ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে চলতি বছরেই গ্রাহক পর্যায়ে তিন দফা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছিলো সরকার। আগামী জুনের মধ্যে আরো এক দফা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) মিশনকে জানিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি সচিবালয়ে আইএমএফ স্টাফ কনসালটেশন মিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা জানায় মন্ত্রণালয়।

আট সদস্যের মিশনটি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। এই বৈঠকে তারা আইএমএফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এবং আগামী বাজেটে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে তা জানতে চায়। একই সঙ্গে গত মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং আগামী জুন ও সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য বিভিন্ন পরিকল্পনার অগ্রগতিও জানতে চায়।

বৈঠকে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সামগ্রিক ভর্তুকি আইএমএফ নির্ধারিত সীমায় আটকে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে সারের দাম বাড়িয়েছে। পাইকারি ও খুচরাপর্যায়ে বিদ্যুতের দামও তিন দফা বাড়ানো হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দফা এবং মার্চে এক দফা ৫ শতাংশ করে গ্রাহকপর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার।

এছাড়া আগামী জুনের মধ্যে আরও এক দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। গত আগস্টে পেট্রোল ও অকটেনে ৫০ শতাংশ এবং ডিজেল ও কেরোসিনে ৩৬ শতাংশ দাম বাড়ায় সরকার। শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, হোটেল ও রেস্তোরাঁর গ্যাসের দামও গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ানো হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দামও গত বছরের জুনে গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়। অর্থ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তবুও বিদ্যুৎ বিভাগ অতিরিক্ত ৩২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি করে। শেষে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে অতিরিক্ত ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এর আগে, আইএমএফ গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর তিন দিন পরই প্রথম কিস্তিতে ছাড় করে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাড়ে তিন বছরে মোট সাত কিস্তিতে দেবে ঋণের পুরো অর্থ। এ ঋণ নিতে ছোট-বড় ৩৮টি শর্ত পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। শর্তের অন্যতম হচ্ছে, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার মাধ্যমে সরকারের ব্যয় সক্ষমতা বাড়ানো।