ইন্টারনেট
হোম / স্বাস্থ্য / বিস্তারিত
ADS

নীরব ঘাতক কিডনি সংক্রমণে কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন

18 September 2025, 11:15:23

মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি বা বৃক্ক। কিডনি রক্তে উপস্থিত দূষিত পদার্থগুলো পরিশোধন করে এবং মূত্র তৈরি করে সেগুলো দেহ থেকে বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। একটি অসুস্থ বা অকার্যকর কিডনির কারণে একজন মানুষ দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। তবে এরপরও মানুষ এই অঙ্গ নিয়ে এতটাও ভাবতে চান না। সেই কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা এখন বাড়ছে। কিডনি শুধু রক্ত পরিশোধনেই সাহায্য করে না, এর পাশাপাশি শরীরে তরল ও বিভিন্ন প্রকার লবণের ভারসাম্য, রক্ত উৎপাদনে সহায়তা এবং শরীরে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি যথাযথভাবে কাজ করছে কিনা কিংবা কিডনির স্বাভাবিক কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য কিডনি সমস্যার বিভিন্ন লক্ষণের ওপর আমাদের নজর রাখা এবং সজাগ থাকা অত্যন্ত জরুরি।

কিডনি বিভিন্ন কারণে সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্র্র্রাইটিস, দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, প্রস্রাবের নালিতে বাধার কারণে কিডনি রোগ হতে পারে। জন্মগত ত্রুটি এবং বংশগত কারণেও কিছু কিডনি রোগ হয়ে থাকে।

অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, ক্রমাগত রাত জাগা এবং পর্যাপ্ত পানি পান না করার ফলে ক্ষতি হতে পারে কিডনির। যেহেতু মানব শরীরে কিডনির সংখ্যা দু’টি, তাই একটি বিকল হলেও কাজ চলতে পারে অন্যটি দিয়ে। ফলে কিডনিতে পাথর জমা ছাড়া অন্য আর কোনও ক্ষতির আঁচ পাওয়া যায় না বাইরে থেকে। সময় থাকতে কিডনির সমস্যা ধরা না পড়লে সেরে ওঠার সম্ভাবনাও কমতে থাকে।

অনেক কিডনি রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। অনেক কিডনি রোগ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা অথবা এর অগ্রসরতা ধীর করা সম্ভব। কিডনি রোগের উপসর্গসমূহ বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি)-এ কিডনি ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারায়। শরীরে জমতে থাকে ক্ষতিকর উপাদান, যা নানা জটিলতা তৈরি করে। একে বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’, কারণ প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না।

লক্ষণ

রোগ অগ্রসর হলে দেখা দিতে পারে—

ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন
ক্লান্তি ও দুর্বলতা
ক্ষুধামন্দা
হাত-পা ও চোখে ফোলা
প্রস্রাব ফেনাযুক্ত বা বুদবুদ হওয়া
শুষ্ক ত্বক, চুলকানি
মনোযোগে সমস্যা, ঘুমে ব্যাঘাত
বমি ভাব, পেশি টান
উচ্চ রক্তচাপ
প্রধান কারণ

ডায়াবেটিস
উচ্চ রক্তচাপ এছাড়া—
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস
পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ
প্রস্রাবের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া (পাথর, প্রস্টেট বা টিউমার)
দীর্ঘদিন ব্যথানাশক ওষুধ সেবন
পুনরাবৃত্ত কিডনি সংক্রমণ
ফলে অ্যানিমিয়া, হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, গাউট, হৃদরোগ, স্ট্রোক, স্নায়ুর ক্ষতি, অতিরিক্ত খনিজ জমে যাওয়া এবং শরীরে পানি জমে শ্বাসকষ্টের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসা

ক্রনিক কিডনি রোগের স্থায়ী চিকিৎসা নেই। তবে—

নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ
ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
কিডনি-বান্ধব খাদ্যাভ্যাস
ধূমপান-মদ্যপান বর্জন
ব্যায়াম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
এসব মানলে কিডনির কার্যক্ষমতা দীর্ঘদিন সক্রিয় রাখা সম্ভব।

প্রতিরোধ

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
রক্তচাপ ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
সুষম খাদ্য গ্রহণ
ধূমপান-মদ্যপান বর্জন
ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
অকারণে ব্যথানাশক সেবন না করা

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রনিক কিডনি রোগ শুরু হলে তা আজীবন চলতে থাকে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মতো চিকিৎসা, নিয়মিত পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন কিডনিকে অনেকদিন সক্রিয় রাখতে পারে।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: