ইন্টারনেট
হোম / অর্থনীতি / বিস্তারিত
ADS

বৈদেশিক সহায়তার অর্থ কাটছাঁটে রেকর্ড

4 February 2022, 10:47:38

করোনা মহামারি, অর্থ ব্যয়ে ব্যর্থতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতিসহ নানা কারণে বৈদেশিক অর্থের ব্যবহার নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে প্রায় ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হচ্ছে।

যা এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) থেকে সম্প্রতি এ তথ্য পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে কর্মকর্তারা বলছেন এ হিসাব প্রাথমিক। এটি আরও কম হতে পারে। এখনো প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

চূড়ান্ত হতে কিছুটা সময় লাগবে। এই অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ আছে ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা। সেখান থেকে কমিয়ে এখন সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। খবর ইআরডি ও পরিকল্পনা কমিশন সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও ফরেনএইড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (ফাবা) উইংয়ের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে এডিপি তৈরির সময় সঠিকভাবে লক্ষ্য নির্ধারণ সম্ভব হয়নি।

ফলে এখন অনেক বেশি অর্থ বরাদ্দ কমাতে হচ্ছে। ওই সময় ভার্চুয়ালি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাড়াহুড়োর মধ্যে এডিপিতে বৈদেশিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার বলেন, এই সময়ে এত টাকা কাটছাঁটের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। তবে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর কাছে বাজেট সহায়তা চেয়েছিল।

সেটি পায়নি। এটিও একটা কারণ হতে পারে। এছাড়া মূল সমস্যাটা হতে পারে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ বৈদেশিক অর্থায়ন আছে এমন প্রকল্প যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে অর্থছাড় কিভাবে হবে।

ফলে অর্থবছরের শুরুতে যে চিন্তা থেকে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছিল সেখান থেকে সরে আসা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুরুতে অর্জন অযোগ্য এবং উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য স্থির করা হয়। ফলে মাঝপথে এসে বরাদ্দ কমাতে হয়। বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বরাদ্দ নির্ধারণ করা উচিত।

সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার যে লক্ষ্য ধরা হয়েছিল সংশোধিত এডিপিতে এসে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। কিন্তু এত বেশি টাকা বাদ দেওয়া হয়নি কোনো অর্থবছরেই।

এক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক অংশে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে কাটছাঁট করে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কমিয়ে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয় ৬৩ হাজার কোটি টাকা।

২০১৯-২০ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমিয়ে আরএডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৬২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা।

সেখান থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা বাদ দিয়ে আরএডিপিতে বরাদ্দ ধরা হয় ৫১ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৮ হাজার ৪১১ কোটি টাকা কমিয়ে আরএডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫২ হাজার ৫ কোটি টাকা।

ইআরডির সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আজম যুগান্তরকে বলেন, টাকার অঙ্কে বেশি মনে হলেও শতাংশের দিক থেকে হয়তো খুব বেশি হবে না। কেননা বাজেটের আকারতো বেড়েছে।

সেই সঙ্গে বড় কোনো প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক সহায়তা ধরা থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়ত তা পাওয়া যায়নি। সাধারণত এমন হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে কি ঘটেছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। হঠাৎ করে মন্তব্য করাটাও ঠিক নয়।

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক সহায়তার অর্থ ব্যয় করেছে ১৯ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা বা ২২ দশমিক ১১ শতাংশ।

গত অর্থবছরের একই সময়ে খরচ হয়েছিল ১৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, বা ২৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। এছাড়া অর্থবছরের ৬ মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) পেরিয়ে গেলেও এখন ১০ শতাংশের নিচে বৈদেশিক অর্থব্যয় করেছে ৮টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা।

এগুলো হলো-অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ১ দশমিক ১৬ শতাংশ বৈদেশিক সহায়তা ব্যয় করেছে। এছাড়া নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয় ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং আইন ও বিচার বিভাগ ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ব্যয় করেছে।

এছাড়া প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ০১ শতাংশ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ অর্থ খরচ করেছে।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: