- রাফাহতে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী: নেতানিয়াহু
- মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির
- নাটোরে স্কুলছাত্রকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা
- ফখরুলের কাছে বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন কাদের
- গ্রামে ব্যাংকের ঋণ ও আমানত কমছে
- এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী
মাঠ রক্ষার দাবিতে প্রতিবাদ, আটকের পর মা-ছেলেকে ছেড়ে দিল পুলিশ
রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার অন্যতম আন্দোলনকারী ও সমাজকর্মী সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে (১৭) গ্রেপ্তারের প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। গতকাল রবিবার সকালে ওই মাঠে কলাবাগান থানা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হলে সৈয়দা রত্না ফেসবুক লাইভে এসে এর প্রতিবাদ জানানোর সময় তিনি ও তাঁর ছেলেকে আটক করা হয়।
এর আগে সকালে পুলিশ বলেছে, কলাবাগান থানা ভবন নির্মাণকাজে বাধা ও ঠিকাদারকে ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ও সমাজকর্মী মাকে আটক করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়।পরে রাত ১২টার দিকে মুচলেকা নিয়ে দুজনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ওই মাঠে আশপাশের শিশু-কিশোর, তরুণরা খেলাধুলা করে। সেই মাঠে থানা ভবন নির্মাণ করার প্রতিবাদ করায় সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে আটক করেছিল পুলিশ।
সন্ধ্যায় ঘটনার বিবরণ দিয়ে সৈয়দা রত্নার মেয়ে শেউতি শাহগুফতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল থেকে মাঠে ইটসহ নির্মাণসামগ্রী ফেলা শুরু হয়। আম্মু সকাল ১০টার দিকে বের হয়ে মাঠের ওই স্থান থেকে ফেসবুক লাইভ করেন। তখন এক কথা দুই কথায় পুলিশ মাকে ধরে ভ্যানে ওঠায়। সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে আমার ছোট ভাই আমাকে ফোনে জানায়, আম্মুকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এ কথা বলে সে ফোন কেটে দেয়। আমি তাকে ফোন করলে সে বলে, বুবু আমাকেও ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ’
কলাবাগান থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা (এসআই) মো. মিজান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত ওসি বলতে পারবেন। ’ এ বিষয়ে জানতে ওসি পরিতোষ চন্দ্রের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে এ বিষয়ে পুলিশের নিউ মার্কেট অঞ্চলের সহকারী কমিশনার শরিফ মো. ফারুকুজ্জামান বলেন, স্থানীয় লোকজন ও শিশুদের এনে কাজে বাধা দেওয়ার কারণে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
কলাবাগানের বাসিন্দারা বলেন, তেঁতুলতলা মাঠের এক বিঘা জমি একজন বিহারির মালিকানায় ছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর তিনি আর ফেরেননি। সেই জায়গায় স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে। সরকারি খাসজমি হিসেবে নথিভুক্ত এই ফাঁকা জায়গাটিতে থানা করতে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর পর থেকেই সেই জায়গাটি খেলাধুলার জন্য ফাঁকা রাখার দাবি উঠেছে।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পান্থপথে কনকর্ড টাওয়ারের সামনে কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে ‘কলাবাগান এলাকাবাসী’র ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। ওই মানববন্ধনে স্থানীয় শিশু-কিশোর ও এলাকাবাসী অংশ নেয়।
মানববন্ধনে এলাকাবাসী জানিয়েছিল, শিশুদের খেলাধুলার পাশাপাশি এই মাঠে ঈদের নামাজ, জানাজা ও বিভিন্ন সামাজিক আয়োজন করা হয়। স্থানীয় লোকজন জায়গাটি মাঠ হিসেবেই ব্যবহার করে আসছে।
মানববন্ধনে স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দা রত্না বলেছিলেন, মাঠটি রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের কার্যালয়েও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এলাকার সংসদ সদস্য আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি বিষয়টি দেখবেন। কিন্তু এখন শিশুদের যাতায়াতই বন্ধ হয়ে গেল।
গত ৩১ জানুয়ারি ওই মাঠে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে পুলিশ। সেদিন মাঠে খেলতে যাওয়া কয়েকটি শিশুর কান ধরে উঠবস করান পুলিশ সদস্যরা। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়।
২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ঢাকা জেলা প্রশাসন এক নোটিশে জানায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের কলাবাগান থানার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য এই সম্পত্তি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই নোটিশে এই জমিকে পতিত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। নোটিশ দেওয়ার পর থেকেই স্থানীয় লোকজন জায়গাটিকে মাঠ হিসেবেই রাখতে প্রতিবাদ করে আসছিল।
বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা
সৈয়দা রত্না ও তাঁর ছেলেকে আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিকরা। সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে এএলআরডি, বাপা, বেলা, আসক, ব্লাস্ট, গ্রিন ভয়েস, নিজেরা করি, নাগরিক উদ্যোগ, নারী পক্ষ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি ও টিআইবি। এসব সংগঠন আজ সোমবার সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনও ডিআরইউতে আজ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে। তাদের আটকের নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: