Thursday 25 April, 2024

For Advertisement

যে কারণে ভেঙে দেওয়া হলো হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি

26 April, 2021 3:38:39

নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। গত বছরের ১৫ নভেম্বর কমিটি ঘোষণার পাঁচ মাসের মধ্যেই ভেঙে দেওয়া হলো এ কমিটি। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন, হেফাজতে ইসলামের নেতারা জনসভা-ওয়াজ মাহফিলে রাজা-উজির মারার কথা বললেও সরকারের ধরপাকড়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছেন। কেউ বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপাতত কিছু দিন চুপচাপ থেকে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তারা আবারও সক্রিয় হবেন রাজনীতিতে। যেমনটি ঘটেছিল ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সহিংস ঘটনাপ্রবাহের পর।

মূলত তিনটি কারণে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রথমত গ্রেফতার, মামলা ও ধরপাকড় এড়াতে। দ্বিতীয়ত চাপে পড়ে অনেক নেতা পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন। দলে ভাঙন ঠেকাতে জরুরিভিত্তিতে কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। তৃতীয়ত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিবেচনা করে। হেফাজত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর কেন্দ্র করে হেফাজতের বিক্ষোভে সহিংস ঘটনায় ১৮ জন নিহত হন। এর পর সারাদেশে হেফাজত নেতাদের নামে মামলা হয়। ধরপাকড় শুরু হয় দেশব্যাপী। এ পর্যন্ত হেফাজতের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির অন্তত দুই ডজন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার নেতাদের মধ্যে রয়েছেন— সংগঠনটির বিলুপ্ত কমিটির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা আহমদ আবদুল কাদের, জোয়ায়েদ আল হাবীব ও মামুনুল হক। যুগ্ম মহাসচিব-সহকারী মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদকীয় পর্যায়ের বহু নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে সংগঠনটির অভিযোগ। গ্রেফতারকৃত নেতাদের পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। হেফাজতের কমিটি ধরে ধরে সব নেতাকে গ্রেফতারের আশঙ্কা করছেন শীর্ষস্থানীয় নেতারা। এমন আশঙ্কায় দুদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে জুনায়েদ বাবুনগরী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টার্গেট নেতাদের তালিকা প্রকাশের দাবি করেন। তাদের সবাইকে নিয়ে কারাগারে যাওয়ার কথা বলেন।

গ্রেফতার ধরপাকড় থেকে নেতাদের বাঁচাতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। গত সপ্তাহে হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করে। সেই প্রতিনিধিদলে মামুনুল হকের ভাই মাহফুজুল হকও ছিলেন। তারা গ্রেফতার বন্ধের দাবি করেন। সেই সঙ্গে সহিংস কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই বলে দাবি করেন।

এসব তৎপরতার পরও গ্রেফতার, ধরপাকড় কমেনি। দুদিন আগে গ্রেফতার করা হয় হেফাজতের নায়েবে আমির অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদেরকে। দেশব্যাপী থানায় থানায় হেফাজতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলেমদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে।

এমতাবস্থায় হেফাজতের শীর্ষ নেতারা কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে নেতাদের গ্রেফতার থেকে বাঁচাতে পারেন।

এদিকে ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ায় হেফাজত থেকে পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েকজন নেতা। আরও অনেকে পদত্যাগের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানা গেছে।

গত ১১ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের নেতাদের গ্রেফতার শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত চারজনের সংগঠন ত্যাগের খবর পাওয়া গেছে। ১৩ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমিরের পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি ও বাহাদুরপুরের পীর মাওলানা আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান। তার অভিযোগ, আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর বিভিন্ন দল ও ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ সংগঠনে অনুপ্রবেশ করেছে এবং তারা তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে হেফাজতে ইসলামকে অত্যন্ত সুকৌশলে ব্যবহার করেছে।

এর আগে মাওলানা বাবুনগরীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন আরেক নায়েবে আমির লালবাগ জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার সদরে মুদাররিস মাওলানা হাবিবুর রহমান।

২২ এপ্রিল হেফাজতের ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-অর্থসম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লালবাগ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা নাছির উদ্দিন।

মাওলানা নাছির উদ্দিনের পর ২৩ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী।

সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আরও কয়েক নেতা পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন। তাদের কেউ জেল-জুলুম থেকে বাঁচতে আবার কেউ আহমদ শফির ছেলে আনাসপন্থি হেফাজতে যোগ দিতে পদত্যাগ করেছেন ও করছেন। এমতাবস্থায় বড় ধরনের ভাঙন ঠেকাতে কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর হেফাজতের ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফির ছেলে আনাসপন্থিরা। তারা এতদিন চুপচাপ থাকলে সম্প্রতি সরব হয়েছেন। ওই পন্থি আলেমদের অনেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে হেফাজতের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। এমতাবস্থায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আলেমদের বিভাজন ঠেকাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও সক্রিয় হবে হেফাজত।

নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতায় হেফাজতের মাঠে নামার পর দেশের কওমী মাদ্রাসার ওপর নজরদারি বেড়েছে। গোয়েন্দা বলছেন, কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের ঠাল হিসেবে ব্যবহার করছেন হেফাজত নেতারা। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্রদের কার্যক্রম পর্যালোচনার দাবিও উঠেছে। এমতাবস্থায় চাপে পড়েছে কওমি শিক্ষাব্যবস্থা।

রোববার কমিটি বিলুপ্তির কয়েক ঘণ্টা আগে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের সব ধরনের রাজনীতি ‘মুক্ত’ রাখার ঘোষণা দেয় মাদ্রাসাগুলোর নীতিনির্ধারণী বোর্ড আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।

কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের স্বার্থ চিন্তা করে এবং সার্বিক বিবেচনায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore