ইন্টারনেট
হোম / সারা বাংলা / বিস্তারিত
ADS

তিন নদীর মোহনার বাঁধ ভেঙে সিলেটে পানি বৃদ্ধি, ত্রাণের জন্য হাহাকার

21 May 2022, 10:35:07

বন্যা কবলিত সিলেটে ভারতের আসাম থেকে বরাক নদীর অমশসীদে বাঁধ ভেঙে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়ে গেছে। ফলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য সরকারের তরফ থেকে যেসব বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে ত্রাণের জন্য হাহাকার তৈরি হয়েছে। তবে প্রশাসনের লোকজন জানিয়েছেন বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

গেল সপ্তাহ খানেক আগে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও জেলার ৯০টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়। এসব এলাকার কিছুসংখ্যক লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকেই অনহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন।

সর্বশেষ শুক্রবার মধ্যরাতে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থল ভারতের বরাক নদীর বাঁধ ঢলে ভেঙে গেছে। বিশাল এই বাঁধ ভাঙনের ফলে নতুন করে তলিয়ে গেছে জকিগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন নতুন আরও লক্ষাধিক মানুষ।

বারোঠাকুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসীন মর্তুজা টিপু বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে রাত থেকে প্রবল বেগে এলাকায় পানি ঢুকছে। এতে বারোঠাকুরী, কসকনকপুর, কাজলশাহ সুলতানপুর ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে। এসব ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।’

চেয়ারম্যান টিপু বলেন, ‘৩৫ ফুট লম্বা বাঁধটি কয়েকদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। স্থানীয়রা রাত-দিন চেষ্টা করে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।’

স্থানীয়রা জানান, ‘মধ্যরাতেই বাঁধ ভাঙার খবর এলাকার মসজিদগুলোর মাইকে প্রচার করা হয়। এতে এলাকাজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। এই বাঁধ ভাঙার কারণে সুরমা-কুশিয়ারার তীরবর্তী জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ ফেঞ্চুগঞ্জ ও সিলেট নগরের পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

এলাকাবাসী জানান, ত্রিমোহনার বাঁধ অনেক বড় ও শক্তিশালী করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক দুর্বলতায় সেটা করা হয়নি। এজন্যই বাঁধ ভেঙে গেছে। আর আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে।

জকিগঞ্জে তিন নদীর মোহনার বাঁধ ভাঙায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমাদের ৩৫টি জায়গায় বাঁধ ভেঙে গেছে। যে বেগে পানি আসছে, তাতে সবগুলো বাঁধই ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি না কমলে এগুলো সংস্কার করাও যাবে না।’

গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও নগরের কোনো এলাকার নতুন করে প্লাবিত হয়নি।

এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসন থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলার ৯০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ২০ লাখ মানুষ। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা, বোরো ধান এক হাজার ৭০৪ হেক্টর ও গ্রীষ্মকালীন সবজি এক হাজার ৩৩৪ হেক্টর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। জেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

জকিগঞ্জ উপজেলার বারোহাল ইউনিয়নের কিলো গ্রাম ষাটঘরের বাসিন্দা আবিদ রহমান বলেন, ‘আমাদের এলাকা বেশ কয়েকদিন ধরে আমাদের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে গেছে। কাজ নাই। কীভাবে খাবো চিন্তায় আছি। সরকার এখনো আমাদের কোনো সহযোগিতা করেনি। আগে এলাকার মানুষও সাহায্য করতো। এখন আমাদের পাশে কেউ নাই। আল্লাহ ছাড়া আমাদের সাহায্য করার কেউ নাই।’

জকিগঞ্জ উপজেলার অমশসীদ এলাকার বাসিন্দা মাওলানা মখলেছুর রহমান পেশায় শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘শুনেছি ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমরা পাইনি এবং দেখিনি। আমাদের এলাকার অনেকেই খুবই খারাপ অবস্থায় আছেন। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন।’

মালেখা বিবি নামে ৫০ বয়সী এক নারী বলেন, ‘আমাদের কেউ সাহায্য করেনি। আমরা খুব কষ্টে আছি।’

কসকখনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন লস্কর বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় সব বাড়িই প্লাবিত। এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ পাইনি। নিজস্ব তহবিল থেকে কিছু বিতরণ করছি।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সরকার থেকে আমরা যা পাচ্ছি সবই বিলিয়ে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে ৩০৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৫ লাখ টাকা ও প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ আসবে।

অন্যদিকে সিলেটের কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন, জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান, জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম প্রমুখ। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ত্রিমোহনার বাঁধ পরিদর্শন শেষে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বন্যাদুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দুর্ভোগ স্বচক্ষে দেখেছি। পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছি। তাদের ব্যাপারে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও বেশি করে যাতে সহায়তা করা যায় সে ব্যাপারে কথা বলবো।

ত্রিমোহনার বাঁধের স্থায়ী সমাধান করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আলোচনা সাপেক্ষে নেওয়া হবে বলেও জানান বিভাগীয় কমিশনার।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: