ইন্টারনেট
হোম / জাতীয় / বিস্তারিত
ADS

লকডাউনের প্রস্তাবে যে সিদ্ধান্ত দিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

23 March 2021, 9:07:34

করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি পরিস্থিতিতে সারা দেশে আবারও কঠোর লকডাউন দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে প্রস্তাব দিয়েছিল- তা নাকচ করে দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

লকডাউনসহ ১২টি প্রস্তাব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে লিখিতভাবে জানানো হয়। অধিদপ্তর মনে করে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসব বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর বিসিপিএস কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে লকডাউন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, লকডাউনের সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের, এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা নেই। আপাতত লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গেল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মিনি কনফারেন্স রুমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও বর্তমানে করণীয় সম্পর্কে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১২টি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এগুলো হলো- ১. সম্ভব হলে কমপ্লিট লকডাউনে যেতে হবে। সম্ভব না হলে ইকোনমিক ব্যালান্স রেখে যেকোনো জনসমাগম বন্ধ করতে হবে। ২. কাঁচা বাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিংমল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, পবিত্র রমজান মাসের ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে। ৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেগুলো বন্ধ আছে সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। অন্যান্য কার্যক্রম সীমিত রাখতে হবে। ৪. যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা (বিসিএস, এসএসমি, এইচএসসি, মাদ্রাসা, দখিলসহ অন্যান্য) বন্ধ রাখতে হবে।

৫. কোভিড পজিটিভ রোগীদের আইসোলেশন জোরদার করা। ৬. যারা রোগীদের কন্ট্রাকে আসবে তাদের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখা ৭. বিদেশ থেকে বা প্রবাসী যারা আসবেন তাদের ১৪ দিনের কঠোর কেয়ারেন্টিনে রাখা এবং এ ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেওয়া ৮. আগামী ঈদের ছুটি কমিয়ে আনা ৯. স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আইন প্রয়োজনে জোরদার করা ১০. পোর্ট অব এন্ট্রিতে জনবল বাড়ানো, মনিটরিং জোরদার করা, ১১. সব ধরনের সভা ভার্চুয়াল করা এবং ১২. পর্যটন এলাকায় চলাচল সীমিত করা।

এসব প্রস্তাবের পাশাপাশি কয়েকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও ৫টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। সেখানে তারা বলেছেন- বইমেলা বাতিল করতে হবে, বদ্ধস্থানে বা কক্ষে ইফতার পার্টি না করতে নির্দেশনা দিতে হবে, ঈদের ছুটি কমিয়ে ১ দিন করতে হবে, কক্সবাজারসহ পর্যটন এলাকায় যাতায়াত সীমিত করতে হবে এবং মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এই প্রস্তাবগুলো অবশ্যই ভালো। সংক্রমিত ব্যক্তিদের আইসোলেট করে রাখতে হবে। তারা নেগেটিভ হলে তবে ছাড়তে হবে। সামগ্রিকভাবে লকডাউন করা যাবে না। তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। মূল গুরুত্ব দিতে হবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপরে এবং সেটি শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে অনেক কিছু করতে হবে না।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকায় জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আগের মতো কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গেল মঙ্গলবার তিনি বলেন, মানুষ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, তা নিশ্চিত করতে আবারও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসবে। মাস্ক না পরলে-স্বাস্থ্যবিধি না মানলে জরিমানা করা হবে। এ বিষয়ে জেলা পর্যায়ে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়ে ইতোমধ্যে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, তাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, আমাদের সিদ্ধান্ত যেগুলো ছিল, সেগুলো যেন প্রয়োগ করে। অর্থাৎ মোবাইল কোর্ট করে। যারা মাস্ক না পরে তাদেরকে জরিমানা করবে। নো মাস্ক নো সার্ভিস কর্মসূচিকে আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে গেস্ট কন্ট্রোল করবে।

এর আগে গত ১৩ মার্চ সারা দেশে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। উপসচিব মো. শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সবার মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে।

সভায় আলোচিত ১২টি প্রস্তাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নজমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, প্রস্তাবগুলো ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সরকারের পরবর্তী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: