ইন্টারনেট
হোম / জাতীয় / বিস্তারিত
ADS

রিজেন্টকাণ্ডে কালাম-সাহেদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

20 September 2021, 6:43:09

লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকা রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে অনৈতিকভাবে পারিতোষিক গ্রহণের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, হাসপাতালটির মালিক মো. শাহেদ ও স্বাস্থ্যের চার কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে আসামি করে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী চার্জশিটের সুপারিশ পেশ করলে কমিশন অভিযোগপত্রটি (চার্জশিট) মঞ্জুর করে। পরে বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন সংস্থাটির সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি আবুল কালাম আজাদ, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ছাড়াও যাদের বিরুদ্ধে দুদক অভিযোপত্র দিয়েছে তারা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আমিনুল হাসান, উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম।

দুদক সচিব বলেন, ‘আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে লাইসেন্স নবায়নবিহীন বন্ধ রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং সম্পাদন ও সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমের ল্যাবে তিন হাজার ৯৩৯ জন কোভিড রোগীর নমুনা বিনামূল্যে পরীক্ষা করে অবৈধ পারিতোষিক বাবদ রোগীপ্রতি তিন হাজার ৫০০ টাকা হিসেবে মোট এক কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণ করেন।’

আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘একইভাবে রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের মিরপুর ও উত্তরা শাখার জন্য চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের খাবার খরচ বরাদ্দের বিষয়ে এক কোটি ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মাসিক চাহিদা তুলে ধরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অপরাধ করার তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী কর্মকর্তা কমিশনের কাছে চার্জশিট সুপারিশ করলে কমিশন তা মঞ্জুর করে।’

এর আগে গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর করোনার নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে সরকারের তিন কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তবে সেই মামলায় বাদ পড়ে স্বাস্থ্যের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের নাম।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর তদন্তের পর রিজেন্ট হাসপাতালে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় স্বাস্থ্যের সাবেক ডিজির যোগসূত্র খোঁজে পায় দুদক। দুদকের দীর্ঘ অনুসন্ধানে নতুন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চার কর্মকর্তার সঙ্গে তার নাম কমিশনে অনুমোদনের জন্য জমা দিলে কমিশন তা অনুমোদন দেয়।

করোনাভাইরাস মহামারিতে নিম্নমানের মাস্ক, পিপিইসহ স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একের পর এক কেলেঙ্কারিতে গোটা স্বাস্থ্য খাত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এসব ঘটনায় তোপের মুখে পড়েন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ।

মূলত করোনা মহামারিকালে চিকিৎসকদের মানহীন স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহের ঘটনার মধ্য দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের এসব অনিয়ম প্রথম সামনে আসে। একইসঙ্গে জেকেজি হেলথ কেয়ারের জালিয়াতি ও রিজেন্ট হাসপাতালের করোনার ভুয়া রিপোর্টকাণ্ডে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমালোচনা হয় দেশের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে।

স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতির বিভিন্ন বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা এবং কমিশনের অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বছর ৬ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালককে পৃথক দুটি নোটিশ দিয়ে তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অবশ্য দুদকের তলবের আগেই ওই বছরে ২১ জুলাই মহাপরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান আবুল কালাম আজাদ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদত্যাগী ওই মহাপরিচালককে (আবুল কালাম আজাদ) অনুসন্ধান কর্মকর্তা মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর পাঠানো ‘অতীব জরুরি’ তলবি নোটিশে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ে (১২ আগস্ট ২০২০) হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগসংক্রান্ত বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে।

আরেকটি নোটিশে দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা আবুল কালাম আজাদকে ওই বছরের ১৩ আগস্ট হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলেন। নোটিশে বলা হয়, সাহেদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তার (আবুল কালাম আজাদ) বক্তব্য গ্রহণ প্রয়োজন। পরে তিনি দুদকে হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিম্নমানের স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনায় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সে সময় মহাপরিচালকের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. আমিনুল হাসানসহ চারজনকে তলব করে সংস্থাটি।

গত বছর কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকলে রোগীদের চিকিৎসায় ওই বছর ২১ মার্চ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। সেই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদসহ সংস্থাটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে সরকারের কাছ থেকে বিল আদায় করার পরও রোগীর কাছ থেকে করোনা টেস্টের নামে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগে গত বছরের ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেসময় পালিয়ে যান সাহেদ। তবে পরবর্তী সময়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তির নানা দিক খতিয়ে দেখে দুদক। সংস্থাটি স্বাস্থ্যের সেই ডিজিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই সময় দুদকের পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা শেখ মো. ফানাফিল্যা ঢাকা টাইমসকে বলেছিলেন, ‘রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে আবুল কালাম আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এর সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।’

আরেকটি নোটিশের মাধ্যমে পদত্যাগ করা ওই ডিজিকে ( আবুল কালাম আজাদ) জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের পরিচালক তদন্ত (গোয়েন্দা শাখা) মীর জয়নুল আবেদিন শিবলী। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে জেকেজির মতো প্রতিষ্ঠানের চুক্তি, লাইসেন্সের মেয়াদহীন রিজেন্ট হাসাপাতালের সঙ্গে চুক্তি, স্বাস্থ্যের গাড়িচালক আব্দুল মালেকের শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ার ঘটনায় স্বাস্থ্যের সাবেক মহাপরিচালকের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে সংস্থাটি এবং দুর্নীতিতে তার সম্পৃক্ততা পায়।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: