা দিকে দৌড়ঝাঁপ চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে শুধু নির্বাচন প্রশ্নে এক টেবিলে আনা যায় কীনা- সেই চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন মহল চাইছে, সমঝোতায় আসুক বিএনপি। যদি বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন ১৫ থেকে ২০ দিন পিছিয়ে পুনঃতফসিল ঘোষণা করতে পারে।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ অর্ধশতাধিক রাজনৈতিক দল নির্বাচনের মাঠে এখন সক্রিয়। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণা সত্ত্বেও, তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
এরই মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের মতো নিরপেক্ষ সরকারের অধীনের নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের দল- জাতীয় পার্টি বুধবার ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ৩০০ আসনেই দলটির প্রার্থীরা লড়বেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
বিএনপি ছেড়ে আসা নেতাদের নিয়ে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হয়েছে দলটি। দলীয় প্রতীক হিসেবে পেয়েছে নোঙর। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
যদিও তাদের তৎপরতা নিয়ে বিএনপি-জামায়াত থেকে কিছু বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে দলের নেতারা বলছেন, কারও ইন্ধনে নয়, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল হতেই নির্বাচনে যাবে, বিএনএম। এরই মধ্যে দলটিতে যোগ দিয়েছেন বিএনপি বেশ কয়েকজন ডাকসাইটে ও পরীক্ষিত নেতা।
গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে ঘর সামলাতে ব্যস্ত বিএনপি। এ সংকট কাটাতে আন্দোলন জোরদারের পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে দলটি। এর মধ্যে তাদের নতুন চ্যালেঞ্জ-যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেয়া ঠেকানো।
এদিকে, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বুধবার। আত্মপ্রকাশের দিনে দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণাও দিয়েছে যুক্তফ্রন্ট। নতুন জোটে থাকা দলগুলো হলো– বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাত ঘড়ি প্রতীক), বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল (হাতপাঞ্জা), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল প্রতীক)।
আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া নেতাদের মীরজাফর ও পেশাদার স্বার্থপর আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানাচ্ছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, এতে আন্দোলনে কেনো প্রভাব পড়বে না। চলমান আন্দোলন সফলতার দিকে এগুচ্ছে দাবি করে তারা বলছেন, বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন কখনো অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ হবে না।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বিএনপির সাবেক চার নেতা। বুধবার তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা থেকে ভোটে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
মনোনয়ন ফরম নেওয়া বিএনপির এই চার নেতা হলেন- বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ শোকরানা, সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং জেলা বিএনপির সাবেক মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম।
এর মধ্যে আখতারুজ্জামান কিশোরগঞ্জ ২ আসনের জন্য, শোকরানা বগুড়া ১, বিউটি বেগম বগুড়া ২ ও বাদল বগুড়া ৭ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
দলটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, দু-চারজন বিপথগামী-স্বার্থবাদী ক্ষমতার জন্য বিএনপিতে যোগ দিয়েছিল, এখন বিএনপি ক্ষমতায় নেই। তাই তারা ব্যক্তিস্বার্থে আবার তাদের পুরনো চেহারায় ফিরে যাচ্ছে। এতে আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না।
ইবরাহিমের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠনের দু’দিন আগে খোদ বিএনপিতেই ভাঙন ধরেছে। দলটি ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) নেতৃত্বে এসেছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনএম।
বিএনএম’র মহাসচিব ড. মো. শাহজাহান বলছেন, শুধু বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক জনপ্রিয় নেতাসহ দেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ও সমাজে পরিচিতি রয়েছে এমন অনেকেই বিএনএমের আসতে চাচ্ছেন।
তৃণমূল বিএনপির অগ্রগতিতে বিএনপিকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তৃণমূল বিএনপি যেভাবে আগাচ্ছে, তাতে বিএনপি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে-এ নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। বিএনপির জোট থেকে তিনটি নিবন্ধিত দলসহ ছয়টি দল বের হয়ে গেছে। তাদের সবাই নির্বাচনে অংশ নেবে।
গতকাল অপর এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এসব নেতাকর্মীরা তৃণমূল বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে। সেটা যারা পারবেন না, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও অংশ নেবেন। নির্বাচনে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে বলে তাদেরকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে।


প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: