Friday 26 April, 2024

For Advertisement

করোনাকাল তওবার গুরুত্বপূর্ণ সময়

27 July, 2021 9:35:54

মুসলিম হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি, অসীম শক্তির অধিকারী আল্লাহ মানুষকে সুপথে আসার জন্য এ মহামারি দ্বারা সতর্কবাণী দিয়েছেন।

তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের কারণে স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে; যাতে তিনি তাদের কোনো কোনো কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা রুম, আয়াত ৪১)

সুপথে ফিরে আসার জন্য শাস্তি। সবাইকে ধ্বংস করার জন্য তিনি এ আজাব দেননি। অথচ আক্রান্তের মধ্য থেকে শতকরা ৩-৪ ভাগের প্রাণঘাতী এ করোনার আক্রমণের ভয়েই পৃথিবী আজ প্রায় অচল।
করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সারাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এই ভাইরাস প্রতিরোধে ইতোমধ্যে দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হয়েছে।

আর বিশ্বে প্রতি সাড়ে ৬ মিনিটে একজনের মৃত্যু ঘটছে করোনায়। আমাদের দেশেও দিন দিন রোগী বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে জনজীবনে নেমে এসেছে আতঙ্ক।

ডাক্তারদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আপাতত জনসমাগম, গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে, ঘন ঘন হাত ধুতে। কারণ হাতের মাধ্যমেই এই রোগ বেশি ছড়াতে পারে।

আলেমরা বলছেন, করোনা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি আমাদের সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। গুনাহ ছেড়ে দিতে হবে। পাশাপাশি চিকিৎককের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতা অবলম্বনও করতে হবে।

এ ছাড়া ঘন ঘন ওজুর মাধ্যমেও আমরা সর্বদা পরিচ্ছন্ন থাকতে পারি। কারণ মহান আল্লাহ ওজু করার সময় এমন চারটি অঙ্গকে ধোয়া ফরজ করেছেন, যে চারটি অঙ্গের মাধ্যমে শরীরে দ্রুত ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, যখন তোমরা নামাজে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করো, মাথা মাসেহ করো এবং টাখনু পর্যন্ত পা (ধৌত করো)। (সুরা : মায়েদা, আয়াত: ৬)

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের পবিত্রতা অর্জনের জন্য চারটি অঙ্গ ধৌত করা ফরজ করেছেন। কনুই পর্যন্ত হাত, মুখ, পা ও মাথা মাসেহ করা। পাশাপাশি যে পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করবে, সেই পানিও হতে হবে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। যে পানির স্বাদ, গন্ধ এবং রং অবিকৃত থাকবে।

এ ছাড়া ওজুর শুরুতে কবজি পর্যন্ত দুই হাত ধোয়া, কুলি করা, দাঁত মিসওয়াক করা, কান ও নাকের বহির্ভাগ পরিষ্কার করাকে মহানবী (সা.) তার সুন্নাত হিসেবে অনুসরণ করতে বলেছেন।

বিজ্ঞানের আলোকে ওজুর অঙ্গগুলো ধোয়ার উপকারিতা-

★মুখমণ্ডল ধৌত করা-
মুখ ধোয়ার অভ্যাস সব ঋতুতেই শরীর ও মনের সতেজতা আনে। মুখমণ্ডল ও দুই হাত শরীরের সবচেয়ে বেশি আবরণমুক্ত অংশ। তাই এগুলোতে সহজেই ধুলাবালি ও ভাইরাস, রোগজীবাণু লাগতে পারে।

আর মানুষের ত্বকে বিশেষ করে লোমকূপের গোড়ায় এবং ঘর্মগ্রন্থির মুখে স্ট্যাপলিলোকাই, স্ট্রেপটোকক্কাই, কলিফর্ম ইত্যাদি ক্ষতিকর রোগজীবাণু থাকতে পারে।

এ ছাড়া চোখের ভ্রুযুগল, চোখের পাতা, গোঁফ, দাড়ি, যা সহজেই ময়লাযুক্ত হতে পারে তাও হাত-মুখ ধোয়ার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায়। মুখমণ্ডল অপরিষ্কার থাকলে রোগজীবাণু সহজেই মুখে প্রবেশ করতে পারে। মুখমণ্ডলের ঘাম, ময়লা ও জীবাণু ত্বকের সঙ্গে সেঁটে থাকতে সাহায্য করে। তাই আমরা ঘন ঘন অজুর মাধ্যমে আমাদের মুখমণ্ডলকে জীবাণুমুক্ত রাখতে পারি।

★দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া-

স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য শরীরের এই অংশটুকু প্রায়ই খোলা থাকে, যার ফলে এ অংশে ময়লা ও রোগজীবাণু লাগতে পারে। হাতের আঙুলের ডগার মাধ্যমে বিশেষ করে চুলকানোর পর আঙুল, নাক, কানসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এসব জীবাণু বিস্তার লাভ করে।

এ ছাড়া অপরিষ্কার হাত খাদ্য ও পানীয়কেও জীবাণুযুক্ত করতে পারে। তবে সুস্থ ত্বক এসব জীবাণুর জন্য এক স্বাভাবিক প্রতিরোধক। কিন্তু ত্বকে সামান্যতম ক্ষ’ত হলে তার মাধ্যমে এসব জীবাণু দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে পাঁচড়া, ফোড়া, কারবাংকন, সেলুলাইটিস, সেপটিকেনিয়া, পায়োমিয়া ইত্যাদি রোগ হতে পারে।

আর এখনকার সময় এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর আশঙ্কাও খুব বেশি। সুতরাং ওজু করার সময় প্রথমে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে পরে মুখমণ্ডল ধৌত করলে এসব রোগ থেকে সহজেই মুক্ত থাকা সম্ভব।

★মাথা মাসেহ করা-

ওজু করার সময় ভেজা হাতে মাথা মাসেহ করা ফরজ। রোগজীবাণুমুক্ত থাকতেও এ কাজটি দারুণ কার্যকর। কারণ আমাদের মাথা ও চুল সব সময় উন্মুক্ত থাকে। যার ফলে চুলের মধ্যে ময়লা ও রোগজীবাণু জমা হতে পারে।

সুতরাং ভেজা হাতে মাথা মাসেহ করার মাধ্যমে সেই ময়লাগুলো পরিষ্কার করা সম্ভব। মাথা মাসেহ করার পাশাপাশি ঘাড়েও ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করে নেওয়া রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। এর দ্বারা ওজুর একটি সুন্নত যেমন আদায় হয়ে যায়, পাশাপাশি ঘুম থেকে উঠে বা কর্মক্লান্ত হলে ভেজা হাতে ঘাড় মাসেহ করলে সতেজতা অনুভূত হয়।

টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধৌত করা: দুই পা সবচেয়ে বেশি খোলা থাকে, বিশেষ করে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে। এর ফলে এই অংশ খুব ময়লা ও জীবাণুযুক্ত হতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পা থাকলে জামাতে নামাজ পড়ার সময় ময়লা বা রোগজীবাণু ছড়াতে পারে না।

তাই ওজুর মাধ্যমে ভালোভাবে পা ধোয়ার মাধ্যমেও আমরা করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে পারি। কারণ কোনোভাবে যদি আমাদের পায়ে করোনার জীবাণু লেগে যায়, তা খুব সহজেই হাতে উঠে যেতে পারে। যেহেতু এখন মশার উপদ্রবও অনেক বেশি।

করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমরা অবশ্যই মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব। পাশাপাশি সতর্কতাও অবলম্বন করতে হবে।

আর তওবার মাধ্যমে আল্লাহপাক বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। আল্লাহপ্রেমিক বান্দারা ঘরে বসেই তার বান্দাদের কষ্ট দূর করার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।

যারা তার বান্দার কষ্টের সময় সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে আল্লাহপাক তাদেরকে তার বন্ধু বানিয়ে নেন।আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই করোনা মহামারি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

লেখক: এম এ কামিল হাদিস, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, কো.চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রোগী কল্যাণ সোসাইটি

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore