করোনায় কোর্ট সীমিত, হতাশায় বিচারপ্রার্থী ও আইজীবীরা
গত দেড় বছর আদালত বন্ধ। তবে, সীমিত পরিসরে অতীব জরুরি ফৌজদারি বিষয় শুনতে কিছু আদালত চালু ছিল। যেমন আসামিকে আদালতে হাজির ও জামিনের বিষয়ে। এরপর কিছুদিন চালু রাখার পর আবারও সীমিত করা হয়েছে আদালত। এতে বিলম্ব হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়া আর হতাশায় ভুগছেন আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে নবীন আইনজীবীরা পরেছেন মহাবিপদে। আদালত পাড়ায় যেতে না যেতেই করোনা তাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে। কোর্ট নেই, মামলা নেই, মক্কেলও হাতেগোনা। এজন্য আয়-রোজগারও শূন্যের কোঠায়। অনেকেই ছেড়েছেন বাসা। চলে যাচ্ছেন গ্রামের বাড়িতে। বর্তমান বাস্তবতায় তাদের সমিতির সহযোগিতাও অপ্রতুল।
ঢাকা বারকে বলা হয় এশিয়ার বৃহত্তম বার। এখানে পেশায় যুক্ত আছেন ২৫ হাজার আইনজীবী।
জানতে চাইলে ঢাকা বারের আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমাদের অবস্থা করুণ। চ্যালেঞ্জ নিয়ে চলতে হচ্ছে। সহকর্মীরা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। গত ঈদের পর থেকে দীর্ঘ সময় কোর্ট বন্ধ ছিল। আবার চালুর কিছুদিন পরই করোনায় বন্ধ হলো আদালত।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে আইনজীবী হয়েছি। আড়াই বছরের মধ্যে দেড় বছরই করোনায় বন্ধ ছিল আদালত। নবীনরা ধার-দেনা করে চলছেন। কেউবা হতাশা থেকে বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজছেন।
আইনজীবী ফারজুল ইসলাম ফাহিম বলেন, আমরা সাধারণত প্রতিদিনই আয় করি। কেউ কম, কেউ বেশি। আর পেশাটা হচ্ছে গুরুবিদ্যা। কোর্ট বন্ধ থাকা মানে আমাদের আয় বন্ধ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী ঢাকাটাইমসকে বলেন, করোনার কারণে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ সেটি ভুক্তভোগীরাই অনুধাবন করতে পারছেন। সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদার কারণে কারও কাছে কিছু চাইতেও পারছি না।
আরেকজন বলেন, স্বপ্ন নিয়ে আইনপেশায় এসেছি। কিন্তু করোনার এই সংকটময় পরিস্থিতিতে অনেক বড় ধাক্কা খেতে হলো।
বিলম্ব বিচারে হতাশ এক বিচারপ্রার্থী বলেন, ঢাকা কোর্টে একটি সিআর মামলা করেছি ২০১৯ সালে। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে অনেকদিন পর। প্রতিবেদন জমা হলেও এখন ২০২১ সালে এসেও দিন নির্ধারণ হচ্ছে না। কষ্ট লাগছে।
বিচারপ্রার্থী ইব্রাহিম খলিল বলেন, রোজার ঈদের আগে ভাইয়ের জন্য জামিন আবেদন করেছি। মাস গেল দুইটি, এখনো শুনানি হচ্ছে না। গত ৩০ জুন সংশ্লিষ্ট কোর্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মনটা খুবই খারাপ।
আইনজীবী নেতারা জানান, ঢাকা বারে ২৫ হাজারের মতো সদস্য। অন্তত ১৫-২০ হাজার নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন। এরমধ্যে নবীন আইনজীবীরা দৈনিক মামলার ভিত্তিতে রোজগার করেন।
আর্থিক দূরববস্থা সমাধানে গত বছরের ন্যায় এবারও বিনা সুদে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট বার। সংগঠনটির সহসভাপতি শফিক উল্যাহ বলেন, আইনজীবীদের আর্থিক দৈন্য অবশ্যই অনুভব করছি। এজন্য ইতোমধ্যে ৬ কোটি টাকা লোন দিয়েছি। করোনার মধ্যে কিছু অফিস ও কলকারখানা খোলা আছে। হাইকোর্টে মাত্র তিনটি ভার্চুয়াল বেঞ্চ চলছে। আরও কয়েকটি কোর্ট বাড়ানো যেতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, অপেক্ষাকৃত নবীন আইনজীবীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এমন দুর্দিন আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। নবীনদের পাশে সাধ্যমত দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার বলেন, আইন পেশার উপার্জনে নির্ভরশীল জুনিয়র ও ক্লার্ক পরিবার-পরিজন। করোনায় র্দীঘ ১৫ মাস আদালত বন্ধ। আয় নেই, প্রতিদিনের ব্যয় কিন্তু কমেনি। অনেকেই কর্মহীন জীবন-যাপন করছেন। নবীনদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তাই র্ভাচুয়াল এবং শারীরিক উপস্থিতিতে আদালত খোলা দরকার। তিনি বলেন, আইনজীবীরা কিন্তু বড় অংকের রাজস্ব রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মাদ শিশির মনির বলেন, আমি মনেকরি সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল ব্যবস্থায় আদালত খোলা রাখা দরকার। জরুরি বিষয়সমূহ বিশেষ করে জামিন শুনানি করার জন্য কয়েকটি বেঞ্চ বাড়ানো প্রয়োজন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও সীমিত পরিসরে আদালত চালু আছে।
গত ৩০ জুন সুপ্রিম কোর্টের এক প্রজ্ঞাপনে আদালতগুলো সীমিত পরিসরে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। তখন থেকে আপিল বিভাগে ১টি ও হাইকোর্টে ৩টি বেঞ্চ সীমিত পরিসরে চালু রয়েছে। যেখানে অন্য সময় খোলা থাকতো সুপ্রিম কোর্টের ৫৩টি বেঞ্চ। মাঝে মধ্যে এসব বেঞ্চের সংখ্যা কম বেশি হতো। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় প্রত্যেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকছেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জেলা-মহানগরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: