ইন্টারনেট
হোম / রাজনীতি / বিস্তারিত
ADS

শক্তির মহড়া কাল

26 July 2023, 11:04:08

আগামীকাল রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ। শক্তি দেখাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে উভয় দল। লক্ষ্য একটাই- রাজপথে শক্তির মহড়া দেওয়া। এ পাল্টা কর্মসূচি সংঘাতের দিকে গড়ানোর আশঙ্কা থাকলেও নমনীয় হচ্ছে না কোনো দল। দুই দলের পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে, কঠোর জবাব দেওয়া হবে। তাদের এ কঠোর অবস্থানে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে উৎকণ্ঠা।

পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় যৌথভাবে ‘শান্তি সমাবেশ’ ডেকেছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ।

গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ শান্তি সমাবেশ নিয়ে বলা হয়, রাজপথে বিএনপির নৈরাজ্য, সহিংসতা ও সন্ত্রাস রোধ করতে এবং যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিহত করতে এ শান্তি সমাবেশ ডাকা হয়েছে।

যদিও একই দিন প্রায় একই সময় রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

ওই দিন বিএনপি গণঅবস্থানের মতো কোনো লাগাতার কর্মসূচি নিয়ে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে রাজধানী অচলের দিকে যেতে পারে। এমন ধারণা থেকে সব নেতাকর্মীকে মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি কোনো সংঘাতের দিকে এগোলে ছাড় দেওয়া হবে না, প্রতিহত করা হবে।

শান্তি সমাবেশের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে আওয়ামী লীগ। সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কোনো দল যদি আন্দোলনের নামে কোনো সংহিসতা করে, তার জবাব আমরা দেব। এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে।’

আওয়ামী লীগ বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করাই বিএনপির মূল উদ্দেশ্যে। এজন্য তারা শেখ হাসিনার সরকারকে হটাতে চায়। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি সে লক্ষ্যে যেতে পারবে না। এজন্য দলটি বিশৃঙ্খলা তৈরির সুযোগ খুঁজছে। সরকার পতনের এক দফা দাবি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে- এজন্য আওয়ামী লীগ পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে থাকবে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, বিএনপির লক্ষ্যই এখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা। তারা সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের এনে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান বা রাস্তায় অথবা ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান নিতে পারে। এসব আশঙ্কা থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলেছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শান্তি সমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ মাঠে আছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ‘আগামী নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্যে অভিযাত্রা করবে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল শক্তি মাঠে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কর্মসূচি দিয়েই মাঠে নেমে বিএনপি হামলা করছে। ওই দিন মিরপুরে হামলা করেছে, বগুড়ায় করেছে, চট্টগ্রামে করেছে। তারা ইচ্ছা করে সংঘর্ষ ঘটাচ্ছে, সহিংসতা সৃষ্টি করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন বানচাল করা, গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করা। তারেক রহমানের নির্দেশে বিদেশিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেই বিএনপি এসব করছে। আমরা শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে চাই। যুবলীগ তারুণ্যের সমাবেশ ডেকেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্র লীগসহ অন্য সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরাও মাঠে থাকবে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয় না। আমাদের নেতাকর্মীরা আগে থেকেই মাঠে আছে। নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলমান থাকবে।’

আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে তারেক জিয়ার ভিডিওবার্তা

সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে বিএনপি। সরকারকে ‘বড় ধাক্কা’ দেওয়ার আয়োজন করতে যাচ্ছে দলটি। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই তাদের সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মহাসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আসতে পারে পদযাত্রা, সমাবেশ, গণঅবস্থান, মানববন্ধন, বিক্ষোভের মতো যুগপৎ কর্মসূচি। অবস্থা বুঝে ধাপে ধাপে তা আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে নিয়ে যাবে দলটি। তবে, এবার ঢাকামুখী কর্মসূচিকেই অধিক প্রাধান্য দেওয়া হবে।

মূলত, আগামী আগস্টের শেষ বা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সরকার বিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি। আর এই কর্মসূচির মাধ্যমেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় হবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। তবে ওই চূড়ান্ত আন্দোলনের আগেই বৃহস্পতিবার সমাবেশ কেন্দ্র করে রাজপথে মক্তির মহড়া দিতে চায় দলটি। ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে জনসমর্থনের প্রমাণও তুলে ধরতে চায়।

বিএনপির নেতারা বলছেন, বিএনপি এখন সরকার বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে সুফল হাতে পাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিএনপি সূত্র জানায়, চলমান এ আন্দোলনে আর কোনো বিরতি রাখবে না। থাকবে লাগাতার কর্মসূচি। এ নিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিদিনই দলটির শীর্ষনেতাসহ ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং ও সহযোগী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছেন নিয়মিত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘২৭ জুলাই থেকে বিএনপির আন্দোলন হবে শুধুই রাজপথমুখী। বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাস করে তবে সরকার যদি গায়ে পড়ে বিবাদে জড়ায় আমরা তা জনগণকে নিয়ে প্রতিহত করব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগস্টের শেষ অথবা সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকেই এই সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে উঠবে।’

এদিকে, মঙ্গলবার তারেক রহমান বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের কাছে একটি ভিডিও বার্তা পৌঁছে দেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, আন্দোলনের চূড়ান্ত সময় ঘনিয়ে এসেছে। আপনারা বিগত ১৪ বছর অনেক কষ্ট করেছেন, অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন। রাজধানীর বাইরে যারা আছেন সকল নেতাকর্মীদের বলছি আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখুন। ঢাকায় এসে আন্দোলন করার মতো মানসিক ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেন।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিয়ে কয়েকদিন বড় কর্মসূচি করতে পারলে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনে আন্দোলন নিয়ে ভীতির সঞ্চার হতে পারে। পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আস্থা ও জনপ্রিয়তা বাড়বে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সরকারের সামাল দেওয়া কঠিন হবে এবং চাপে পড়বে।

বিএনপির মতে, আন্দোলন নিয়ে বিদেশি প্রভাবশালী কিছু রাষ্ট্রেরও আগ্রহ আছে। সেই লক্ষ্যেই ঢাকার মহাসমাবেশের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনের শক্তি দেখাতে চাইছে দলটি। রাজধানীতে শক্তি দেখাতে পারলে বিএনপি বিদেশিদের সমর্থন পেতে পারে। মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর আন্দোলন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিলে আন্তর্জাতিকভাবে সরকার কঠিন চাপে পড়বে। আর বাধা না দিলে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেবে। আর সুযোগটিই নিতে চায় বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জনগণ আজ ফুঁসে উঠেছে। বিএনপিসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলো আজ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে একমত হয়েছে। আর যেহেতু এ সরকার নির্বাচনে ভরাডুবির ভয়ে এ দাবি মানবে না, তাই এ সরকারের পতন ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ নেই। গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটেই জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনবো।’

তিনি বলেন, ‘এদেশের ৯৯ ভাগ ব্যবসায়ী এ সরকারকে আর চায় না। কিছু সুবিধালোভী, দুর্নীতিবাজ এবং উচ্ছিষ্টভোগী এ সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এবারের আন্দোলনের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। পদযাত্রায় পথে পথে মানুষ যুক্ত হয়েছে। আর বিএনপি সুশৃঙ্খল রাজনীতি অব্যাহত রাখতে পেরেছে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও হামলা-মামলাসহ নির্যাতনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, তারাই হলো সন্ত্রাসী দল।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ঢাকা টাইমসকে এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি আন্দোলন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কিছুদিন আগেও আমরা রাজপথে সরব ছিলাম। কিন্তু আগের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এখনকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট অনেক ভিন্ন। দাবি একটাই, সরকারের পদত্যাগ। মাঝামাঝি আর কোনো কিছুর অবস্থান নেই। দেশ জনগণকে বাঁচাতে হলে ভোটচোর এবং গণতন্ত্র হরণকারী এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতেই হবে। আর তা কার্যকর করার জন্য আমরা সবাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: