ইন্টারনেট
হোম / Breaking News, রাজনীতি / বিস্তারিত
ADS

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চির শায়িত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

14 April 2023, 4:03:30

নিজ হাতে গড়া সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চির শায়িত হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

শুক্রবার বাদ জুমা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রধান ফটকের বাম পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

এর আগে সকালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ মাঠে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাকে শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ। পরে জুমার পর পিএইচএ মাঠে তার পঞ্চম জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শেষবারের মতো শ্রদ্ধায় সিক্ত করেন ডা. জাফরুল্লাহকে। সেখানে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। পরবর্তীতে দুপুর ২:৩০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা।

জীবিত থাকা অবস্থায় দেহদানের কথা বলে গেছেন জাফরুল্লাহ। কিন্তু তার মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেল ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেহদানের করতে চাইলে জাফরুল্লাহর প্রতি সম্মান দেখিয়ে তারা জানান, মেডিকেলের জন্য এই দুই হাসপাতালের কেউ তার লাশে ছুরি লাগাতে রাজি নন। পরবর্তীতে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার।

গত ১১ এপ্রিল রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশের চিকিৎসা জগতের এই মহান পুরুষ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনার পর কিডনি সমস্যার পাশাপাশি তার লিভারের সমস্যাও দেখা দেয়।

একনজরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বাংলাদেশি চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য সক্রিয়তাবাদী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গড়া ফিল্ড হাসপাতালের অন্যতম কারিগর। পরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামক স্বাস্থ্য বিষয়ক এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা করেন তিনি, যার জন্য জমি দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৮২ সালে প্রবর্তিত বাংলাদেশের ‘জাতীয় ঔষধ নীতি’ ঘোষণার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

জাফরুল্লাহর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজানে। তার বাবার শিক্ষক ছিলেন বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন। পিতামাতার দশজন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। ঢাকার বকশীবাজারের নবকুমার স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট উত্তীর্ণের পর তিনি ১৯৬৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬৭ সালে লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে এফআরসিএস প্রাইমারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান

রয়্যাল কলেজে পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে আসেন। যুদ্ধে অংশ নিতে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন। এরপরে ডা. এম এ মবিনের সঙ্গে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে রামন ম্যাগসাইসাই (১৯৮৫) এবং সুইডেন থেকে বিকল্প নোবেল হিসাবে পরিচিত রাইট লাভলিহুড (১৯৯২), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো’ (২০০২) এবং মানবতার সেবার জন্য কানাডা থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন। ২০২১ সালে আহমদ শরীফ স্মারক পুরস্কার পান।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: