ইন্টারনেট
হোম / আন্তর্জাতিক / বিস্তারিত
ADS

ইউক্রেনকে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া, হামলা হতে পারে যে দিক দিয়ে

13 February 2022, 5:16:42

নিরাপত্তা গ্যারান্টির দাবিতে প্রতিবেশী ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমাদের উত্তেজনা থামার কোনো লক্ষণই নেই। এরইমধ্যে প্রতিবেশী দেশটিকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে সীমান্তে মোতায়ন করা হয়েছে আরও এক লাখ সেনা। যুদ্ধ প্রস্তুতিতে রয়েছে যুদ্ধবিমান, ট্যাংক, কামান, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা, যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন। যদিও রাশিয়ার বারবার বলে আসছে ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই। রাশিয়া যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে-পশ্চিমাদের এমন দাবি প্রত্যাখ্যানও করেছে ক্রেমলিন।

এক বিশ্লেষণে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন বলছে, রাশিয়া সত্যি আক্রমণ করবে কি না সেটা এখনো স্পষ্ট না। হতে পারে পশ্চিমাদের থেকে দাবি আদায়ে আরও চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে দেশটি। কারণ যুদ্ধ এড়াতে খুব জোরেশোরেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নিতে রাশিয়ার দাবি ছিল- ন্যাটোকে আরও পূর্বদিকে অগ্রসর হতে দেওয়া যাবে না এবং ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তবে ন্যাটো ও আমেরিকা রাশিয়ার এ দাবি মানতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এরপরই থেকেই উত্তেজনা বেড়ে চলছে, যা যুদ্ধের দিকে মোড় নেবে কি না বুঝা যাচ্ছে না।

কিন্তু যদি রাশিয়া সত্যি ইউক্রেনে আক্রমণ করে বসে, তাহলে তা কোথায় শুরু হবে তা স্পষ্ট নয়। কারণ রাশিয়া ইউক্রেনের তিন দিকে চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে- দক্ষিণে ক্রিমিয়ায়, পূর্ব ইউক্রেনে দুই দেশের সীমান্তে রাশিয়ার দিকে এবং উত্তরে বেলারুশে। ইউক্রেনকে তিন দিক দিয়ে ঘিরে ফেলায় পশ্চিমাদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এখন তিনটি ফ্রন্টে ইউক্রেন এবং পশ্চিমাদের সমানভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে।

পূর্ব ইউক্রেন

রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণের স্থান হিসেবে ডোনেটস্ক এবং লুহানস্কের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলিতে সর্বাধিক মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এখানে ইউক্রেনীয় বাহিনী এবং রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সাল থেকে সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে। যারা রাশিয়ার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন তাদের অনুমান হলো- পূর্ব ইউক্রেনকে আক্রমণ চালানোর জন্য সবচেয়ে সহজ অবস্থানে পরিণত করতে পারে রাশিয়া। মস্কো ইতিমধ্যে এই অঞ্চলে সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে।

স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে সিএনএন বলছে, পূর্ব ইউক্রেনের ইয়েলনিয়াতে একটি বড় ঘাঁটি খালি করা হয়েছে। সেখানে থেকে রাশিয়ান ট্যাঙ্ক, কামান ও যুদ্ধাস্ত্র সাম্প্রতিক দিনগুলিতে সীমান্তের অনেক কাছাকাছি আনা হয়েছে।

২০২১ সালের শেষের দিকে ওই ঘাঁটিতে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র আনা হয়েছিল। যার মধ্যে প্রায় ৭০০টি ট্যাঙ্ক, পদাতিক যুদ্ধের যান এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ছিল। ইউক্রেনের কাছাকাছি ব্রায়ানস্ক অঞ্চলের আরও দক্ষিণে ট্রেন এবং রাস্তাগুলিতে সেই সরঞ্জামগুলির কিছু দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে।

স্যাটেলাইট ইমেজরি কোম্পানি ম্যাক্সারের সিনিয়র ডিরেক্টর স্টিফেন উড সিএনএনকে বলেছেন: “আমার কাছে মনে হচ্ছে উত্তর-পূর্ব ভেহিকল পার্ক থেকে প্রচুর ট্যাঙ্ক, স্ব-চালিত আর্টিলারি এবং অতিরিক্ত সাঁজোয়া যান চলে গেছে।ইতিমধ্যে, উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী কুরস্ক এবং বেলগোরড ওব্লাস্টে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান সামরিক কার্যকলাপ উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

‘আমরা কুরস্কে প্রচুর যানবাহন এবং সেনার কার্যকলাপ দেখতে পাচ্ছি’- রোচান কনসালটিং এর সঙ্গে সামরিক গতিবিধি ট্র্যাক করার বিশেষজ্ঞ কনরাড মুজিকা টুইটারে এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

ওয়াশিংটনের পোটোম্যাক ফাউন্ডেশনের ফিলিপ কার্বার, যিনি রাশিয়ান সৈন্যদের গতিবিধিও বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন, তিনি এই মাসে সিএনএনকে বলেছেন, ‘রাশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমণাত্মক বাহিনী- ফার্স্ট গার্ডস ট্যাঙ্ক আর্মি, যা সাধারণত মস্কো এলাকায় অবস্থান করে, তারা ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে চলে গেছে। এ বাহিনী খুরস্ক-কিভ আক্রমণ রুটে দ্রুত সাঁজোয়া আক্রমণের জন্য উত্তম জায়গা বেছে নিয়ে একত্রিত হচ্ছে।”

বেলারুশ

পূর্ব ইউরেপাপের দেশ ও মিত্র বেলারুশে মহড়ার নামে বিশাল সেনা মোতায়েন করেছে রাশিয়া, যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে। ইউক্রেনে প্রবেশের জন্য বেলারুশ পয়েন্ট একটি ভালো রুট হতে পারে।

রাশিয়া এবং বেলারুশ বৃহস্পতিবার ১০ দিনের যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে, যার আকার এবং সময় পশ্চিমে ভয়ের জন্ম দিয়েছে।

‘বেলারুশে মস্কোর মোতায়েন করা সেনা ও সমরাস্ত্র স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে বড় বলে মনে করা হচ্ছে। দেশটিতে অন্তত ৩০ হাজার কমব্যাট সৈন্য, স্পুটনাজ স্পেশাল অপারেশন ফোর্স, অত্যাধুনিক এস-ইউ ৩৫ ‍যুদ্ধবিমান, ইস্কান্দার ডুয়েল ক্যাপাবল মিসাইল এবং বর্তমান পৃথিবীর সেরা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করেছে রাশিয়া’- ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ গত ৩ ফেব্রুয়ারি এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) অনুসারে এটি বেলারুশিয়ান সশস্ত্র বাহিনী বছরের যে কোনো সময়ে পরিচালিত সবচেয়ে বড় মহড়া। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে ‘অ্যালাইড রেজলভ-২০২২’ নামের এ মহড়ার উদ্দেশ্য হলো বহিরাগত আগ্রাসন প্রতিহত করা।

রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ মহড়া।
রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ মহড়া।

এদকি কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে উত্তর দিক থেকে কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে রাশিয়া।সেখানে রাশিয়ার সামরিক প্রস্তুতি এ ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি এমন একটি অরক্ষিত অংশ যা মস্কোকে ইউক্রেনের রাজধানীতে দ্রুত আক্রমণ শুরু করতে সাহায্য করবে। একজন ইউরোপীয় কূটনীতিক এই মাসের শুরুর দিকে সিএনএনকে বলেছিলেন, সেখানে অন্তত সন্তর্পণে রুশ সেনা একত্রিত করা হচ্ছে।

স্যাটেলাইট ইমেজরি কোম্পানি ম্যাক্সারের প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রগুলিতে দেখা যায়, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বেলারুশের বেশ কয়েকটি স্থানে মোতায়েন রয়েছে৷ মোতায়েনগুলি সম্ভবত যৌথ মহড়ার সঙ্গে যুক্ত। তবে অন্যান্য ফটোগ্রাফগুলি দেখায় যে ক্যাম্পগুলি ইউক্রেনের সীমান্তের কাছে স্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে মহড়া হচ্ছে সেখান থেকে কয়েকশ মাইল দূরে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি রাশিয়া ইউক্রেনে প্রবেশের পয়েন্ট হিসাবে বেলারুশিয়ান সীমান্তকে নির্ধারণ করে তবে সেনাদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এই রুটটি প্রাকৃতিকভাবেই অসুবিধায় ভরা।

বেলারুশ দিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণ চালাতে রাশিয়ান সৈন্যদের পিনস্ক মার্শেস এলাকার কথা ভাবতে হবে। এটি ইউরোপের বৃহত্তম জলাভূমিগুলির মধ্যে একটি। বেলারুশ এবং ইউক্রেনের মধ্যে সীমানায় বিস্তৃত একটি ঘন, জলাবদ্ধ এবং ঘন বনভূমি পিনস্ক মার্শেস। এটি এক লাখ ৪ হাজার বর্গ মাইল জুড়ে বিস্তৃত।

১৯৪১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে জার্মানির ধ্বংসাত্মক আক্রমণ অপারেশন বারবারোসার সময় এই অঞ্চলটি নাৎসি বাহিনীকে বাধা দেয়।

ক্রিমিয়া

২০১৪ সালে রাশিয়ায় সংযুক্ত করে নেওয়া উপদ্বীপটি যে কোনো নতুন অপারেশনের জন্য একটি প্রাকৃতিক মঞ্চ তৈরির জন্য উপযুক্ত। তবে মস্কো ক্রিমিয়া থেকে ইউক্রেনে হামলা চালানোর চেষ্টা করবে কি না তা স্পষ্ট নয়।

স্যাটেলাইট চিত্রে সেখানে রাশিয়ার সেনা ও সরঞ্জামের একটি বড় স্থাপনা দেখা গেছে। ক্রিমিয়ার রাজধানী সিমফেরোপলের উত্তরে শত শত যানবাহন ও সেনা পৌঁছেছে।

গত বৃহস্পতিবার সাঁজোয়া যানসহ ক্রিমিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে স্লাভনে শহরের কাছে প্রথমবারের মতো নতুন স্থাপনা চিহ্নিত করেছে ম্যাক্সার।

ম্যাক্সার জানাচ্ছে, ক্রিমিয়ার প্রধান বন্দর সেভাস্তোপলে যেদিন বেশ কয়েকটি রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজ এসে পৌঁছেছিল সেদিনই এই নতুন স্থাপনাগুলি পরিলক্ষিত হয়েছিল। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার বন্দরে ছয়টি বড় উভচর ল্যান্ডিং জাহাজের ছবি পোস্ট করেছে।

ইউক্রেনের নৌবাহিনী এর প্রতিক্রিয়ায় জানায় যে, “রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে সামরিকীকরণ অব্যাহত রেখেছে, ইউক্রেন এবং বিশ্বের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজ স্থানান্তর করছে।”

সিএসআইএস বিশ্লেষকরা বলছেন যে, রাশিয়ান সৈন্যরা ক্রিমিয়ার উত্তর-পশ্চিমে ইউক্রেনীয় বন্দর শহর ওডেসাতে একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করতে পারে। রাশিয়ার উভচর জাহাজগুলি সরাসরি ওডেসার বন্দরে প্রবেশ করে এবং সরাসরি শহরের দিকে চলে যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ওডেসা একটি যুতসই জায়গা। তবে এটা ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন হবে। কারণ ওডেসা একটি জনবহুল শহর। শহরের বাসিন্দারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেবে। ফলে প্রচুর রক্তপাত হবে। এছাড়াও ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে রাশিয়াকে প্রচুর গোলাবারুদ নিক্ষেপ ও বিমান হামলা চালাতে হবে। যাতে ব্যাপক প্রাণহানির আশংকা রয়েছে।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: