ইন্টারনেট
হোম / সারা বাংলা / বিস্তারিত
ADS

শোকে স্তব্ধ পীরগঞ্জ, স্বজনদের লাশের অপেক্ষা

27 March 2021, 6:45:11

রাজশাহীর কাটাখালীতে একটি দুর্ঘটনায় শোকাবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে রংপুরের পীরগঞ্জে। একদিনে সড়কে একই উপজেলার পাঁচ গ্রামের ১৭ জনের প্রাণহানির ঘটনায় স্তব্ধ পুরো উপজেলা। উত্তরের এই উপজেলার ৫ গ্রামের এসব বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে চলছে কান্নার রোল। নিহতরা প্রতিবেশী হওয়ায় এক বাড়ির কান্না ছাপিয়ে যাচ্ছে আরেক বাড়িতে। কেউ কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। বাইরে থেকে যারা আসছেন, তাদের সবার চোখেও পানি। ঘটনার একদিন পর এখন লাশের অপেক্ষায় রয়েছেন আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী।

শুক্রবার রাজশাহীর কাটাখালীতে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মাইক্রোবাসে আগুন ধরে যায়। এতে সাত শিশুসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়। নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। মারা যাওয়া সবার দাফন হবে শনিবার। নিহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী। পদ্মার পাড়ে পিকনিক শেষে তাদের এক পীরের কবর জিয়ারত করে বাড়ি ফেরার কথা ছিল।

শনিবার পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের বড় রাজারামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহতদের স্বজনদের অনেকে ব্যস্ত স্বজনদের মরদেহ কোথায় রাখা হবে, কখন দাফন হবে তা নিয়ে। আর অনেকে ব্যস্ত হয়েছেন কবর খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে। কেউ কাটছেন বাঁশ। ঘরে চলছে কোরআন তেলাওয়াত। চারদিকে শোকাবহ পরিবেশ। লাশের অপেক্ষায় থাকা মানুষগুলোর চোখ তখনও অশ্রুসিক্ত। স্বজন হারানোর শোকে রাতভর আহাজারি করতে করতে তাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। তাদের ভাষায় স্মরণকালে এ রকম শোক নেমে আসেনি রংপুরবাসীর জীবনে।

রাজশাহীর ওই দুর্ঘটনায় বড় রাজারামপুর গ্রামের একই পরিবারের পাঁচজন মারা গেছেন। তারা হলেন- সালাহউদ্দিন, তার স্ত্রী সামছুন্নাহার, সাত বছর বয়সী ছেলে সাজিদ, চার বছর বয়সী মেয়ে সাফা এবং সামছুন্নাহারের বড় বোন কামরুন্নাহার।

সালাহউদ্দিনের চাচাতো ভাই নুরুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনার খবর শুনে শুক্রবার রাতে মরদেহ আনার জন্য তাদের পরিবারের তিনজন রাজশাহী গেছেন। কিন্তু মরদেহ শনাক্ত করতে পারছেন না। মরদেহ পাওয়া মাত্র তারা চলে আসবেন। মরদেহ পীরগঞ্জে আসার পর জানাজার নামাজ ও দাফনের ব্যাপারে সময় নির্ধারণ করা হবে।

রাজশাহীর ওই দুর্ঘটনায় একই ইউনিয়নের বড় মজিদপুর গ্রামের একটি পরিবারের আরও পাঁচজন মারা গেছেন। তারা হলেন- ফুল মিয়া, তার স্ত্রী নাজমা বেগম, ছেলে ফয়সাল, মেয়ে সাবিয়া ও সুমাইয়া।

ওই বাড়িতে দেখা যায়, ফুল মিয়ার মাসহ আত্মীয়-স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাদের বুকফাটা আহাজারি দেখে সেখানে থাকা লোকজনও চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। তারাও অঝোরে কাঁদছেন। সবার বুকফাঁটা কান্নায় ওই এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে এসেছে।

নিহত ফুল মিয়ার মামা আব্দুস ছালাম বলেন, ফুল মিয়া অনেক ভালো ছেলে। তাকে সবাই পছন্দ করেন। অনেক কষ্টে গড়া সংসারে যখন একটু সুখ এসেছিল তখনই দুর্ঘটনায় তার সব সুখ শেষ করে দিল। এতো বড় শোক সইতে পারছি না।

পীরগঞ্জ পৌর এলাকার প্রজাপাড়ার বাসিন্দা তাজুল করিম ভুট্টু। ৪৫ বছর বয়সী ঠুট্টু বন্ধু ফুল মিয়ার আমন্ত্রণে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সঙ্গী হয়েছিলেন রাজশাহী ভ্রমণ যাত্রায়। কিন্তু ওই মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় ভুট্টুসহ তার স্ত্রী মুক্তা বেগম ও ছেলে ইয়াসিন মারা গেছেন।

সকালে ভুট্টুর বাড়িতে দেখা যায় স্তব্ধ পরিবেশ। ওই বাড়িতে কান্নাকাটি করার মতো কেউ নেই। পরিবারের সব সদস্যই নিহত হওয়ায় সেখানে আর কেউই নেই আহাজারি করার জন্য।

পীরগঞ্জের দ্বাড়িকাপাড়ার ১৯ বছর বয়সী পাভেল হারিয়েছে তারা বাবা মোখলেছার রহমান ও মা পারভীনকে। পাভেলের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন।

পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। এদের মধ্যে ১১ জনের মরদেহ পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। নিহতদের পরিবার থেকে অনেকেই রাজশাহীতে মরদেহ গ্রহণ করতে গিয়েছেন। কিন্তু ডিএনএ নমুনা নিয়ে মরদেহ শনাক্ত করাসহ আইনি প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করবেন মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। এসব মরদেহ পীরগঞ্জে কখন আনা হবে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: