রাজধানীতে জমে উঠছে পশুর হাট, বাড়ছে ভিড়
আর পাঁচ দিন পর ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের পশুর হাটগুলোও পুরোপুরি প্রস্তুত। এসব হাটে উঠতে শুরু করেছে কুরবানির পশু। হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনসহ অন্যান্য শর্তাবলী সাপেক্ষে আগামীকাল থেকে গরু বেচোকেনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আগে থেকেই স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলোতে পশু বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় পছন্দের পশু কিনতে হাটগুলোতে ক্রেতা সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।
দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কয়েকদিন ধরে প্রতিদিন দুই শতাধিক করে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে অদৃশ্য ভাইরাসটিতে। আক্রান্তের তালিকাটাও লম্বা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমন অবস্থার মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর লকডাউন হঠাৎ করে শিথিল করায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এছাড়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুরহাট চালুর সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কোরবানির পশুর হাট বন্ধসহ আরও ১৪ দিন কঠোর লকডাউনের সুপারিশ করেছে কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
ঈদুল আজহার দিনসহ মোট পাঁচ দিন পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা শুরুর কথা থাকলেও একদিনে আগে হাটগুলোতে পশু বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে ভিড় এড়াতে অনেকে আগেভাগেই গরু কিনছেন। তাছাড়া ঈদের আগে শেষ শুক্রবার হওয়ায় হাটগুলোতে আজ ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের অনেকে গরুর দরদাম করছেন আবার অনেকে গরু কিনে বাসায় ফিরছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত দুইদিনের তুলনায় আজ ক্রেতাদের ভিড় ছিল অনেক। গত দুই দিন দর্শনার্থী থাকলেও গরু তেমন বেচাকেনা হয়নি। কিন্তু আজকের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। সকাল থেকেই হাটগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ঈদের আগে শেষ শুক্রবার হওয়ায় হাটগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা আজ বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
রাজধানীর গাবতলী স্থায়ী গবাদি পশুর হাট, বসিলার স্থায়ী হাট ও দনিয়ার অস্থায়ী হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
কোভিড মহামারির মধ্যে এবার দ্বিতীয়বারের মতো কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে কুরবানির পশু কিনতে হবে নগরবাসীকে। সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে রাজধানীর সকল হাটেই সজাগ দৃষ্টিতে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গাবতলী পশুর হাটে দেখা গেছে, হাটের মূল অংশ আগেই গরু দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেছে। এখন হাটের চারপাশে বাড়ানো হয়েছে পরিধি। বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-মহিষ নিয়ে আসা ট্রাকগুলো জড়ো হচ্ছে বেড়িবাঁধে। সেখান থেকে গরু নামিয়ে বাঁধা হচ্ছে হাটের বর্ধিত অংশে।
হাটের ইনচার্জ সজিব সরকার জানান, প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ১২টি ট্রাক গবাদি পশু নিয়ে আসছে দেশের বৃহত্তম এই হাটে। হাসিল ঘর ৬টা চালু হয়েছে। আর তিনটি চালু করা হবে বলে জানান তিনি।
সজিবের ভাষ্যমতে, ‘হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের উদ্দেশ্যে সার্বক্ষণিক মাইকিং করা হচ্ছে। হাট মালিকের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য আমরা ৪০ জন দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া রাইটার ও চেকার রাখা হয়েছে ৫০০ জনের বেশি।’
হাটটি ঘুরে দেখা যায়, একদিকে যেমন ট্রাকে করে গরু আসছে, অন্যদিকে চলছে দামাদামি ও বিক্রি।
হাটে আসা বেপারি ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাবতলী হাটে ক্রেতা আনাগোনা ছিল নামমাত্র। তবে শুক্রবার সকাল থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। বিকাল ক্রেতা আনাগোনা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন তারা।
ব্যাপারি ও খামারিদের থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি। তবে বাড়তি দামের দিকে নজর না দিয়ে ক্রেতারা ভাল ও পছন্দের দিকে নজর দেবেন, এমন প্রত্যাশা বিক্রেতাদের।
রাজশাহী থেকে ছয়টি গরু নিয়ে এসেছেন জামাল। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘গতকাল ভোরে হাটে আসছি। আইসাই একটা গরু বিক্রি করছি। আজ আরও দুইটা বিক্রি হইছে।’
করোনার কারণে এবাের ক্রেতারা ঝামেলা এড়াতে খুব বেশি দরদাম বা ঘোরাঘুরি করছেন না বলে দাবি জামালের। আগামী দুই দিনের মধ্যে বাকি তিনটা গরু বিক্রি করে বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন বলে আশা করছেন এই বিক্রেতা।
নাটোর থেকে চারটি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাগর নিজের খামারে নিজ হাতে লালন-পালন করা গরু। খাবারের দাম বেশি, যাতায়াত খরচ বেশি। তাই দামও একটু বেশি। হাটে কাস্টমার থাকলে চিন্তা চাই।’
গাবতলী হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে পুলিশ ও র্যাাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া হাটের মধ্যে পুলিশ ও পুলিশের এলিট ফোর্সের টহল নিয়মিত চলছে। জাল টাকা ও প্রতারক চক্রের বিষয়টি মাথায় রেখে সাদা পোশাকে হাটে রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
গাবতলী স্থায়ী হাটের পাশাপাশি রাজধানীতে বসেছে কয়েকটি অস্থায়ী হাট। সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা দেয়া এসব হাটে কয়েকদিন ধরেই আসছে কুরবানি উপযোগী পশু।
বসিলা হাটের বেপারি ও খামারিদের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিক্রি মন্দা ছিল। শুক্রবার সকাল থেকে আশার আলো দেখতে পেয়েছেন তারা। হাটে আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীই ক্রেতা। ফলে বিক্রিও হচ্ছে আশানুরূপ।
পাবনা থেকে আসা বেপারি হাসেম মোল্লা ঢাকা টাইমসকে বলেন, আইছি দুইদিন। দুই দিনে কাস্টমার দেখি নাই। কয়েকজন আইছে, দাম জিগাইছে, কেউ দাম কয় নাই। আজ সকালেই দুইটা গরু বিক্রি হইছে। বিকালে আরও কাস্টমার আসতে পারে।’
তুরাগ তীরে প্রথমবারের মতো বসা হাটটি গড়ে উঠেছে বিশাল জায়গাজুড়ে। হাট কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিতে তারা সচেষ্ট রয়েছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্রেতাদের সব রকম সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
এছাড়া দনিয়া ও রায়েরবাগ এলাকার অস্থায়ী হাট ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি গরু, ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে। সকালে বেশ কিছু গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে বসা অস্থায়ী হাটটিতে হাজার হাজার গবাদি পশু বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। এরইমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাটের বেপারিরা।
আব্দুর রহমানে এক বেপারি জানান, গতকাল পর্যন্ত হাটে তেমন কোন বিক্রি ছিল না। আজ সকাল থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। আজ বিকাল থেকে টানা কয়েকদিন ক্রেতা থাকলে গরু বিক্রি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন তারা।—- ঢাকাটাইমস
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: