Saturday 20 April, 2024

For Advertisement

আল্লাহ তওবাহকারীকে পছন্দ করেন

11 April, 2021 12:06:54

মানুষ সৃষ্টিগতভাবে এমন স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে তৈরি যে তাদের দ্বারা পাপ হতেই পারে। বরং এ ব্যাপারে পরিষ্কার ঘোষণা আছে যে একমাত্র নবীরা ছাড়া কোনো মানুষই পাপমুক্ত নয়। কাজেই গুনাহ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে অস্বাভাবিক ও আশ্চর্যের বিষয় হলো গুনাহর পর তার জন্য অনুতপ্ত না হওয়া এবং আল্লাহর দিকে ফিরে না আসা। আল্লাহর নাফরমানি করার পর অনুতপ্ত না হয়ে আনন্দিত হওয়া আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ করার নামান্তর।

সুতরাং কোনো বান্দার দ্বারা অনিচ্ছাকৃতভাবে গুনাহ হয়ে গেলে তার কিছু করণীয় রয়েছে। এর দ্বারা গুনাহর ক্ষতি ও শাস্তি কম হবে এবং আল্লাহ চাইলে ক্ষমাও করে দিতে পারেন। সেই করণীয়গুলো হলো—

এক. গুনাহের পর ভালো কাজ : গুনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে নেক কাজে মনোনিবেশ করা। আবু জার গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি যেখানেই থাকো না কেন, আল্লাহকে ভয় করো। গুনাহর পরপর নেক কাজ করো, তাহলে নেকি গুনাহকে দূরীভূত করে দেবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৭)। কাজেই গুনাহর পরপর দান-সদকা, কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, জিকির ইত্যাদি ইবাদত করলে পাপ কাজ মাফ হয়ে যায়। তবে কবিরা গুনাহ হলে তাওবা করতে হবে।

দুই. গুনাহর পর ক্ষমা প্রার্থনা : গুনাহর পর ইস্তিগফার পড়া, তাওবা করা জরুরি। কবিরা গুনাহ তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। তবে সগিরা বা কবিরা যা-ই হোক, সব গুনাহর পরই ইস্তিগফার করা উচিত এবং খাঁটি মনে তাওবা করা আবশ্যক। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো—খাঁটি তাওবা। আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন…।’ (সুরা : তাহরিম, আয়াত : ৮)

তওবাহকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন : তাওবাকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন, তাকে পছন্দ করেন। বান্দার তাওবায় আল্লাহ কেমন খুশি হন, তার উদাহরণ দেখুন এই হাদিসে—‘আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবায় ওই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি আনন্দিত হন, যে তার উট হারিয়ে ফেলেছে এক জনমানবশূন্য ভয়ংকর প্রান্তরে। উটের পিঠে ছিল খাদ্য ও পানীয়। এরপর সে ঘুমিয়ে পড়ল। জাগ্রত হয়ে সে আবার উটের খোঁজে বের হলো। একসময় তার তৃষ্ণা পেল। সে মনে মনে বলল, যেখানে ছিলাম সেখানে ফিরে যাই। অতঃপর মৃত্যু হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকি। মৃত্যু অবধারিত জেনে বাহুতে মাথা রেখে সে ঘুমিয়ে পড়ল। জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল, হারিয়ে যাওয়া উট তার পাথেয় ও খাদ্য-পানীয় নিয়ে তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। এই ব্যক্তি তার উট ও পাথেয় ফিরে পেয়ে যতটুকু খুশি হয়েছে, তার থেকেও অধিক খুশি হন আল্লাহ বান্দার তাওবায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৭৪৭)

তিন. গোপন পাপের কথা প্রকাশ না করা : গোপনে সম্পাদিত পাপের কথা প্রকাশ না করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রকাশ্যে পাপকারীরা ব্যতীত আমার সব উম্মত ক্ষমাপ্রাপ্ত। প্রকাশ্যে পাপ করার মধ্যে এটাও যে রাতে কোনো ব্যক্তি খারাপ কাজ করল। আল্লাহ তার এ কাজটি গোপন রাখা সত্ত্বেও সে দিনের বেলায় বলে বেড়াল—শুনছেন! আমি গত রাতে এই-এই করেছি। সে রাত কাটাল এ অবস্থায় যে তার প্রতিপালক তার পাপ গোপন করে রাখেন, আর তার সকাল হলো এ অবস্থায় যে আল্লাহ যা গোপন করলেন সে তা ফাঁস করে দিল। (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৯)

চার. প্রকাশ্য পাপে সবার প্রতিবাদ : প্রকাশ্য পাপের ক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রতিবাদ করা। অনেক পাপ আছে প্রকাশ্যে করা হয়। পাপ কাজ থেকে পাপীদের বিরত রাখার চেষ্টা করা না হলে সমাজের সবাই গুনাহগার হবে। মনে করুন, আপনি গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছেন। কেউ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু গাড়ির মধ্যে লাউড স্পিকার দিয়ে গান বাজানো হচ্ছে। এতে সবাই গুনাহগার হচ্ছে। তাই প্রকাশ্যে সবাই মিলে প্রতিবাদ করতে হবে। পাপ নির্মূলের চেষ্টা না করে যদি পাপের সঙ্গে সহাবস্থানের মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি নাজিল হওয়া অবধারিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘বনি ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরি করেছিল, তারা দাউদ ও মারইয়ামতনয় ঈসা কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল এ জন্য যে তারা ছিল অবাধ্য ও সীমা লঙ্ঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা থেকে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত, তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৭৮-৭৯)

পাঁচ. কোনো পাপ তুচ্ছ নয় : কোনো পাপকে তুচ্ছ মনে না করা। পাপ হয়ে গেলে পাপকে ছোট ও তুচ্ছ মনে করা যাবে না। পাপকে তুচ্ছ মনে করলে ওই পাপ ছেড়ে দেওয়া এবং পাপ থেকে তাওবা করা কঠিন হয়ে যায়। বরং ওই পাপে সে বারবার লিপ্ত হয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তি পাপকে এমন মনে করে যে সে পাহাড়ের পাদদেশে বসে আছে। ভয় করছে, যেকোনো সময় পাহাড়টি তার ওপর ভেঙে পড়বে। (বুখারি, হাদিস : ২৪৯৭)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে অত্যাসন্ন রমজানের প্রতিটি দিনকে আমলময় করে উদযাপনের মাধ্যমে তাঁর মনোনীত বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore