Monday 20 May, 2024

For Advertisement

গাঁজা সেবনকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডায় খুন হন জাহিদ

27 February, 2022 9:49:20

এলাকায় দুটি গ্রুপ। একটি সিনিয়র গ্রুপ, অপরটি জুনিয়র গ্রুপ। নিহত জাহিদ হাসান জুনিয়র গ্রুপের সদস্য। সিনিয়র গ্রুপের ইমরান আলীর সঙ্গে গাঁজা সেবনকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা হলে জুনিয়র গ্রুপের ৫/৬ জন সদস্য ইমরান আলীকে চর-থাপ্পড় মারে। এই খবর জানতে পেরে সিনিয়র গ্রুপের প্রধান ডামরু ও ডলারের নেতৃত্বে সিনিয়র গ্রুপের ১৫/১৬ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জুনিয়র গ্রুপের ৫/৬ জনের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এতে খুন হন জাহিদ। আহত হন আরও দুজন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই অবাঙালি (বিহারী)। ভিকটিম বাঙালি। তারা সবাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় পল্লবী কাঁচাবাজার পেঁয়াজ পট্টি এলাকায় নিহত জাহিদ হাসানের বাবা হানিফ খাঁন বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এই মামলায় প্রধান আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পৌনে ৮টা পর্যন্ত র‌্যাব-৪ রাজধানীর পল্লবী, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার করা আসামিরা হলেন, মো. ইফরান ওরফে ডামরু, ডলার হোসেন, রাজা হোসেন ও মো. কোরবান।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এসব তথ্য জানান।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিম জাহিদ হাসান পল্লবী বেনারশী পট্টি এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। তিনি মূলত পেশায় একজন বাসচালক। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে যানবাহন চলাচল সীমিত হওয়ায় পেশা পরিবর্তন করে মাছ ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানান, নিহত জাহিদ ও তারা একই এলাকার বাসিন্দা। এলাকাটি অবাঙালি (বিহারী) ক্যাম্পের (জল্লা ক্যাম্প, মুসলিম ক্যাম্প ও মিল্লাত ক্যাম্প) আওতাধীন। ওই এলাকায় মাদকের অপব্যবহারসহ গ্যাং কালচারের প্রবণতা রয়েছে। এই এলাকায় সিনিয়র গ্রুপ ও জুনিয়র গ্রুপ নামে দুটি গ্রুপ রয়েছে, যারা এলাকায় চুরি-ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা করে থাকে। গ্রুপ দুটি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষণিক দাঙা-হাঙামা করে থাকে।

কী ঘটেছিল সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, নিহত জাহিদ জুনিয়র গ্রুপের সদস্য এবং গ্রেপ্তারকৃতরা সিনিয়র গ্রুপের সদস্য। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় প্রথমে জুনিয়র গ্রুপ সিনিয়র গ্রুপের ইমরান আলীর সঙ্গে গাঁজা সেবনকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা হলে জুনিয়র গ্রুপের ৫/৬ জন সদস্য ইমরান আলীকে চর-থাপ্পর মারে। এমন সংবাদ জানতে পেরে সিনিয়র গ্রুপের প্রধান ডামরু ও ডলারের নেতৃত্বে রাত ১০টার দিকে সিনিয়র গ্রুপের ১৫/১৬ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র (ছুরি, সুইস গিয়ার, হকিস্টিক, এসএস পাইপ, লোহার রড) নিয়ে কাঁচাবাজার পেঁয়াজ পট্টি এলাকায় জুনিয়র গ্রুপের ৫/৬ জনের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সে সময় মামলার আসামি মিঠুন, কামরান, ডলার, রাজা ও কোরবানসহ আরও কয়েকজন হকিস্টিক, এসএস পাইপ এবং রড দিয়ে ভিকটিম জাহিদসহ অন্যান্যদের ওপর আক্রমণ করে। মিঠুন, ডলার ও কামরানের এলোপাতাড়ি আঘাতে ভিকটিম জাহিদ ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে ডামরু তার হাতে থাকা ধারালো সুইস গিয়ার (চাকু) দিয়ে ভিকটিমের পেটে ছুরিকাঘাত করলে তার নাড়িভুড়ি বের হয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। ঘটনাস্থলে ভিকটিম জাহিদ ছাড়াও জুনিয়র গ্রুপের সদস্য কামরান এবং হাসান গুরুতর আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ভিকটিম জাহিদসহ আহতদের নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে ভিকটিম জাহিদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক জাহিদকে মৃত ঘোষণা করেন।’

আসামিদের পরিচয় সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার প্রধান আসামি ডামরু পল্লবী জল্লাক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি জুতার কারখানায় কাজ করলেও এলাকায় সিনিয়র গ্রুপের নেতৃত্ব স্থানীয় সদস্য হিসেবে চুরি-ছিনতাই এবং মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত। তিনি নিজেও একজন নিয়মিত মাদকসেবী। গ্রেপ্তার ডলার পল্লবী জল্লাক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি স্থানীয় একটি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং পরে একটি ডিমের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। তিনি সিনিয়র গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য এবং বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন করে থাকেন।

গ্রেপ্তার রাজা হোসেন পল্লবী মুসলিম ক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে বিএ পাস করে একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করেন। তিনি সিনিয়র গ্রুপের একজন সক্রিয় সদস্য।

গ্রেপ্তার কোরবান পল্লবী জল্লাক্যাম্পে বসবাস করেন। তিনি মিষ্টির দোকানে কাজ করলেও এলাকায় সিনিয়র গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। এছাড়া চুরি-ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি নিজেও একজন নিয়মিত মাদকসেবী।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় বিস্ফোরক, মাদক, চুরি-ছিনতাই ও মারামারির একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

জুনিয়র গ্রুপের বিষয়েও অনুসন্ধান চলমান রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, সিনিয়র গ্রুপ নামের কারণ এই গ্রুপ আগে সৃষ্টি। জুনিয়র গ্রুপ পরে সৃষ্টি তাই জুনিয়র গ্রুপ নাম। জাহিদ জুনিয়র গ্রুপের সঙ্গে চললেও তার বিরুদ্ধে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নাই। জাহিদ যে এই গ্রুপের সঙ্গে চলে তার পরিবার সেটা জানতো না। এলাকাবাসীও জাহিদকে ভালো মানুষ হিসেবেই জানতো।

Latest

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore