- ২৬ মে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’
- আগামীকাল শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা
- জেনারেল আজিজের ওপর ‘ভিসানীতি’ প্রয়োগ হয়নি: কাদের
- রাইসির শোকসভায় যোগ দিতে ইরান যাবেন পুতিন
- রাইসির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ
- উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে বিজয়ী যারা
- কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী
- ভিকারুননিসায় সেই ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল, অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ
চলে গেলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক
উপমহাদেশের বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত ৯ টার দিকে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার সন্তান ইমতিয়াজ হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে হাসান আজিজুল হক আমাদের ছেড়ে চলে যান।
এর আগে আগস্টের শেষে ইলেকট্রোলাইন ইমব্যালেন্স ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন হাসান আজিজুল হক। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাসায় রেখে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। গত ২২ আগস্ট অনেক সাহিত্য কর্মের স্রষ্টা হাসান আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে রাজশাহী থেকে তখন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় আনা হয়। এরপর তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)ভর্তি করা হয়। সেখানে হাসপাতালটির পরিচালক জামাল উদ্দিনকে প্রধান করে ১৬ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসা শেষে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। এরপর থেকে বাসাতেই থাকতেন এই সাহিত্যিক। বাসাতে থেকেই নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। হাসান আজিজুল হকের ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইমতিয়াজ হাসান বলেন, ‘আব্বার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে।’
এর আগে এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি তার বাবার অসুস্থতার কথা জানান। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা। গত এক মাস যাবৎ তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওনার পরিচর্যা করতে হয়। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাকে রাখবেন।’ হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায়ে আবাসিক এলাকা ‘বিহাস’ অনেক বছর ধরে তার ঠিকানা।
১৯৬০ এর দশকে তিনি কথাসাহিত্যিক হিসেবে সুনাম অর্জন করেন তার মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ।
১৯৭০ সালে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে তাকে একটি বেসরকারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘সাহিত্যরত্ন’ উপাধি দেওয়া হয়। গল্পগ্রন্থ আত্মজা ও একটি করবী গাছ, শীতের অরণ্য কিংবা উপন্যাস আগুনপাখি তাকে নিয়ে গেছে অনন্য এক উচ্চতায়। হাসান আজিজুল হকের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে জীবন ঘষে আগুন, পাতালে হাসপাতালে, নামহীন গোত্রহীন, চলচিত্রের খুঁটিনাটি, মা মেয়ের সংসার, বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প, সক্রেটিস, বৃত্তায়ন, শিউলি, ফিরে যাই ফিরে আসি, উঁকি দিয়ে দিগন্ত প্রভৃতি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের মধ্যে রয়েছে একাত্তর: করতলে ছিন্নমাথা, লাল ঘোড়া আমি, ফুটবল থেকে সাবধান ইত্যাদি। সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে গোবিন্দচন্দ্র দেব রচনাবলী, একুশে ফেব্রুয়ারি গল্প সংকলন, জন্ম যদি তব বঙ্গে ইত্যাদি। কথাসাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা। এর মধ্যে আরো রয়েছে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৭), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮), কাজী মাহবুব উল্লাহ ও বেগম জেবুন্নিসা পুরস্কার। ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন আনন্দ পুরস্কার। ২০১২ সালে তিনি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি পান।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: