না.গঞ্জে ট্রলার ডুবি: ৩৩ ঘণ্টায়ও খোঁজ মেলেনি ১০ জনের
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার বক্তবলীর চর মধ্য নগরের বাড়িতে স্ত্রী জিয়াসমিন আক্তার, বড় মেয়ে তাসনিম আক্তার, একমাত্র ছেলে তামিম ও দেড় বছরের শিশুকন্যা তাসফিয়াকে রেখে মঙ্গলবার কুড়িগ্রামে তাবলিগে যান শফিকুল ইসলাম সোহেল। সেখানে সকাল ১০টার দিকে মুঠোফোনে জানতে পারেন তার পরিবাবের সবাই নদীতে ডুবে গেছে।
এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে নারায়ণগঞ্জের ধর্মগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীর তীরে ছুটে এসে চিৎকার আহাজারি করে রাতভর কেঁদেছেন। তাকে অসুস্থ অবস্থায় স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে গেলেও বার বার ছুটে আসছেন ধলেশ্বরীর তীরে।
তার ভাতিজা আবদুর রহমান বলেন, চাচা সোহেল তাবলিগে গেলে চাচি (জেসমিন) ও ছোট বোন তাসনিম ও তাসফিয়া এবং ছোটভাই তামিমকে নিয়ে পঞ্চবটি আমতলায় এলাকায় তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। বুধবার সকালেও সেখানে যেতে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন।
পথে মুঠোফোনে চাচি তার বোনকে জানান তারা ট্রালারে আছেন। এরপর চাচি চিৎকার করতে শুরু করেন, মোবাইলে চাচি বার বার বলছিলেন, ট্রলার ডুইবা যাইতাছে। এরপর আমরা নদীর তীরে গিয়ে দেখি লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবছে।
আব্দুর রহমান জানান, বড় বড় নদীতে লঞ্চ ডুবে যায়। সেখানে দ্রুত সব কিছু হয়ে যায়। কিন্তু এখানে তারা কিছুই করতে পারছে না। আমগো পরিবারের চারজন মানুষ এখনও নিখোঁজ। দুই দিন পার হয়ে যাইতাছে। কিন্তু তারা সন্ধান করতে পারতাছে না। তাহলে কী উদ্ধার অভিযান করতাছে। আমাগো পরিবারের সদস্যগো জীবিত বা মৃত হোক আমরা তাদের চাই।
ট্রলার ডুবিতে তাদের মতো এখনো নিখোঁজ রয়েছেন পোশাক কারখানার শ্রমিক জোসনা বেগম। তিনিও ওই ট্রলারে করে নদী পার হয়ে কারখানায় যাচ্ছিলেন। জোসনা বেগমের নিখোঁজের সংবাদ পেয়ে নদীর ঘাটে ছুটে এসেছেন তার ছোট ভাই মানিক মিয়া। তিনি বলেন, জোসনার এক ছেল ও এক মেয়ে আছে। ছেলেটি কলেজে পড়ালেখা করে আর মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে। সংসারের খরচ যোগাতে জোসনা গার্মেন্টসে কাজ করেন। মানিক বলেন, আমার মা মারা গেছে গত বছর। এখন স্বামী হারা বোনটাও নিখোঁজ।
উদ্ধার অভিযানে বিষয়ে আক্ষেপ করে মানিক বলেন, বুধবার থেকে এখনও তারা একটা মানুষের খোঁজ করতে পারলো না। তারা কী উদ্ধার অভিযান করছেন। আমি আমার বোনরে ফিরা চাই।
৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবা শামসুদ্দিনকে হারিয়ে ট্রলার ভাড়া করে নদীতে তাকে খুঁজছে বড় ছেলে দিনমজুর রবিউল আওয়াল। তিনি বলেন, আমার বাবা শহরে গিয়া বিভিন্ন এলাকা থেকে টিনের ড্রাম কিনেন। তারপর বাবা সেগুলো বিক্রি কইরা যা পায় তা দিয়া নিজের খরচ চালায়। এই কাজ কইরাই বাবা আমাগো বড় করছে। বাবায় প্রতিদিন ভোরে শহরে যাইতো, সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরে আইতো।
রবিউল বলেন, বুধবার সকালেও শহরে যাইতে টলারে উঠছিল। কিন্তু আর বাড়িতে ফিরে নাই। গ্রামের কয়েকজনের কাছ থেকে জানলাম যেই ট্রলার ডুবছে ওই ট্রলারের সামনে গামছা মাথায় দিয়া আমার বাবা বসে আছিল। এখনো আমার বাবারে পাই নাই। আপনারা আমার বাবারে আইন্না দেন।
যাত্রীবাহী লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া ট্রলারের যাত্রীদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন বক্তাবলী এলাকার কলেজ শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন (২০), নেয়ামতপুর এলাকার মসজিদের মোয়াজ্জিন আব্দুল্লাহ, (২১) চর মধ্য নগরের জিয়াসমিন আক্তার (৩২) ও তার মেয়ে তাসনিম আক্তার (১৫), ছেলে তামিম (৮) এবং দেড় বছরের ছোট্ট শিশু তাসফিয়া। এছাড়াও এ দুর্ঘটনায় উত্তর গোপাল নগর এলাকার মোতালেব মিয়া (৪০), চর বক্তাবলীর আওলাদ হোসেন (৩২), একই এলাকার পেশাক শ্রমিক জোসনা বেগম (৪০) ও হকার শামসুদ্দিন (৬৫) নিখোঁজ রয়েছেন।
তাদের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি উদ্ধার অভিযান করলও ৩৩ ঘণ্টায়ও তাদের সন্ধান করতে পারেনি। এতে উদ্ধার অভিযান নিয়ে আক্ষেপ করছেন নিখোঁজের স্বজনরা।
সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত ফেরদৌস জানান, এখন পর্যন্ত নিখোঁজ ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। তাদের সন্ধানে অভিযান চলছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সন্ধান না পাওয়া যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযান অব্যহত থাকবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উদ্ধার অভিযান স্থাগিত করা হয়েছে। শুক্রবার যথারীতি অভিযান চলবে।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: