ইন্টারনেট
হোম / রাজধানী / বিস্তারিত
ADS

বারবার উচ্ছেদের পরেও জমজমাট রাজধানীর ফুটপাত

16 June 2022, 12:22:32

পথচারীদের নিরাপদে হাঁটার জায়গা ফুটপাত। কিন্তু বর্তমানে রাজধানীর ফুটপাতগুলোর বেশির ভাগই পথচারীদের অধিকারে নেই। ফুটপাত থাকলেও তা স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারছেন না রাজধানীবাসী । এমনকি শুধু ফুটপাত নয়, রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলো দখল করেও চলছে তাদের রমরমা ব্যবসা।

নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোর মাঝে অন্যতম রাজধানীর নিউমার্কেট। এছাড়া এর আশেপাশের চাঁদনী চক, গাউছিয়া, চন্দ্রিমা মার্কেট, হকার্স মার্কেট এলাকায় সারা বছরই লেগে থাকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। এই ভিড়ে সবচেয়ে বেশি বাদ সাধে প্রায় পাঁচ হাজার হকার। হকারের দখলে থাকে ফুটপাত, মূল সড়কসহ ফুট ওভারব্রিজও। এসব দূর করতে বিভিন্ন সময় পুলিশের উচ্ছেদ অভিযান চললেও কার্যত তা স্থায়ী হচ্ছে না। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হকাররা সায়েন্স ল্যাব থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত উভয় পাশের ফুটপাত ও মূল সড়কের অর্ধেক দখলে রেখে ব্যবসা করছেন। আবার কোথাও ফুটপাতের ওপর মূল দোকানের সামনেই ব্যবসা করছে ব্যবসায়ীরাও।

এলাকার বহুল ব্যবহৃত ফুট ওভারব্রিজ দুটিতেও হকারের কারণে চলাচল করতে পারছে না পথচারীরা। দেখা যায় ; নীলক্ষেত রোড, নিউ মার্কেট, পিলখানা রোড, মিরপুর রোড ও আশপাশের এলাকার প্রায় সব ফুটপাতে বসেছে অসংখ্য হকার। কোথাও ফাঁকা জায়গা নেই। পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছে না। গাউছিয়া মার্কেট ও চাঁদনী চকের সামনে দোকান বসিয়ে হাঁকডাক ছেড়ে পণ্য কেনার জন্য ডাকছে হকাররা। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ লোকজন। বিশেষ করে সাধারণ স্কুল শিক্ষার্থীরাও এর ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে ।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে এক পথচারী শিক্ষার্থী জানান, রাস্তাঘাটে ফুটপাতে এসব দোকানের জন্য মানুষ চলাচল করতে পারছেন না। জ্যাম লেগেই থাকছে পাশাপাশি চারদিকে ময়লা পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাই সরকার বা কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করা ; যাতে এসব দোকানপাটের কারণে জনসাধারণের ভোগান্তি না হয়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, (২০১৫-২০১৬) অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুয়ায়ী ডিএনসিসির সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় ছিলো ২১৪ কোটি টাকা। কিন্তু তা (২০১৯- ২০২০) সালের সংশোধিত বাজেটে গিয়ে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩২ কোটি টাকা। সমীক্ষা আরো দেখায় বিগত (২০১৫ – ২০২০) এর অর্থবছরে সড়ক ও ট্রাফিক অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন খাতে সরকারের ব্যায় ছিলো প্রায় ১১৩৮ কোটি টাকা। তবে ব্যায়ের তুলনায় উন্নয়ন আসলেই সম্ভব হয়েছে কি!

এদিকে রাজধানীর জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ার একযুগ পরও সে আদেশ বাস্তবায়ন হয়নি। এতে করে ভোগান্তিতে ঢাকা কোর্টের বিচারক, আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীসহ সাধারণ মানুষ। মাঝে মাঝে উচ্ছেদ করা হলেও কয়েকঘণ্টা পর আবার সেই পুরোনো চিত্র দেখা যায়।

এছাড়া গত ২০১২ সালে প্রতিকার চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়। শুনানি শেষে ট্রাফিক জ্যামের ভোগান্তি দূর করতে জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রাস্তার পাশের ফুটপাতে ভ্যান ও ঠেলাগাড়ি পার্কিং,দোকানের পণ্য রাখা সহ ফেরিওয়ালা ও ফলের দোকান যেন বসতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। কিন্তু সে নির্দেশনা গত দশ বছরেও বাস্তব হয় নি।

ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করতে গত ২১ বছর আগে হাইকোর্ট সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেয়। জনস্বার্থে করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের দেয়া রায়ে বলা হয়েছিল “ঢাকার ফুটপাত ও চলাচলের পথকে জনসাধারণের ব্যবহার এবং পথচারীদের জন্য অবশ্যই পরিচ্ছন্ন ও উন্মুক্ত রাখতে হবে”। ওই রায়ে আরও বলা হয়েছিল, অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং সড়কের ফুটপাত ও চলাচলের পথে নির্মাণসামগ্রী রাখা যাবে না।

তবে হাইকোর্টের রায়ের ২০ বছর পরেও রাজধানীর ফুটপাতগুলো এখনো সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করা সম্ভব হয়ে উঠছে না কেন বা ডিএনসিসি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ (উপসচিব) অঞ্চল-৫ জানান, “ফুটপাতের উচ্ছেদ প্রতিবছরই হয়ে থাকে কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। এটাই মূলত বাস্তবতা যার কারণ হকারদের আসলে কোনো সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। এছাড়া রাজধানীতে প্রচুর পরিমানে হকার রয়েছে এবং হকারদের নির্দিষ্ট কিছু চাহিদা রয়েছে। যার ফলে যে কোন পরিকল্পনা দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া এসব উচ্ছেদ একেবারে নির্মুল করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, “এসব উচ্ছেদ একেবারে করা সম্ভব নয় তবে বর্তমানে এর কিছু কিছু জায়গা নিয়ে কাজ করছে ডিএনসিসি।”

শুধু মার্কেটই নয় রাজধানীর ব্যস্ততম সড়ক মোহাম্মদপুর , শ্যামলী সহ বিভিন্ন সাধারণ সড়কেও একই চিত্রের দেখা মিলেছে । এইসব এলাকার ফুটপাত দখলে নেয়ায় অনেক স্থানেই সঙ্কুচিত হয়েছে মানুষের চলার পথ। বাড়ছে যানজট। অবৈধ স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানের দখলে থাকা এসব ফুটপাতে পথচারীদের হাঁটার সুযোগ কমই মেলে। ফুটপাত জুড়ে ব্যবসায়ীদের পসরা আর ক্রেতাদের ভিড়। নগর প্রশাসন বিভিন্ন সময় ফুটপাত জুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করলেও তা টেকসই হয় না। বিভিন্ন সময়ের উচ্ছেদ অভিযান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফুটপাতের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও সোচ্চার অবস্থানে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। একদিকে উচ্ছেদ করতে না করতে অন্যদিকে আবার গড়ে তোলে অবৈধ স্থাপনা। যা গত কয়েক বছরেও রাজধানীর সড়ক থেকে নির্মুল করা সম্ভব হয়ে উঠেনি।সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: