Tuesday 30 April, 2024

For Advertisement

ভর্তুকি বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে মূল্যস্ফীতি

24 May, 2022 11:11:03

বৈশ্বিক সংকটে বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট হচ্ছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষ। ফলে আগামী বাজেটে (২০২২-২৩) প্রবৃদ্ধির অর্জনের চেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ লক্ষ্যে ভর্তুকি বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে মূল্যস্ফীতি-এমন নতুন কৌশল নেওয়া হচ্ছে। কারণ আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে।

অভ্যন্তরীণ কারণে এটি ঘটেনি। এ জন্য খাদ্যপণ্য, সার, জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাড়িয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করার রুটম্যাপ তৈরি করছে অর্থ বিভাগ। আর সেটি বাস্তবায়ন করতে ভর্তুকি ও প্রণোদনায় আগামীতে প্রায় ৮৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

তবে ভর্তুকি বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ভর্তুকি বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কতটা কার্যকর হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ সুবিধাভোগী নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সুষ্ঠুভাবে ভর্তুকি পৌঁছানো অনেকটা কঠিন, যা খুবই চ্যালেঞ্জিং। তিনি আরও বলেন, খাদ্যদ্রব্যের অধিক মূল্যের কারণেই মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। এখন নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

সূত্রমতে, ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাড়ানোর একটি কাঠামো দাঁড় করেছে অর্থ বিভাগ। সেখানে দেখা গেছে, চলতি (২০২১-২২) অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আগামী বাজেটের ক্ষেত্রে ১২৪৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কৃষিতে চলতি সংশোধিত বাজেটে প্রণোদনা (কৃষকের সারের জন্য) সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। আগামী বাজেটে আড়াই হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। বিদ্যুতে ভর্তুকি আগামী বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরে রয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাতে ভর্তুকি চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ২ হাজার ৩শ কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে এ খাতে নতুন বাজেটে বরাদ্দ থাকছে ১৭ হাজার ৩শ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ মনে করছে কৃষককে ৩২ টাকা মূল্যে সার সরবরাহ অব্যাহত রাখলে উৎপাদিত পণ্যের দাম খুব বেশি বাড়বে না। কারণ বর্তমান বিশ্ববাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের মূল্য ৯৬ টাকা উঠেছে। এ জন্য কৃষকের সারের ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণেই মূল্যস্ফীতি ঘটছে। তাই গরিব মানুষকে কম দামে ওএমএসসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে এসব খাদ্য সরবরাহ করা হবে। যাতে বাজার থেকে বেশি দামে কিনে খেতে না হয়। এ জন্য এ বছর খাদ্য খাতেও ভর্তুকির পরিমাণ বাড়বে। বিশ্ববাজারে এলএনজি গ্যাসের মূল্য বেড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে। ফলে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ও। কিন্তু সেভাবে বিদ্যুতের দাম এই মুহূর্তে সরকার না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতেও বড় ধরনের ভর্তুকি গুনতে হবে সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে গিয়ে।

সবচেয়ে বেশি মূল্য বেড়েছে জ্বালানি তেলে। নভেম্বরে জ্বালানি তেলের মূল্য এক দফা সমন্বয় করার পর নতুন করে আরও দাম বাড়ানো হচ্ছে না। কিন্তু বিশ্ববাজার থেকে বেশি মূল্যে কিনতে হচ্ছে জ্বালানি তেল। এ খাতেও ভর্তুকি দিয়ে নির্ধারিত মূল্যেই জ্বালানি তেল বিক্রি করবে সরকার। কারণ এ মুহূর্তে এটি করা না হলে মূল্যস্ফীতি আরও এক দফা বাড়বে।

অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ জন্য ভর্তুকি ব্যয় বাড়ানো হবে। আর সেটি করা না হলে মূল্যস্ফীতির হার আরও বেড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, দেশে বর্তমান মূল্যস্ফীতি ঘটছে আমদানিকৃত পণ্যের কারণে। বৈশ্বিক যে অনিশ্চয়তা ও বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশের ওপর। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে অর্থ বিভাগ। ধরে নেওয়া হচ্ছে নতুন কৌশল মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। যদিও বিশ্ববাজারের প্রভাবে দেশের মূল্যস্ফীতির হার বর্তমান ৬ দশমিক ২২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ধরা হলে সংশোধিত বাজেটে এ হার বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সেখানেও মূল্যস্ফীতির হার ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

আর এই মূল্যস্ফীতির কারণে বড় ধরনের সমস্যা পড়েছের নিম্ন আয়ের মানুষ। মানুষের নিত্যপণ্য ভোজ্যতেল ও পামতেল বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য বেড়েছে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সয়াবিন বেড়েছে ২০ শতাংশ। এর প্রভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে আরও বেশি বেড়েছে। এছাড়া গমের দাম ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। গমের একটি বড় অংশ আসছে ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের কারণে এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। এছাড়া প্রায় দ্বিগুণের মতো বেড়েছে জ্বালানি তেলের মূল্য। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক পণ্য বাজারে ‘৫০ বছরের সবচেয়ে বড় ধাক্কা’ আসছে। যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, তত বাড়বে মূল্যস্ফীতির ভোগান্তি। এই যুদ্ধের কারণে গ্যাস থেকে গম ও তুলা পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যে দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore