Thursday 2 May, 2024

For Advertisement

রেমিট্যান্স কমার কারণ স্বর্ণ সিন্ডিকেট

16 June, 2022 12:21:13

রেমিট্যান্স কমার পেছনে স্বর্ণ সিন্ডিকেট দায়ী। ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে এর পরিবর্তে স্বর্ণালঙ্কার ও স্বর্ণের বার দিয়ে দিচ্ছে।

সেই স্বর্ণ সিন্ডিকেটের এ দেশীয় এজেন্টদের কাছে হস্তান্তর করেই প্রবাসীরা টাকা পেয়ে যাচ্ছে। মূলত চক্রটি বাংলাদেশে আগত প্রবাসীদের বাহক হিসাবে ব্যবহার করছে।

এ কাজে উৎসাহিত করতে নানা প্রলোভন দেওয়া হয়। কখনো বিমান টিকিট, কখনো কমিশন, আবার কখনো বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্যের চেয়ে বাড়তি টাকা দেওয়া হয়। সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় ১০০ গ্রাম (সাড়ে ৮ ভরি) ওজনের স্বর্ণালঙ্কার আনতে পারেন, এক্ষেত্রে শুল্ক-কর দিতে হয় না। এছাড়াও ২৩৪ গ্রাম (২০ ভরি) ওজনের স্বর্ণ বার আনতে পারেন, এক্ষেত্রে ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা করে শুল্ক দিতে হয়।

সে অনুযায়ী স্বর্ণের বার আনলে ৪০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয়। ১০০ গ্রামের (সাড়ে ৮ ভরি) অলঙ্কার আনার ক্ষেত্রে ব্যাগেজ রুলে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা না থাকায়, অনেক যাত্রী শুল্ক-কর দিয়ে বাড়তি অলঙ্কার সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাগেজ রুলের আওতায় বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনতে প্রবাসে কর্মরত একটি সংঘবদ্ধ চক্র বা সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। দেশে ফেরত আসার সময় প্রবাসী শ্রমিকরা ক্যারিয়ার গ্রুপ হিসাবে সিন্ডিকেটের কাছ থেকে নির্দিষ্ট কমিশনের বিনিময়ে স্বর্ণ বহন করে। অথবা সিন্ডিকেট প্রবাসীদের কাছ থেকে ডলার তুলনামূলক বেশি দামে কিনে নিয়ে ওই দেশেই স্বর্ণের দেনা পরিশোধ করে এবং বাড়তি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাগেজ রুলের আওতায় স্বর্ণ নিয়ে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করছে।

এতে আরও বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে স্বর্ণ আনলে প্রবাসীরা কয়েকভাবে লাভবান হচ্ছে। প্রথমত, কম দামে স্বর্ণ এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে ব্যাংকের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছে। তৃতীয়ত, রেমিট্যান্সের অর্থ পেতে প্রবাসীকে কোনো খরচ করতে হচ্ছে না। সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ২৪ ক্যারেট প্রতিভরি স্বর্ণের দাম দেশ ভেদে ৫৮ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বিমানবন্দরে ২ হাজার টাকা শুল্ক দেওয়ার পর স্থানীয় বাজারে সেই স্বর্ণ প্রতিভরি ৭২ থেকে ৭৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি ভরিতে মুনাফা হচ্ছে প্রায় ১০-১৫ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। এ অঙ্ক আগের এপ্রিলের চেয়ে প্রায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার কম। এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ৮ লাখ ডলার। আর আগের বছরের মে মাসের তুলনায় এবার ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার কম এসেছে। গত বছর মে মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স সবচেয়ে বেশি কমেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে, ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ২২ দশমিক ১৭ শতাংশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৪০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, কাতার থেকে ৫০ দশমিক ৭১ শতাংশ, কুয়েত থেকে ১৬ শতাংশ কমেছে। এসব দেশ থেকেই বেশি স্বর্ণ আসছে। একই সঙ্গে সিঙ্গাপুর থেকে ৪৩ শতাংশ, মালয়েশিয়া থেকে ৫৭ শতাংশ রেমিট্যান্স কমেছে। এ দুটি দেশ থেকেও স্বর্ণ আনার ঘটনা ধরা পড়েছে।

ব্যাগেজ রুল সংশোধনের সুপারিশ করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাগেজ রুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রায় রেমিট্যান্স না এনে স্বর্ণ নিয়ে আসার ফলে অফিসিয়াল চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা কমছে বা কমতে পারে। অন্যদিকে স্বর্ণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার হয়ে থাকে। উভয় ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাসে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকায় মধ্যপ্রাচ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকেন্দ্রিক একটি স্বর্ণ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এছাড়াও ব্যাগেজ রুলের সবচেয়ে বেশি অপব্যবহার হয় গুঁড়া দুধ, ডায়াপার, নামি-দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিক্স আনার ক্ষেত্রে, এসব পণ্য মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হয়। ব্যাগেজ রুলের ফাঁকফোকর বন্ধে গত বছরের শুরুতে তা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রুলের খসড়া কাস্টম হাউজগুলোকে পাঠিয়ে মতামতও চাওয়া হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে দেড় বছর পার হলেও সেই রুল আলোর মুখ দেখেনি।

খসড়া ব্যাগেজ রুল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতে স্বর্ণালঙ্কার আনায় লাগাম টানা হয়েছে। একজন মহিলা যাত্রী ১১৭ গ্রাম (১০ ভরি) ওজনের স্বর্ণালঙ্কার এবং ২০০ গ্রাম ওজনের রুপার অলঙ্কার শুল্ক-কর ছাড়া আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর যাত্রী পুরুষ হলে ২৩ গ্রাম (২ ভরি) ওজনের স্বর্ণালঙ্কার ও ১০০ গ্রাম ওজনের রুপার অলঙ্কার শুল্ক-কর ছাড়া আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এর বেশি অলঙ্কার আনা হলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার বিধান রাখা হয়।

শুধু তাই নয়, শুল্ক দিয়ে রুলে স্বর্ণের বার আনার অবাধ সুযোগও সীমিত রাখা হয়েছে। একজন যাত্রীর জন্য বছরে একবারই ২৩৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণের বার আনার সুযোগ করা হয়। এক্ষেত্রে ভরিপ্রতি ২ হাজার টাকা শুল্ক-কর ধার্য করা হয়। ২৩৪ গ্রাম ওজনের বেশি স্বর্ণের বার আনলে বা বছরে একবারের বেশি স্বর্ণের বার আনলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করার বিধান রাখা হয় নতুন বিধিমালায়।

এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ব্যাগেজ রুলে শিথিলতার কারণে বিদেশ থেকে স্বর্ণের বার আনার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন একটি খসড়া করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে সেটি আর চূড়ান্ত করা যায়নি। তবে ব্যাগেজ রুল সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore