Thursday 25 April, 2024

For Advertisement

শীতে ত্বকের যেসব সমস্যা দেখা দেয়, কী করবেন?

2 December, 2022 11:11:11

শরীরে নানাভাবে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করে। শীতের সময় ত্বক সংবেদনশীল থাকে। ত্বক মূলক রোগ জীবাণু প্রবেশে বাধা দেয়। শীতের সময় শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি দেখা দেয়। সেই সঙ্গে ত্বকেরও বিভিন্ন রোগব্যাধি হওয়ার আশংকাও বাড়ে।

শীতের শুরুতেই যদি এ সম্পর্কে জানা যায় ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণ করা যায় তাহলে ত্বকের এসব রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

শীতের রোগবালাই নিয়ে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ত্বক ও যৌনব্যাধি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রাশেদ মো. খান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. ফাহিম আহমেদ রুপম।

* শীতে ত্বকের কী কী সমস্যা বা পরিবর্তন দেখা দিতে পারে?

** শীতে যেহেতু পরিবেশে আর্দ্রতা ও জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়, এ কারণে প্রধান সমস্যাই হচ্ছে ত্বক শুষ্ক, খসখসে হয়ে যাওয়া। এর ফলে চুলকানি, ঠোঁট ও পায়ের চামড়া ফেটে যাওয়া, হাতের চামড়া উঠে যাওয়াসহ খুশকির সমস্যা বাড়ে। যাদের ডায়াবেটিস, হাইপোথাইরয়েডিজম, লিভার ও কিডনির সমস্যা বা জন্মগত চামড়ার কিছু রোগ থাকে তাদের এ ড্রাইনেসের তীব্রতা বেশি হয়। আরেকটি হচ্ছে ঠান্ডা পরে যাওয়ার কারণে হাত ও পায়ের আঙুল লাল হয়ে ফুলে যাওয়া, একে রেনড ফেনোমেনং বলে।

* ত্বকের এই শুষ্কভাব দূর করার উপায় কী?

** মেডিকেল গ্রেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাই হচ্ছে প্রধান চিকিৎসা। যাদের ত্বক শুষ্ক তারা ক্রিম বা অয়েল বেসড ময়েশ্চারাইজার দেবেন, যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা লোশন বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। এটি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ত্বক যেন তার আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে। ময়েশ্চারাইজার যে ত্বক তৈলাক্ত করে, তা কিন্তু নয়। শীতে খুব বেশি গরম পানি ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ের জন্য গোসল করা যেতে পারে। প্রতিদিন গোসল না করলেও চলে, একদিন পরপর করা যায়। কারণ এ সময় আমরা ফুল হাতা জামা-কাপড় ব্যবহার করি তাই ত্বকে খুব বেশি ময়লা, ধুলাবালি পড়ে না।

গোসলের পর পর শুকনো সুতি কাপড়ের তোয়ালে দিয়ে ত্বক চাপ দিয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। এ ময়েশ্চারাইজার ত্বকের শুষ্কতা বা সমস্যা বুঝে দিনে ৩-৪ বারও ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিন খারযুক্ত সাবান ব্যবহার না করে সপ্তাহে ২-৩ দিন সুগন্ধিহীন ও বর্ণহীন সাবান, সিনথেটিক ডিটারজেন্ট বা বাথজেল ব্যবহার করতে পারেন। খুব বেশি ঘষা-মাজা করে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের তৈলাক্ত বা ন্যাচারাল ময়েশ্চার উঠে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হয় ও ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস শরীরে প্রবেশের সুযোগ পায়।

* এ সময় ত্বকের কী কী রোগ হওয়ার বা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে?

** স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়া শীতে আমাদের দেশে প্রধান সমস্যা। একসঙ্গে বেশি মানুষ জড়ো হয়ে থাকলে যেমন মাদ্রাসা, হলে অবস্থানকারীদের একজন থেকে আরেকজনে এ রোগ দ্রুত ছড়ায়। কারণ এটি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে। হাতের আঙুলের ভাঁজে, নাভির চারপাশে, শরীরের ভাঁজযুক্ত স্থানে, মহিলাদের ব্রেস্টের নিচে এবং প্রজনন অঙ্গের আশপাশের গোটাযুক্ত বিচি বা ফোসকা, যাতে রাতে চুলকানি বাড়ে এবং তা দিয়ে খোস-পাঁচড়া শনাক্ত করা যায়।

চিকিৎসার প্রধান শর্ত হচ্ছে যাদের এ সমস্যা হয়েছে তাদের ও তার সঙ্গে থাকা সবার চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসা নেওয়ার পরও চুলকানি ভালো হতে দুই সপ্তাহ লেগে যায়। শিশুদের যদি এ রোগ শনাক্ত করা না যায় বা চিকিৎসা না করা হয় বা বারবার খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে এর জটিলতায় কিডনির সমস্যা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস হতে পারে।

প্রত্যেকের ব্যবহার্য জামা-কাপড়, লেপ-তোশক, বালিশের কভার, চাদর সাবান দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বা ইস্ত্রি করে ব্যবহার করতে হবে। ইকথায়োসিস নামের জন্মগত ত্বকের রোগে হাঁটু থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত খোসার মতো ত্বকে উঠে যাওয়ার সমস্যায় বার বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার এবং ডাক্তারের পরামর্শে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র মাত্রার স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার করতে হবে। কোল্ড অ্যার্টিকেরিয়ায় ত্বকে চাকা চাকা হয়ে সারা শরীরে চুলকানি হতে পারে। যা ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

তাপমাত্রার হঠাৎ পরিবর্তনে যাদের দীর্ঘমেয়াদি ত্বকের রোগ সোরিয়াসিস, প্যারাসোরিয়াসিস বা লাইকেন প্ল্যানাস আছে তাদেরও রোগের তীব্রতা বেড়ে যেতে পারে।

* শিশুর ত্বকের যত্নের ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?

** কিছু শিশু জন্মগতভাবে শুষ্ক ত্বক নিয়ে জন্মায়। এরা ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, হাঁচি, সর্দি, শ্বাসকষ্টে ভুগে। এদের এটোপিক বেবি বলে। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। চুলকানি কমানোর জন্য ছোট-বড় সবাই নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।

তবে সরিষার তেল ব্যবহার করবেন না। এর ফলে অ্যালার্জি, ইরিটেশন বা ত্বকে প্রদাহ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টক বা সাইট্রাস ফল অর্থাৎ ভিটামিন সি প্রতিদিন গ্রহণ করা ভালো। সুতির কাপড় ব্যবহার করবে, সিনথেটিক বা পশমী সোয়েটার, মাফলার, টুপি ব্যবহার করলে এদের অ্যালার্জির প্রকোপ আরও বেড়ে যায়।
শীতের শাক-সবজি, ফলমূল প্রচুর গ্রহণ করতে হবে কারণ এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন থাকে যা এন্টি এজিং ও ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। কম্বলের পরিবর্তে লেপ ব্যবহার করবে।

* খুশকি এ সময় অন্যতম সমস্যা। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় জানাবেন?

** ডেনড্রাফ যাদের বেশি হয় তারা আসলে সেবোরিক ডার্মাটাইটিস নামে একটি রোগে ভোগে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বা কিটোকোনাজল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহার করবেন। শ্যাম্পু যেন সালফেটমুক্ত থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। স্ক্যাল্প বা মাথার তালুতে কোনো তেল ব্যবহার করার দরকার নেই। এর ফলে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ রোগটি আসলে নিয়ন্ত্রণযোগ্য, তবে পুরোপুরিভাবে ভালো হয় না।

* ঘরের বাইরে বের হওয়ার আগে বিশেষ কোনো প্রস্তুতির দরকার হয় কি?

** এ সময়ও কিন্তু সূর্যের রশ্মি আমাদের ত্বকে সরাসরি পরে। তাই সানস্ক্রিন এসপিএফ ৩০-৫০ এর মধ্যে ব্যবহার করে বের হবেন। অনেকে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে আগুনে বা রোদে ত্বক পোড়ান। এর ফলে সান বার্ন বা সান ইনজুরি হতে পারে।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore