ইন্টারনেট
হোম / আন্তর্জাতিক / বিস্তারিত
ADS

কিয়েভে তীব্র লড়াই চলছে

27 February 2022, 10:08:17

ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে রাজধানী কিয়েভে পৌঁছে গতকাল শনিবার রুশ বাহিনীকে তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। যুদ্ধের তৃতীয় দিনে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি রক্তক্ষয় ও ধ্বংস বন্ধে জোর তৎপরতা চলছে আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্গনেও।

স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ গতকাল তৃতীয় দিনে আরো জোরদার হয়।ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি চলে পদাতিক বাহিনীর হামলাও। তবে পদাতিক বাহিনীর হামলা ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ। রুশ স্থলসেনারা সম্মুখযুদ্ধের পাশাপাশি অন্তর্ঘাতমূলক হামলাও (স্যাবোটাজ) চালাচ্ছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এসব হামলা বন্ধের জন্য কিয়েভে গতকাল থেকে দুই দিনের জন্য কারফিউ জারি করেছে সরকার।

রাশিয়ার কমান্ডাররা ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে তাঁদের অগ্রযাত্রার ধীরগতিতে ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছেন এবং লজিস্টিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন।

তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, মনে হচ্ছে, মস্কো তার সেনাদের পর্যাপ্ত রসদ সরবরাহ করেনি। ফলস্বরূপ কমান্ডাররা তাঁদের পরিকল্পনায় রদবদল করতে বাধ্য হয়েছেন।

মেলিটোপল শহর দখলের দাবি : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দেশটির গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ইন্টারফ্যাক্স ও স্পুিনক জানিয়েছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিয়ার মেলিটোপল শহর দখলে নিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ইউক্রেনপক্ষের তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আর রাজধানীর পরিস্থিতি নাজুক হতে থাকায় গতকাল সকালে কারফিউ জারি করে ইউক্রেন সরকার। আগামী সোমবার পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে।

বেসামরিক হতাহত বাড়ছে : রাশিয়ার নানামুখী হামলা আর ইউক্রেনের প্রতিরোধের মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে বেসামরিক লোকের মৃত্যুর সংখ্যা। গতকাল পর্যন্ত তিন শিশুসহ ১৯৮ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে কিয়েভ কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ৩৩ শিশুসহ এক হাজার ১১৫ জন আহত হয়েছে বলেও জানায় তারা।

এ ছাড়া ফেসবুক পোস্টে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী গতকাল দাবি করে, হামলা চালাতে এসে সাড়ে তিন হাজারের বেশি রুশ সেনা নিহত হয়েছে এবং অন্তত ২০০ জন আটক হয়েছে। তারা আরো দাবি করেছে, রাশিয়া গতকাল পর্যন্ত ১৪টি বিমান, আটটি হেলিকপ্টার এবং ১০২টি ট্যাংক হারিয়েছে। ইউক্রেনের এসব দাবির ব্যাপারে রাশিয়া কোনো মন্তব্য করেনি।

দেশবাসীর সঙ্গে থাকার বার্তা জেলেনস্কির : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার যে প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করে দেশবাসীর সঙ্গেই থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি।

গত শুক্রবার নিজেই ধারণ করা এক ভিডিও পোস্টে জেলেনস্কি প্রধান সহযোগীদের পাশে নিয়ে বলেন, ‘আমরা সবাই এখানে (কিয়েভে) আছি। আমাদের সেনাবাহিনী এখানে আছে। সমাজের মানুষ এখানে আছে। আমরা সবাই এখানে আমাদের দেশকে, আমাদের স্বাধীনতাকে রক্ষা করছি এবং এভাবেই আমরা থাকব। ’ একই দিন টুইটারে তিনি জানান, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এবং ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র সহায়তার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।

অস্ত্র আসছে ইউক্রেনের জন্য : ফ্রান্সের পর যুক্তরাজ্যসহ ২৬ দেশ ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে একমত হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী জেমস হেপির এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ইউক্রেনে মানবিক ও অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে। বিষয়টি সমন্বয় করবে যুক্তরাজ্য।

অস্ত্র সহায়তার ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন জানান, ইউক্রেনকে আরো ৩৫ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে রাশিয়ার হামলার হুমকির মুখে গত বছর দুই দফা মিলিয়ে ইউক্রেনকে ২৬ কোটি ডলারের অস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এদিকে জার্মানি তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ইউক্রেনে জার্মান নির্মিত প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহে তার বিরোধিতা বাতিল করেছে। জার্মানি ইউক্রেনে এক হাজার ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র এবং ৫০০ ‘স্টিংগার’ ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবে।

শরণার্থীর সংখ্যা লাখ পেরিয়েছে : গত বৃহস্পতিবার ভোরে প্রথম সামরিক সাইরেন বাজার পর থেকেই ইউক্রেন ছাড়তে শুরু করে বাসিন্দারা। জাতিসংঘের হিসাবে, এরই মধ্যে প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার মানুষ ইউক্রেন থেকে বের হয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সহায়তায় প্রতিবেশী সরকার ও সামরিক বাহিনীগুলো এগিয়ে এসেছে। ইউক্রেনে বসবাসরত বিদেশি বেসামরিক লোকজনকেও সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করছে তাদের নিজ নিজ সরকার।

নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার ভেটো : ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পশ্চিমাদের তোলা প্রস্তাব ‘ভেটো’ দিয়ে নাকচ করেছে রাশিয়া। আরেক স্থায়ী সদস্য চীন ওই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, রাশিয়া যেন ইউক্রেনে আগ্রাসন বন্ধ করে এবং সব সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। এই প্রস্তাবে পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের পাশাপাশি অস্থায়ী সদস্যদের ভোটও নেওয়া হয়। অস্থায়ী সদস্যদের মধ্যে এ সময় ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ভোটদানে বিরত থাকে।

রুশ জাহাজ আটক : এদিকে ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের সন্দেহে রাশিয়ার পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ আটক করেছে ফ্রান্স। বাল্টিক লিডার নামের জাহাজটি নতুন গাড়ির চালান নিয়ে ফ্রান্সের রুয়েন থেকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের দিকে যাচ্ছিল।

যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার দায় ইউক্রেনের : যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন গত শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাতে পুতিনও রাজি উল্লেখ করে ক্রেমলিন বলেছিল, বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাতে রাজি রুশ রাষ্ট্রপ্রধান। কিন্তু আলোচনায় উভয় পক্ষের এ ঘোষিত আগ্রহের পরও পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ জন্য ইউক্রেনকে দুষেছে রাশিয়া। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেন, আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় গত শুক্রবার বিকেলে ইউক্রেনে রুশ ফেডারেশনের প্রধান বাহিনীর অগ্রগতি স্থগিত করেন পুতিন। ইউক্রেন সমঝোতায় অস্বীকৃতি জানানোয় আজ (গতকাল) বিকেলে রুশ বাহিনীকে ফের এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চেচেন নেতার সমর্থন : রাশিয়ার চেচনিয়া অঞ্চলের নেতা বলেছেন, তিনি রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিতে ইউক্রেনে তার যোদ্ধাদের মোতায়েন করেছেন।

চিনপিং ও ম্যাখোঁর সঙ্গে পুতিনের কথা : চলমান পরিস্থিতির মধ্যে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে পুতিনের।

গত শুক্রবার ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ম্যাখোঁ জানান, তিনি ইউক্রেনে অভিযান বন্ধ করতে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার পুতিনের সঙ্গে ফোনে তাঁর ‘খোলামেলা, সরাসরি ও দ্রুত’ আলাপ হয়। ফরাসি প্রেসিডেন্ট আরো জানান, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অনুরোধে পুতিনকে ফোন করেছিলেন তিনি। কারণ পুতিনকে ফোন করে পাচ্ছিলেন না জেলেনস্কি। পুতিন যেন জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন, সেই অনুরোধ জানানোও তাঁর ফোন করার উদ্দেশ্য ছিল বলে জানান ম্যাখোঁ। তিনি আরো বলেন, ‘নিন্দা জানানো, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি আলোচনার পথ আমাদের খোলা রাখতে হবে, যেন শর্তগুলো পূরণ করা যায়, যাতে আমরা সংঘাত থামাতে পারি। ’

সূত্র : এএফপি, বিবিসি

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: