Friday 26 April, 2024

For Advertisement

করোনায় কুরবানি করায় মুসলিমদের করণীয়

14 July, 2021 7:49:18

প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে ঘনিয়ে আসছে কুরবানি। মহামারির এ সময়ে মানুষের কুরবানির ভাবনা কেমন হওয়া উচিত। এ নিয়ে সবার মাঝেই চলছে অনেক জল্পনা-কল্পনা।

করোনায় কুরবানি করায় মানুষের করণীয় কী?

কুরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ভালোবাসার অনন্য প্রতীক এ কুরবানি। এ কুরবানির মাধ্যমেই আল্লাহর নির্দেশ পালন ও ভালোবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ এ কুরবানি করা হয়ে থাকে। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর অন্যতম খুশির দিন। এ দিনকে ঈদুল আজহা বলা হয়।

বিশ্বনবির ভাবনা কুরবানি
এ দিন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈদুল আজহার দিনে পশু কুরবানির চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহ তাআলার কাছে নেই।’

কুরবানি করাকে ইসলামের অন্যতম নিদর্শন বলা হয়েছে। অন্য যেসব আমলগুলো ইসলামের নিদর্শন, সেসব আমলগুলোর মধ্যেও কুরবানি অন্যতম। ইসলামে কুরবানির গুরুত্ব অনেক বেশি।

মুসলিম উম্মাহর জন্য পশু কুরবানি করা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে কুরবানি করেছেন। তাঁর উম্মতকে কুরবানি করতে উৎসাহিত করেছেন।

করোনায় কুরবানি
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে ঘনিয়ে আসছে কুরবানি। এবারের কুরবানির রূপরেখা কেমন হবে? কিংবা মহামারির এ সময়ে মানুষের কুরবানির ভাবনা কেমন হওয়া উচিত। এ নিয়ে ইতিমধ্যে চলছে অনেক জল্পনা-কল্পনা। রয়েছে অনেক মানুষের জিজ্ঞাসা।

কুরবানি সম্পর্কে মানুষের জিজ্ঞাসাগুলো হলো-
কুরবানির পশুর হাট মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে । তাই সেক্ষেত্রে বিকল্প কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে?

এবার করোনায় কুরবানি না করে এ টাকা গরিব-অসহায়দের মাঝে দান করায় কুরবানির হক আদায় হবে কি?
অনেকেই প্রতি বছর স্বাভাবিকভাবেই কুরবানি করতেন, এবার অর্থ সংকটের কারণে কুরবানি করা সম্ভব হচ্ছে না, তাদের জন্য করণীয় কী হতে পারে?
দেশের বাইরে প্রবাসে এমন অনেক লোক আছেন যারা এবার পরিস্থিতির কারণে কুরবানি করতে পারছেন না, তারা এ দায় থেকে কীভাবে বেঁচে থাকবেন?
কুরবানির পশুর হাট বন্ধ থাকা প্রসঙ্গ
বর্তমানে কুরবানির পশুর হাট নিয়ে খুব জোরেশোরেই কথা চলছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেই স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কথা হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়ায়ও আলোচনা চলছে। অনেকে ব্যানার বানিয়ে এ দাবি তুলেছেন যে-
‘করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে শাহজাহানপুর রেলওয়ে আবাসিক কলোনীতে কুরবানির গরুর হাট বন্ধ কর করতে হবে’

কারণ করোনাভাইরাসের এ সময়ে কুরবানির পশুর হাট বসলে সেখানে মানুষের ব্যাপক সমাগম হবে, এতে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করতে পারে। এ দাবিতে অনেকেই কুরবানি সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ রাখার পক্ষে দাবি তুলছেন।

ইসলামিক স্কলারদের মতে, এ দাবি একেবারেই হাস্যকর এবং অযৌক্তিক। কারণ, প্রথমত এটি মুসলিমদের এমন একটি ইবাদত, যা বছরে একবার হয়ে থাকে। এর কুরবানির সঙ্গে প্রায় সব মুসলিমদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

যারা কুরবানি দিতে পারেন তাদের যেমন সম্পৃক্ততা রয়েছে তেমনি যারা কুরবানি দিতে পারে না এমন সব অভাবি মানুষের সম্পর্কও রয়েছে এ কুরবানির সঙ্গে। তারা সারা বছর গরু/খাশির গোস্ত কিনে খেতে পারেন না। কুরবানির সময়ই তারা চাহিদা মিটিয়ে গোশ্ত খেতে পারেন। আর এতে ধনী-গরিবের মিলন হয় বৈষম্য দূর হয়। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও আন্তরিকতা তৈরি হয়।

কুরবানি উপলক্ষ্যে পশুতে বিনিয়োগ
এমন অনেক ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা যারা কোটি কোটি টাকা কুরবানি উপলক্ষ্যে পশুতে বিনিয়োগ করেছেন। তাদের বিষয়টিও ভেবে দেখতে হবে। কেননা কুরবানির একটি মৌসুমের ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে তারা বছরব্যাপী জীবিকা অর্জন করে থাকে।

সুতরাং কুরবানি হচ্ছে- ইবাদত, গরিব-দুঃখীর অধিকার, ব্যবসায়ীর জীবন-জীবিকায় বিনিয়োগ। তাই এসব বিবেচনায় কুরবানি বন্ধ নয়, কুরবানির পশুর হাটও বন্ধ নয় বরং যথাযথ স্বাস্থ্য নিরাপত্তার মাধ্যমে এটি অব্যাহত রাখাই জরুরি।

বাজার না বসিয়ে অনলাইনে পশু কেনাবেচা
অনেকে এ দাবি তুলছেন যে, বিশাল গরুর হাট না বসিয়ে অনলাইনে পশু কেনাবেচা করা যেতে পারে। সম্প্রতি সময়ে আমাদের দেশের বাস্তবতায় এটি সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে এ দাবিটিও সম্পূর্ণ রূপে উড়িয়ে দেয়া না গেলেও এটি এখনও শহর থেকে শহরতলী ও গ্রাম-পল্লীতে সেভাবে বিকশিত হয়নি। গ্রামের মানুষ অনলাইনে কেনাবেচার বিষয় ও পদ্ধতি সেভাবে এখনও বুঝে উঠতে পারেনি। এ পদ্ধতিতে কেনাবেচা অনেকটাই কঠিন হয়ে যাবে।

এক্ষেত্রে করণীয় ও ইসলামিক স্কলারদের প্রস্তাবনা হলো-
বড় বড় শহরগুলোতে পশুর কোনো হাট না বসিয়ে অনলাইনে পশু কেনাবেচা করলে বড় বড় শহরের এসব ব্যস্ত জনপদ অনেকটাই নিরাপদ থাকবে।

আর গ্রামাঞ্চলে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে পশুর হাট বসবে। তবে সেখানে অবশ্যই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে কারো স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে না হয়। আর তাতে আশা করা যায়, মানুষ নিরাপদ থাকবে।

কুরবানি না করে দান করা
যদি কেউ কুরবানি না করে সে অর্থ (টাকা-পয়সা) দান করে দেয় তাতে পশু কুরবানির দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পাওয়া যাবে কি না। আর তাতে আমাদের করণীয় কী?
ইসলামি শরিয়া ও স্কলারদের মতে, এ বিষয়টিতে সুস্পষ্ট ও সরল উত্তর হলো- কুরবানি না করে এ টাকা দান করে দেয়া হলে কুরবানির আমল বা ইবাদত থেকে দায়মুক্তি হবে না। তাতে কুরবানির হক আদায় হবে না।

অন্য একটি জিজ্ঞাসা
বিগত বছর কুরবানি দেয়া ব্যক্তি অর্থকষ্টের কারণে এবার কুরবানি দিতে পারছে না, এতে তার করণীয় কী?
তাদের জন্য সহজ উত্তর : অন্য বছরগুলোতে কুরবানি দিয়েছেন। কিন্তু এবার অর্থকষ্ট বা অভাবের কারণে কুরবানি দিতে পারছে না, তারা এ বছর কুরবানি দেবেন না। ইসলামি শরিয়াহ কারো সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো আমল বা চাপিয়ে দেয় না। ওই আমল করতে বাধ্য করে না।

কুরবানিকে সামাজিক ইস্যু মনে করা
এমন অনেক লোক আছেন যারা স্বাভাবিকভাবে কুরবানি দেয়ার ক্ষমতা রাখে না। কিন্ত সামাজিক লোক-লজ্জার ভয়ে চরম চাপ নিয়ে কুরবানি করে থাকেন। আসলে সামাজিক লোক-লজ্জার ভয় বা ইজ্জত-সম্মানের কারণে কুরবানি দিতে হয়, এমনটি সঠিক নয়, বরং এটি মানুষের ভুল ধারণা। সুতরাং অর্থকষ্ট থাকলে এবং সামর্থ্য না থাকলে কুরবানি না করায় কোনো সমস্যা নেই।

এদের জন্য সুসংবাদ
তবে যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকাকালীন সময় কুরবানি পালন করে ইবাদত করেছেন, এখন সামর্থ্য না থাকার কারণে যদি কুরবানি করতে না পারেন, তাতেও আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে কুরবানির সাওয়াব দিয়ে দেবেন। এটি নিয়ে সাময়িক সামর্থ্যহীন ব্যক্তিদের মন খারাপ করার কোনো কারণ নেই।

প্রবাসে অবস্থানকারীদের কুরবানি
বিদেশে এমন অনেক মুমিন মুসলমান রয়েছেন, যারা এমন জায়গায় আছেন যেখানে হয়তো কোনো বিধি-নিষেধ, আইনি জটিলতা বা করোনার সংক্রান্ত কোনো কারণে কুরবানি দিতে পারছেন না। তাদের করণীয় কী?

তাদের করণীয় হলো-
যেখানে অবস্থান করছেন, যদি সেখানে কুরবানি করতে না পারেন তবে নিজ নিজ দেশে কিংবা পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে কুরবানি করার সুযোগ রয়েছে এবং আপনার লোকজন রয়েছে তাদের মাধ্যমে দায়িত্ব দিয়ে কুরবানি আদায় করা। কুরবানির জন্য নির্ধারিত পাঠিয়ে দিলে তার পক্ষ থেকে যে কেউই কুরবানি দিতে পারবেন। কুরবানির গোশ্তগুলো নির্দেশিত ব্যক্তিদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েও কুরবানি আদায় করা যাবে। এভাবে তারা কুরবানির ইবাদত ও আমল থেকে মুক্ত হতে পারবেন।

আবার যারা দেশে অবস্থান করছেন কিন্ত নিজে নিরাপত্তাজনিত কারণে নিজে কুরবানির ব্যবস্থা করতে পারছেন না, তিনিও অন্য কারো মাধ্যমে দেশের অন্য কোথাও দায়িত্ব দিয়েও কুরবানির ব্যবস্থা করতে পারবেন। তারপরও কুরবানির এ গুরুত্বপূর্ণ আমল ও ইবাদতটি যথাযথ মর্যাদায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভে করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনাকালীন এ সময়ে যথাযথভাবে কুরবানি করে তার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের তাওফিক দান করুন। করোনাকালীন সময়ে যথাযথ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনার প্রতি লক্ষ্য রাখার তাওফিক দান করুন। করোনার অজুহাত দিয়ে কুরবানি না করে দান খয়রাত করে কুরবানি হক আদায় হয়েগেছে মনে করা থেকেও বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore