ইন্টারনেট
হোম / অর্থনীতি / বিস্তারিত
ADS

সংশোধনের হিড়িক উন্নয়ন প্রকল্পে

29 August 2023, 11:04:41

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রকল্প সংশোধনের হিড়িক পড়েছে। ছোট আকারের নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে একনেক বৈঠক-এমন শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এ পরিস্থিতিতে কোনো ঝুঁকি না নিয়ে এখনই প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসাবে আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে সংশোধনের জন্য উঠছে ১২টি প্রকল্প। এর মধ্যে ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বৃদ্ধি পাবে সাতটির। বাকি পাঁচটি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো প্রকল্প ৩-৪ দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও বাস্তবায়ন শেষ হচ্ছে না। এবার চতুর্থ ও পঞ্চম দফায় বাড়ানো হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জানা গেছে, অর্থ সংকট, ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যা, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সঠিকভাবে না হওয়া, মাঝপথে নকশা পরিবর্তন এবং করোনা মহামারির কারণে মালামাল ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায়ই মূলত প্রকল্প বাস্তবায়ন ঝুলে যাচ্ছে। এছাড়া ঠিকাদারের গাফিলতি, জনবল সংকট এবং চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করার কারণেও মেয়াদ বাড়ছে। এতে একদিকে যেমন অর্থের অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকল্পের সুফল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক সময় বাস্তব কারণে মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজন হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ঠিকমতো করা হয় না। যেনতেনভাবে প্রকল্প নেওয়ার পর শুরু হয় নানা অজুহাতে সংশোধন প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা গাড়ি ক্রয়, লোকবল নিয়োগসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রতি বেশি নজর দিয়ে থাকেন। এগুলো পূরণ হয়ে গেলে তখন শুরুর দিকে যে রকম আগ্রহ থাকে তা হারিয়ে ফেলেন। ফলে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর দুরবস্থা দেখা দেয়।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, যারা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কি কোনোই জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা নেই? এভাবে ছাড় দেওয়ার কারণে এটা এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগের মতো হয়েছে। সবাই মনে করে প্রকল্প তো সংশোধন করা যাবে, এত চিন্তা কিসের। ফলে এক্ষেত্রে সময়, অর্থ এবং সুফলের অপচয় ঘটছে। পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়নে শৃঙ্খলাও ভঙ্গ হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প সংশোধনের ক্ষেত্রে কিছু বাস্তব কারণও থাকে। তবে এটাও ঠিক যে, ঢিলেমি ও সমন্বয়হীনতার কারণে বারবার সংশোধনী প্রস্তাব আসে। ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া যে পাঁচ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব উপস্থাপন করা হচ্ছে এগুলোকে রুগ্ণ প্রকল্প বলব। কিন্তু কিছুই করার নেই। বাধ্য হয়েই সংশোধন করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয় এখানে নেই। আমার জানা নেই। এটা চলমান প্রক্রিয়া। গত কয়েকটি একনেক বৈঠক বন্ধ না থাকলে দু-চারটি করে অনুমোদন হলে এতগুলো জমা হতো না।

একনেক বৈঠকে উঠতে যাওয়া পাঁচটি প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জুন মাসে জারি করা ‘সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকা’র অনুচ্ছেদ ৫.২.৭ অনুযায়ী একান্ত অপরিহার্য হলে প্রকল্পের চতুর্থ ও তৎপরবর্তী মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর সম্মতিক্রমে একনেকের বিবেচনা ও অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। এ কারণে প্রকল্পগুলো একনেকে প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো হলো-সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ। এছাড়া উল্লাপাড়া রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ। যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ। নওগাঁ সড়ক বিভাগাধীন ১টি আঞ্চলিক ও ২টি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ এবং আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ)।

অন্যান্য সংশোধিত প্রকল্পগুলো হলো-স্মল হোল্ডার এগ্রিকালচার কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি)। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় মহানন্দা নদী ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম নির্মাণ। এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল ও এনসিলারি ভবন ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমের্জিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন (কম্পোনেন্ট-২) : দেশের ৮টি বিভাগীয় শহরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক ইমের্জিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ।

কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে একনেকের জন্য তৈরি করা হয়েছে প্রকল্পের সারসংক্ষেপ। সেটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্পের ৫ম বারের মতো মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু সেটি না হওয়ায় চতুর্থবার ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর মধ্যেও কাজ শেষ না হওয়ায় এবার এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, অনুদানের শর্ত অনুসারে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির মাঠ পর্যায়ে ভারতীয় পরামর্শক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোভিড-১৯ অতিমারি ও অন্যান্য কারণে নির্মাণসামগ্রী, মালামাল ইত্যাদি ভারত থেকে আমদানি করতে দেরি হয়েছে। এছাড়া ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড এবং চূড়ান্ত বিল পরিশোধের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি প্রয়োজন।

সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ শীর্ষক প্রকল্পটিরও ৫ম বার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ৫৮৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই এক বছরে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু চতুর্থ দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এতেও শেষ হয়নি কাজ। এবার পঞ্চমবারের মতো ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছর বাড়ানো হচ্ছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ৯৫ শতাংশ। প্রকল্পের অধীনে পণ্য ক্রয়ের ২৫টি প্যাকেজের মধ্যে ইতোমধ্যে ২২টি প্যাকেজের যাবতীয় কার্যক্রম শেষ হয়েছে। কিন্তু প্যাকেজ ১৮-এর অন্তর্ভুক্ত ৬৫টি রেকারের ১০ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশের অর্ধেক যন্ত্রাংশ বেনাপোল বন্দরে ছাড়করণের জন্য অপেক্ষাধীন। এই প্যাকেজটিসহ বাকি ২টি প্যাকেজের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এ প্রেক্ষিতে মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া চতুর্থবার মেয়াদ বাড়ছে উল্লাপাড়া রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পের। ১০০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা। কিন্তু তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এবার এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, রেলওয়ের হরিজেন্টাল ও ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্সে উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নকশা পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতা এবং মালামাল ও জনবলের দুষ্প্রাপ্যতা রয়েছে।

এদিকে যাত্রাবাড়ী (মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার)-ডেমরা (সুলতানা কামাল সেতু) মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে চতুর্থ দফায়। ৪০৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এক বছরে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু তৃতীয় দফায় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এতে কাজ শেষ না হলে এবার ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আরও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের জন্য মালামাল সংগ্রহ করা যায়নি। এছাড়া জনবল স্বল্পতার কারণে কাজটি সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। পাশাপাশি প্রকল্পটি বি-শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ মেলেনি। নওগাঁ সড়ক বিভাগাধীন ১টি আঞ্চলিক ও ২টি জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পে চতুর্থ দফায় মেয়াদ বাড়ছে। ৩১৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু এবার চতুর্থ দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়, পূর্তকাজের বিভিন্ন মালামালের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের প্যাকেজ নং-৮ এর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজ না করায় কাজটি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: