For Advertisement
রপ্তানি খাত বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের বাইরে চান উদ্যোক্তারা
দেশের শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ রেশনিং করতে সরকার সব ধরনের শিল্প-কারখানা সপ্তাহে একেক দিন একেক অঞ্চলে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সম্প্রতি। এর ফলে সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চলা বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের কারখানাগুলোতে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশেষ করে ডায়িং, ওয়াশিং, ইউভিং ও সাইজিং কারখানাগুলোর উৎপাদন এবং দক্ষতা কমার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। এ ছাড়া অনেক অঞ্চলে এলাকাভিত্তিক রেশিংয়ের পাশাপাশি ফিডারভিত্তিক রেশনিংও হচ্ছে।
এর ফলে সরবরাহ লাইনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য রপ্তানি খাতের কারখানা বিদু্যুৎ রেশনিংয়ের রাইরে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেন, পণ্য জাহাজীকরণে এক ঘণ্টা দেরি হলে ক্রেতারা মানতে চায় না। ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যে আস্থার অবস্থান তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের, তাতে ঘাটতি তৈরি হবে। এ জন্য উদ্যোক্তারা মনে করেন, দেশে ডলার, জ্বালানি এবং বিদ্যুতের সংকটের এই সময়ে রপ্তানি খাতকে বাইরে রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে সরকার। সম্প্রতি খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমটাই জানা গেছে।
এর আগে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে ভিন্ন ভিন্ন দিনে সাপ্তাহিক ছুটি পুনর্বিন্যাস করার লক্ষ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রম আইন ধারায় জনস্বার্থে এই পরিপত্র জারি করে।
রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরকারের নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখবেন উল্লেখ করে উদ্যোক্তারা জানান, গভীর সংকটের মুখে শিল্প খাত। যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের দাম বাড়ায় আমদানি খরচ বেড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে নিজস্ব জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বেশি। ফলে উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে। বৈশ্বিক মন্দায় কমেছে রপ্তানির আদেশ।
জানতে চাইলে বস্ত্র খাতের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মো. আলী খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুসারে বস্ত্র খাতের কারখানাগুলোতে রেশনিংব্যবস্থা চালু হলেও দীর্ঘ মেয়াদে বড় ধরনের সংকটে পড়বে বস্ত্র খাত। তিনি বলেন, দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার বস্ত্র কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ছোট প্রায় ৫০০টি। এসব কারখানা শতভাগ বিদ্যুতে চলে। এসব কারখানায় সরাসরি উৎপাদন কমে যাবে।
শিল্পের মালিকরা লোকসানে পড়বেন উল্লেখ করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ডায়িং, ওয়াশিং, ইউভিং ও সাইজিং কারখানাগুলো সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চলে। বিদ্যুৎ রেশনিংয়ের ফলে এসব কারখানায় উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে বাড়বে উৎপাদন খরচ। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে এটা হলে কারখানা বন্ধসহ মালিকরা ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে পড়বেন।
রপ্তানি খাতকে রেশনিংয়ের বাইরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পণ্য জাহাজীকরণে এক ঘণ্টা দেরি হলে ক্রেতারা মানতে চায় না। এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যে আমরা যে আস্থার অবস্থান তৈরি করেছি, তাতে ঘাটতি তৈরি হবে। ফলে আমরা মনে করি, সরকার পর্যালোচনা করে দেখবে। কেননা দেশ বর্তমানে ডলারের সংকটেও আছে। এ অবস্থায় রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে, এমন সিদ্ধান্ত সরকারের নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখবেন। ’
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. শহীদ উল্লাহ আজিম কালের কণ্ঠকে বলেন, বৈশ্বিক মন্দার এই সময়ে পোশাক খাতের ক্রেতারা ৩০-৪০ শতাংশ কার্যাদেশ কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বিলম্বে জাহাজীকরণসহ তৈরি হওয়া পোশাক আমদানি স্থগিত করছে। এর পরও দেশের সংকটকালে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিজিএমইএ সদস্য কারখানাগুলোতে নির্দেশ মানার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ক্রান্তিকালীন এই সময়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে কর (৩৪ শতাংশ) প্রত্যাহার করা হলে জনগণের জন্য সহায়ক হতো বলে মনে করেন আজিম।
নিট পোশাক খাতের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহ রেশনিং করেছে। বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই এই সংকট চলছে। রেশনিংকে মেনে নিয়েই আমাদের শিল্প-কারখানা চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ’ গত শুক্রবার থেকেই এটা কার্যকর করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
তবে রেশনিংয়ের ফলে শিল্পে উৎপাদন এবং সরবরাহ লাইন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কেননা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয় এলাকা অনুসারে রেশনিং করা হবে। এটা না করে বিদ্যুতের ফিডার অনুয়ায়ী রেশনিং করা হয়েছে। এতে উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ের সমস্যা হচ্ছে।
হাতেম বলেন, বিদ্যুত্সংকটের চেয়ে বেশি সমস্যার হচ্ছে গ্যাস নিয়ে। গত বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে গ্যাস বন্ধ ছিল। এতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। কেন সংকট হয়েছে, সে বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেনি কোনো কর্তৃপক্ষ। তিনি জানান, বিদ্যুৎ রেশনিং হলেও ক্যাপটিভ পাওয়ার রেশনিংয়ের আওতায় নয়। কেননা সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা যেসব কারখানা চলে, সেখানে ক্যাপটিভ পাওয়ারে চলে।
Latest
For Advertisement
- প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
-
- গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
-
- হাসিনা রহমান শিপন,
- রাশিকুর রহমান রিফাত
Developed by WebsXplore