
ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য সঠিক নয়: মেয়র তাপস

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন যে তথ্য জানায় তা পুরোপুরি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
বুধবার সকালে খিলগাঁওয়ে বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র এই দাবি করেন।
গত দুই মাস ধরে করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপও উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে দুই হাজার ৩২১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আর গত জুলাই মাস পুরোটাজুড়ে শনাক্ত হয় দুই হাজার ২৮৬ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম প্রতিদিন ডেঙ্গু বিষয়ে তথ্য জানায়। সেই তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৮০ ভাগ রোগী ঢাকা দক্ষিণ সিটির।
মেয়র তাপসের দাবি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া এই তথ্য সঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘৮০ ভাগ ডেঙ্গু রোগী ঢাকা দক্ষিণে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা পুরোপুরি সঠিক নয়৷ ঢাকার বাইরে আক্রান্ত হয়ে দক্ষিণের ঠিকানা দিচ্ছে সাধারণ মানুষ।’
মেয়র বলেন, ‘চলমান অভিযানের মধ্যে দিয়ে রোগীর সংখ্যা কমে আসবে। চলমান এই ডেঙ্গুবিরোধী অভিযান আগামী ১৮ তারিখ পর্যন্ত চলবে।’
এডিস মশকের উৎসস্থল ও বিস্তার দেখে তিনি নিজেই অবাক হয়েছেন বলে জানান মেয়র তাপস। বলেন, ‘আমরা এডিস মশকের উৎসস্থল ও বিস্তার দেখে দেখে অবাক হচ্ছি। সেদিন ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আপনারা দেখেছেন- একটি হাউজে কী পরিমাণ লার্ভা পেয়েছি। সুতরাং আমরা আশা করছি, ঢাকাবাসী আরও সচেতন হবেন, আমাদের সহযোগিতা করবেন, আমাদের তথ্য দেবেন। আমরা চিরুনি অভিযান চলমান রাখবো। আমরা নিম্নমুখী নিয়ে এসেছি। চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে ইনশাআল্লাহ এডিস মশার বিস্তার থেকে ঢাকাবাসীকে আমরা নিস্তার দিতে পারবো।’
শনাক্ত ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘আমরা ডেঙ্গু রোগী সম্পর্কে যে তথ্য পাচ্ছি তাতে দেখা যাচ্ছে- কেউ হয়তোবা হাসপাতালের ঠিকানা দিয়েছেন, নতুবা বলে দিচ্ছেন একটি জায়গা যেখানে সুনির্দিষ্ট ঠিকানাও আমরা পাচ্ছি না। আবার অনেক সময় যখন আমরা যোগাযোগ করছি তখন দেখা যাচ্ছে তারা কেউ হয়তো চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন, কেউ ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন, কেউ অন্য জায়গা থেকে খালার বাসায় বেড়াতে এসেছেন, কেউ দুলাভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। দেখা যায় তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েই এখানে এসেছেন।’
এডিসের লার্ভার বিস্তার রোধে চলমান চিরুনি অভিযানে শুধু ঊর্ধ্বমুখিতা রোধ নয়, কিছুটা হলেও তা নিম্নমুখী নিয়ে আসতে পেরেছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি-এডিস লার্ভার উৎসস্থল সম্পর্কে ঢাকাবাসীর উদাসীনতাও রয়েছে। যার কারণে অনেক পানির ছোট ছোট আধার সৃষ্টি হয়। শ্রাবণ মাসের আজ ২৬ তারিখ, এই ২৬ দিনের প্রত্যেক দিনই থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং আমরা একদিকে পরিষ্কার করছি, উৎস নিধন করছি, আবার অন্যদিকে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। প্রায় আট হাজার বসতবাড়িতে অভিযান চালিয়েছি, তারপরও সেরকমভাবে সচেতনতা আমরা পাচ্ছি না। বিশেষ করে ছাদবাগানগুলোতে বিপুল পরিমাণে লার্ভার উৎস আমরা লক্ষ করছি।’
মেয়র নগরবাসীকে যেসব জায়গায় পানি জমতে পারে সেসব আধার বিনষ্ট করতে এবং এডিস মশার উৎসস্থল সম্পর্কে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনার আশপাশে যদি কোনো লার্ভার উৎস থাকে তাহলে আমাদেরকে জানান। আমরা সরাসরি সেখানে যাবো। আমাদের প্রায় এক হাজার জনবল সকাল থেকে সন্ধ্যা সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছে, উৎস নিধনে কাজ করছে, অভিযান পরিচালনা করছে। সুতারাং আমরা যত বেশি তথ্য পাবো তত বেশি সফল হবো।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ, প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান, সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডসমূহের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।


প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: