ইন্টারনেট
হোম / স্বাস্থ্য / বিস্তারিত
ADS

২০ মিনিট হাঁটলেই মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পায়

1 April 2022, 9:50:12

স্বাস্থ্যকর ও সুখী জীবন পেতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। সুস্থ থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চা, খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটার অভ্যাসও বেশ কার্যকরী উপায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত হাঁটলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনই একাধিক রোধ-ব্যাধি থেকেও দূরে থাকা যায়।

প্রতিদিন যানজটে গাড়িতে বসে থাকা ছাড়া আর কোন লাভ হয় না। যানজটে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বে অফিসে, কাজে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হেঁটে যাওয়া অনেক ভালো একটি উপায়। এটি সকালে হাঁটার অভ্যাসের পাশাপাশি কাজের জায়গায় গিয়ে মানসিকভাবে ভালো থাকতে সাহায্য করে।

মাত্র ২০ মিনিট হাঁটলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বেড়ে যায়, অফিস কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হেঁটে গেলে মানসিক চাপও দূর হয়, পড়াশোনার মনোযোগও বেড়ে যায়। হেঁটে যাতায়াতে অর্থ ব্যয় হয় না এবং এক্ষেত্রে কোন ধরণের জ্বালানী ব্যয় না হওয়ায় কম কার্বন নির্গমন হয়, পরিবেশ কম দূষণ হয় এবং পাশাপাশি সড়কে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম হয়।

‘প্রিভেন্টিভ মেডিসিন’র প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, কাজে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে গেলে সেটি মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক সুস্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে।

‘ইট দিস ডট কম’ ওয়েবসাইটের এক গবেষণায় অ্যাংলিয়াস নরউইচ মেডিকেল স্কুলের প্রধান গবেষক অ্যাডাম মার্টিন বলেন, যারা গাড়িতে যাতায়াত করেন, তাদের মানসিক সুস্থতা বেশি খারাপ হয়। আর যারা বেশি হাঁটেন, তাদের মানসিক সুস্থতা ততই ভালো হয়।

প্রতিদিন ২০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করলে পেটের চর্বি বা ভিসারেল ফ্যাট কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে শরীরের অন্যত্র জমে থাকা অতিরিক্ত মেদও কমে যায়। ফলে সার্বিকভাবে ওজন হ্রাস পায়। তাই যারা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় ভুগছেন, তারা আজ থেকেই অল্প বিস্তর হাঁটা শুরু করে দিন। দেখবেন উপকার পাবেন।

নিয়মিত হাঁটাহাঁটিতে শরীর সুস্থ থাকে ও আয়ু বাড়ে। দীর্ঘদিন বাঁচতে চাইলে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ মিনিট হাঁটুন। দেখবেন আপনার আয়ু সাত বছর বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া, হৃদযন্ত্র ও রক্তনালির সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটা প্রয়োজন।

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, লাঞ্চ এবং ডিনারের পর নিয়ম করে হাঁটার অভ্যাস করলে শরীরে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকে না বললেই চলে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে এইটুকু কসরত করতেই পারেন বলে মনে হয়, তাই না!

পুষ্টিবিদদের মতে, হাঁটাহাঁটি করুন যতটা পারেন। খুচরো হাঁটায় শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গরা সচল থাকবে। তবে এতে খুব একটা মেদ ঝরে না। মেদ ঝরাতে গেলে কিছু নিয়ম মেনে হাঁটাতেই মিলবে উপকার।

নিয়মের সঙ্গে জেনে রাখা দরকার হাঁটার সময়ও। প্রতিদিন অনন্ত ২০ মিনিট বা তার কিছু বেশি হাঁটতে হবে। এটুকু হাঁটা শরীরের শুধু মেদ ঝরাবে তা-ই নয়, এই দীর্ঘ ক্ষণ হাঁটা হার্টের অসুখ ভাল করে। কোলেস্টেরল কমায়। কিন্তু শুধু সময় মানলেই হবে না। জানতে হবে আরও কিছু নিয়ম।

‘আমেরিকান একাডেমি অব অর্থোপেডিক সার্জেন’ নামক সংস্থার করা এক গবেষণা অনুসারে নিয়মিত ১ হাজার-১০ হাজার স্টেপ নিলে পুরো স্কেলিটনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ শরীরে উপস্থিত প্রতিটি হাড়ের শক্তি এত মাত্রায় বৃদ্ধি পায় যে অস্টিওপোরোসিসের মতো হাড়ের রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

হাঁটাহাঁটির অভ্যাস না থাকলে প্রথম দিকে এক সেকেন্ডে একটা স্টেপ, এই অঙ্কেই হাঁটতে হবে। তারপর হাঁটার অভ্যাস হলে সেকেন্ডে দুটো স্টেপের হিসেবে হাঁটতে হবে। আর অবশ্যই হাঁটতে হবে একটানা রাস্তা ধরে। বারবার থমকে, ঘন ঘন দিক বদলে হাঁটার চেয়ে টানা হাঁটায় উপকার বেশি। তাই বাড়ির ছাদে বা লনে নয়, রাস্তা ধরে হাঁটুন।

এমন কোনও রাস্তা বাছুন, যেখানে ধোঁয়া, যানজট, বড়সড় গাড়ির উপস্থিতি প্রায় নেই। গলিপথগুলো হাঁটার জন্য ভাল। বার বার হাঁটার সময় গাড়িঘোড়ার উপদ্রবে দাঁড়াতে হলে তা হাঁটায় বিঘ্ন ঘটায়। আর যানবাহনের ধোঁয়া শরীরের জন্যও ভাল নয়।

পোষ্য নিয়ে অনেকেই বেড়াতে যান। সেই অভ্যাসে রাশ টানবেন না, এতে পোষ্য কষ্ট পায়। বরং তাকে নিয়ে হাঁটার সময়টা আলাদা করে বরাদ্দ করুন। ওজন কমানোর জন্য হাঁটার সময় একা হাঁটুন। দ্রুত হাঁটার সঙ্গে তাল মেলাতে পোষ্যের অসুবিধা হবে ও সে তার বেড়ানো উপভোগ করবে না। আপনিও তাকে সঙ্গে নিয়ে সেকেন্ডে দুটো স্টেপের হিসেব বজায় রাখতে পারবেন না।

একই কারণে দলবেঁধে হাঁটতে বেরবেন না। অনেকেই এই সময় গল্পগাছা করতে করতে হাঁটেন। কথা না বললেও দলছুট হয়ে যাওয়ায় অনেকে হাঁটা শ্লথ করে ফেলেন। এই অভ্যাসগুলো কিন্তু মেদ কমানোর পথে বাধা হতে পারে। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতেও হাঁটবেন না। এতে হাঁটার গতি শ্লথ হয় ও হাঁপিয়ে গিয়ে বেশি দূর হাঁটা যায় না।

দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ বাড়াবে এমন কিছু ভাবতে ভাবতে হাঁটা চলবে না কিছুতেই। বরং সে সব ঠেকাতে ওই সময়টা ইয়ারফোন বা হেডফোনে গান শুনুন। এতে ফিল গুড হরমোনের জোগান যেমন বাড়বে, তেমনই হাঁটার রিদ্‌ম কমবে না। তবে ব্যস্ত রাস্তা, যানজটের পথে হাঁটলে হেডফোন অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।

হাঁটার সময় কী ধরনের জুতো পরছেন, তার দিকে খেয়াল রাখুন। পায়ের আরাম হয়, এমন জুতো পরুন। অনেকটা রাস্তা হাঁটা যায়, এমন স্পোটস শু বা পাম্পশু পরতে পারলেও ভাল।

হাতে বা পিঠে অনক বোঝা নিয়ে হাঁটবেন না। এতে ক্লান্তি বাড়বে, বেশি ক্ষণ হাঁটা সম্ভব হবে না। হাঁটার নির্দিষ্ট কোনও সময়ও নেই। সকালে সময় না পেলে বিকেলে বা সন্ধেয় হাঁটুন। রাতে খাওয়াদাওয়ার পরেও হাঁটতে পারেন। তবে খুব ভরাপেটে আবার একেবারে খালিপেটে হাঁটবেন না।

পায়ে বা হাঁটুতে চোট থাকলে বা কোমরের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই হাঁটার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দিনে কতটুকু হাঁটলে আপনার হাড় ও স্নায়ু তা সইতে পারবে, তা জেনে তবেই হাঁটাহাঁটি শুরু করুন।

মৃত্যুকে আটকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু ঠিকমত শরীর চর্চা করে মানুষের জীবনের আয়ু বৃদ্ধি করা সম্ভব। সুতরাং, শুধু হাঁটার মাধ্যমে একজন মানুষ শতকরা ৮০ ভাগ সুস্থ থাকতে পারে। তাই নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: