নিজস্ব মহাকাশ স্টেশনে প্রথম নভোচারী পাঠাচ্ছে চীন
নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি মহাকাশ স্টেশনে প্রথম নভোচারী পাঠাচ্ছে চীন। সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। চলতি সপ্তাহেই চীনা মহাকাশ স্টেশন তিয়ানগংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে নভোচারীবাহী ফ্লাইট। মহাকাশ কর্মসূচিতে ক্রমশই উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটাই চীনের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মিশনটি গত পাঁচ বছরের মধ্যে চীনের প্রথম স্পেসফ্লাইট যা কোনো মানুষ বহন করছে। সেই সঙ্গে এটাকে দেশটির সরকারের জন্যও মর্যাদার ব্যাপার বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা আগামী ১ জুলাই প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর উদ্যাপন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সামনে করে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছে তারা। শেনজু-১২ নামের মহাকাশযানে করে তিন নভোচারীকে পাঠানো হবে মহাকাশ স্টেশনে। মহাকাশযানটি বয়ে নিয়ে যাবে লং মার্চ-২ এফ নামের একটি রকেট, যা ইতোমধ্যে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গোবি মরুভূমির জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টারে স্থাপন করা হয়েছে, যা মহাকাশের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবারই। মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছার পর প্রায় তিন মাস সেখানে অবস্থান করবেন নভোচারীরা। নিজেদের জন্য থাকার জায়গা তৈরি ও সেটা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করাই তাদের প্রধান কাজ।
শেনঝু-১২ মহাকাশযান বসানো লং মার্চ রকেটটি গত সপ্তাহে জিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চ সেন্টারের লঞ্চপ্যাডে স্থাপন করা হয়। আর কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরই মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা করবে এটা। চীনা মহাকাশ সংস্থা চায়নিজ স্পেস এজেন্সির তথ্য মতে, মহাকাশে পৌঁছার পর শেনজু-১২ মহাকাশ স্টেশন তিয়ানগংয়ের প্রধান সেকশন তিয়ানহের সঙ্গে নোঙর করবে। মাত্র দুই মাস আগেই (২৯ এপ্রিল) এটাকে মহাকাশের কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। যাতে করে নভোচারীদের জন্য আগেই জ্বালানি, খাদ্য ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। তিয়ানহেতে নভোচারীদের থাকার জন্য ঘরও রয়েছে। তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনটির নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০২২ সালের মধ্যেই স্টেশনটি কার্যকর হবে বলে মনে করছে চীন। সেই লক্ষ্যে আগামী দেড় বছরের মধ্যে আরও অন্তত ১১টি মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে। স্টেশনে সোলার প্যানেল সংযোগ ও দুটি ল্যাবরেটরি মডিউল স্থাপন করবে নভোচারীরা।
মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে চীন তার কার্যক্রম শুরু করেছে বেশ দেরিতে। মাত্র ২০০৩ সালে চীন প্রথম তার নভোচারীকে কক্ষপথে পাঠায়। চীন তখন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর মহাকাশ অভিযানের দৌড়ে তৃতীয় দেশ। কক্ষপথে প্রদক্ষিণকারী একমাত্র মহাকাশ স্টেশন আইএসএস (ইন্টারন্যাশানাল স্পেস স্টেশন) তৈরি হয়েছিল রাশিয়া, আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ এবং জাপানের সমন্বিত উদ্যোগে। চীনকে এই উদ্যোগে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। চীন এখন পর্যন্ত কক্ষপথে দুটি মহাকাশ স্টেশন পাঠিয়েছে, যা যথাক্রমে ২০১১ ও ২০১৬ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়। তিয়াংগং-১ ও তিয়াংগং-২ নামের ওই দুটি স্টেশন ছিল পরীক্ষামূলক। সেসব স্টেশনের মডিউলগুলোতে নভোচারীরা তুলনামূলক অল্প সময় থাকতে পারতেন। একাধিক মডিউলবিশিষ্ট ৬৬ টন ওজনের তিয়াংগং স্পেস স্টেশনটি আকারে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের এক-পঞ্চমাংশ। স্পেসটি অন্তত ১০ বছর সচল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। নতুন এই স্টেশনের মূল অংশই হচ্ছে তিয়ানহে মডিউল। আইএসএস-এর ২০২৪ সালে অবসর নেওয়ার কথা অর্থাৎ ওই বছরই এটির কার্যক্ষমতা ফুরিয়ে যাবে। তখন তিয়ানগং-ই হবে পৃথিবীর কক্ষপথে একমাত্র মহাকাশ স্টেশন।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: