Monday 20 May, 2024

For Advertisement

আজ বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী

5 September, 2021 10:54:55

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনের জন্য বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি পেয়েছেন বাংলার সাত বীর। এরমধ্যে অন্যতম একজন হলেন নূর মোহাম্মদ শেখ। ৫ সেপ্টেম্বর এ বীরের ৫০তম শাহাদতবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এ দিনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন রণাঙ্গনের লড়াকু এ সৈনিক।

সৈনিক জীবনের কর্তব্যবোধ থেকে বিচ্যুত না হয়ে জীবনের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে গেছেন নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে।

তার সেই চেষ্টা সার্থক হয়েছিল। নিরাপদে ফিরতে পেরেছিলেন সহযোদ্ধারা। শুধু ফিরে আসেননি নূর মোহাম্মদ। শত্রুপক্ষের মর্টারের গোলা কেড়ে নিয়েছিল তার জীবন। পরে জঙ্গলের মধ্যে পাওয়া যায় এ বীরশ্রেষ্ঠের নিস্তেজ দেহ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী উপড়ে ফেলেছিল তার দু’টি চোখ। দেহকে ছিন্নভিন্ন করেছিল।

বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের মহেশখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম জেনাতুননেছা। বাবা আমানত শেখ। নূর মোহাম্মদ ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোটবেলায় তিনি বাবা-মাকে হারান।

১৯৬৯ সালে নূর মোহাম্মাদ ভর্তি হন ইপিআর বাহিনীতে (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি)। তখন তার বয়স ২৩ বছর। ট্রেনিংয়ের পর তার পোস্টিং হয় দিনাজপুরে। সেখানে ছিলেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। তারপর আসেন যশোর হেডকোয়ার্টারে।

১৯৭১ সালে মার্চ মাসে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে সিপাহী নূর মোহাম্মদের সৈনিক মনে নাড়া দেয় স্বাধীনতা আর দেশপ্রেম। তার সচেতন বিবেকবোধ তাকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্ধুদ্ধ করে। মুক্তিযুদ্ধে যশোর ছিল ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে। নূর মোহাম্মদ প্রতিষ্ঠানিক সামরিক প্রশিক্ষণ থাকায় একটি কোম্পানির প্রধান নিযুক্ত করে যশোরের সীমান্তবর্তী গোয়ালহাটি টহলের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১। গোয়ালহাটির দক্ষিণে অবস্থান করছিল হানাদার বাহিনী। মুক্তিবাহিনী বিকেলে বাধা দেয় হানাদার বাহিনীকে। নূর মোহাম্মদের সঙ্গে ছিলেন দু’জন সহযোদ্ধা। তাদের ওপর সার্বক্ষণিক দায়িত্ব দেয়া হয় পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানের ওপর নজর রাখার। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের কথা জেনে যায় হানাদার বাহিনী।

তারা তিনজন হানাদার বাহিনীর নজরে পড়ে যান। চারপাশে অবস্থান নেয় শত্রুসেনারা। শুরু হয় টানা গুলিবর্ষণ। নূর মোহাম্মদের সহযোদ্ধা ছিলেন সিপাহী নান্নু মিয়া ও সিপাহী মোন্তফা। নান্নুর হাতে হালকা মেশিনগান। সেটাই ছিল তাদের হাতে প্রধান অস্ত্র। গুলি ছুড়তে ছুড়তে পিছু হটেন তিনজন। এমন সময় হঠাৎ একটি বুলেট এসে সিপাহী নান্নুর বুকে লাগে। মাটিতে পড়ে যান নান্নু মিয়া।

এলএমজি হাতে তুলে নেন নূর মোহাম্মদ। এক হাতে নান্নু মিয়াকে নিয়ে আর অন্য হাতে মেশিনগান নিয়ে হানাদার বাহিনীর মোকাবিলা করছিলেন নূর মোহাম্মদ। তার দায়িত্ব মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন বাঁচানো। সঙ্গীদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরা। ঠিক সেসময়ে মর্টারের একটি গোলা এসে লাগে নূর মোহাম্মদের ডান পায়ে। শেষ পরিণতির কথা জেনে গেছেন নূর মোহাম্মদ। কিন্তু দমে যাননি।

সহযোদ্ধদের বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা করে যেতে হবে তাকে। সহযোদ্ধা মোস্তফার হাতে ছিল একটি এলএমজি। আদেশ দিলেন অবস্থান পাল্টে শত্রুর দিকে গুলি ছুড়তে। সেইসঙ্গে পিছু হটতে। আহত নান্নুকে সঙ্গে নিলেন তিনি। তারপর এলএমজি আবার নেন নূর মোহাম্মদ। শক্রদের ঠেকাতে থাকেন তিনি, যাতে মোস্তফা নান্নুকে সঙ্গে নিয়ে ঘাঁটিতে যেতে পারেন।

সহযোদ্ধাদের ঘাঁটিতে ফেরাতে পারলেও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নূর মোহাম্মদের দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নিকটবর্তী একটি ঝোপের পাশে এ বীরের দেহ পাওয়া যায়। কাশিপুর সীমান্তের হানাদারমুক্ত এলাকায় তাকে সামরিক মর্যাদায় দাফন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়।

এ উপলক্ষে আজ রোববার কাশিপুরে নূর মোহাম্মদ স্মৃতিসৌধে বিজিবি, উপজেলা প্রশাসন, সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বীরের সম্মানে গার্ড অব অনার, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও আলোচনা সভা।

যশোরের সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তরে সীমান্তঘেঁষা গ্রাম কাশিপুর। ওপারে ভারতের চব্বিশ পরগনার বয়রা। বাংলাদেশ সীমান্তের গোবিনাথপুর আর কাশিপুর মৌজার সীমানার কাশিপুর পুকুরপাড়ে চিরতরে ঘুমিয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদসহ সাত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।

সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের স্মৃতিস্তম্ভ। কাশিপুরের পুকুরপাড়ে আরও ছয়জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে। তারা হলেন- শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আহাদ, শহীদ সুবেদার মনিরুজ্জামান (প্রাক্তন ইপিআর), শহীদ সৈয়দ আতর আলী (তদানীন্তন গণপরিষদ সদস্য), শহীদ বাহাদুর আলী, শহীদ সিপাহী আব্দুস ছাত্তার বীরবিক্রম (প্রাক্তন ইপিআর) ও শহীদ সিপাহী এনামুল হক বীর প্রতীক (প্রাক্তন ইপিআর)।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore